প্রথম তিন দিন দুই ট্রিপ করে ফেরি চলাচল করেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এক ট্রিপ করে ফেরি চলাচল করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে গত সোমবার বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া নৌপথে আনুষ্ঠানিক ফেরি চলাচল শুরুর পর থেকেই পারাপারের জন্য গাড়ির ব্যাপক চাপ দেখা গেছে। গত দুই দিনে বিআইডব্লিউটিএর পার্কিং ইয়ার্ড ও ফেরির টোল আদায় হয়েছে পৌনে চার লাখ টাকার।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেরি চলাচলের জন্য বিআইডব্লিউটিএ ২৪ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত একটি সময়সূচি প্রণয়ন করেছে। সূচি অনুযায়ী ২৪ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত দুই ট্রিপ দিয়েছে ফেরিটি। আজ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক ট্রিপ করে দেওয়ার কথা।

গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরি চলাচলের দ্বিতীয় ট্রিপ সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার পরও ৩০টির মতো গাড়ি সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয় উপকূলে রয়ে যায়। দূর থেকে আসা পণ্যবাহী কিছু গাড়ি বিআইডব্লিউটিএর ইয়ার্ডে পার্কিং করা হয়েছে। একইভাবে সন্দ্বীপেও অনেক গাড়ি রয়ে গেছে।

বাঁশবাড়িয়া উপকূলে কথা হয় অপেক্ষমাণ ট্রাকের চালক হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ট্রাকে পচনশীল মালামাল রয়েছে। দিনে দিনে পার হতে না পারলে পণ্যগুলো পচে যাবে। তিনি অনুরোধ করেও তাঁর গাড়ি ফেরিতে তুলতে পারেননি।

এদিকে ঈদ সামনে রেখে পণ্যবাহী গাড়ি কয়েক দিনের জন্য বন্ধ করে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন শামসুল আলম নামের এক যাত্রী। তিনি ফেরি চলাচলে আরও ট্রিপ বাড়ানো দরকার বলেও জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো.

কামরুজ্জামান বলেন, সন্দ্বীপ চ্যানেলের মতো উপকূলীয় এলাকায় ফেরি চালানোর পূর্বাভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। সন্দ্বীপের মানুষের চাহিদা কেমন হবে, তা–ও জানা ছিল না। জোয়ার–ভাটার সঙ্গে মিলিয়ে ফেরি চলাচল সময়সূচি প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি হয়েছিল। ওই কমিটির সুপারিশে তাঁরা ২৪ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত একটি সূচি প্রণয়ন করেন। আপাতত সেই সূচি অনুযায়ী ফেরি চলাচল করবে। এখন ঘাটে প্রচুর যানবাহন আসছে। যতটুকু সম্ভব পারাপার করছে ফেরি কপোতাক্ষ। বাকি গাড়িগুলো পার্কিং ইয়ার্ডে থাকছে।

বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, তাঁরা বিআইডব্লিউটিএর সময়সূচি অনুযায়ী এখন ফেরি চালাচ্ছেন। ওই সময়সূচি অনুযায়ী আজ থেকে এক ট্রিপ করে ফেরি চলাচল করবে। চাহিদা অতিরিক্ত হলে তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দুই ট্রিপ দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা হবে।

দুই দিনে টোল পৌনে চার লাখ টাকা

২৪ মার্চ ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন হলেও গতকাল বুধবার থেকে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে ফেরিটি চলাচল করেছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। গত দুই দিনে বিআইডব্লিউটিএর পার্কিং ইয়ার্ড ও ফেরির টোল আদায় হয়েছে পৌনে চার লাখ টাকা। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, উদ্বোধনের পরদিন পার্কিং ইয়ার্ডসহ গত মঙ্গলবার ৪ হাজার ৭৫ টাকা এবং গতকাল বুধবার ৪ হাজার ৯৩০ টাকার টোল আদায় করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, উদ্বোধনের পরদিন ফেরিতে যাতায়াতে যাত্রী ও যানবাহন ভাড়া মিলিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও গতকাল ২ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। হিসাব করে দেখা গেছে, সংস্থা দুটি মোট আদায় করেছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭৫ টাকা।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ফেরি উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনও উভয় পাশে টোলবিহীন সরকারি কিছু যানবাহন চলাচল করেছে। গতকাল থেকে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে ফেরি চলাচল করেছে। ফলে উদ্বোধনের পরদিন টোল কিছুটা কম আদায় হয়েছে। গতকাল থেকে সব গাড়ি টোলের আওতায় আসছে। ফলে পরবর্তী দিনগুলোতে টোল আদায়ের হার আরও বাড়বে।

মো. কামরুজ্জামান আরও বলেন, বাঁশবাড়িয়া ঘাটটি সরাসরি বিআইডব্লিউটিএ পরিচালনা করে। সবেমাত্র ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন হলো। টোল আদায়ের জন্য তারা একটি টোলঘর নির্মাণ করলেও সম্পূর্ণরূপে গুছিয়ে উঠতে পারেননি। বিআইডব্লিউটিসির কোনো অফিস কক্ষ সেখানে নেই। ফলে পুরোপুরি সুফল পেতে আরও কিছু সময় লাগবে।

আগামীকাল থেকে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করবে দুই ট্রিপ করে

সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি আইভি রহমান যাতায়াত করছে। এত দিন এক ট্রিপ দিলেও ঈদ উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার থেকে দুই ট্রিপ করে করবে জাহাজ এমভি আইভি রহমান। জাহাজটি যাত্রী নিয়ে সকাল ৮টা ও দুপুর ১২টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া উপকূল থেকে এবং সকাল ১০টা ও বেলা ৩টায় সীতাকুণ্ডের কুমিরা উপকূল থেকে ছেড়ে যাবে। জাহাজটি ঈদের পরবর্তী তিন দিন এই সময়সূচি অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র মজুমদার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ট র প ট র প কর অন য য র জন য উপক ল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভোলা লঞ্চঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়ে বৈধ নৌযান–সংকট, ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি

ভোলায় চাহিদার তুলনায় বৈধ নৌযানের সংখ্যা কম হওয়ায় ঈদ উদ্‌যাপন শেষে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ইলিশা লঞ্চঘাটের যাত্রীরা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে কিংবা অবৈধ নৌযানে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ঈদের সময় এমন ভোগান্তি হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

আজ শুক্রবার ভোর থেকে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইলিশা লঞ্চঘাটে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করে। আজ ভোর থেকে যাত্রীদের চাপ আগের তুলনায় আরও বেশি। তাঁদের অভিযোগ, গত ২৫ বছর ধরে এই নৌপথে ঈদ এলেই যাত্রীদের এমন ভোগান্তি দেখা যায়। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

আরও পড়ুনরাজধানীমুখী মানুষের ভিড়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট১ ঘণ্টা আগে

আজ সকালে ইলিশা লঞ্চঘাট–সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা, রাস্তাঘাট, নদী তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। লঞ্চ-সিট্রাকগুলো ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে এসব যানে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। দুই-তিন গুণ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌযানগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। যাত্রী চাপের কারণে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করছেন। অনেকেই সময় বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠে পড়েন অবৈধ স্পিডবোট ও স্টিল বডির ট্রলারে। অরক্ষিত এসব নৌযানে করে তাঁরা পাড়ি দিচ্ছেন উত্তাল মেঘনা।

ভোলায় কর্মরত বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) জসিম উদ্দিন জানান, ঈদ উপলক্ষে বাড়তি নৌযানের অনুমোদন আছে কি না, জানা নেই। এ নৌপথে চারটি সিট্রাক ছাড়াও ‘আবদুস সালাম’ নামের আরেকটি নৌযান চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি ডক-ইয়ার্ডে থেমে আছে।

অনেক যাত্রীই ঝুঁকি এড়াতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ঘাটে লঞ্চ কিংবা ফেরির অপেক্ষা করছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে যানবাহনের চাপ
  • দ্বিতীয় ট্রিপেই মেঘনায় ডুবল বালুবাহী বাল্কহেড
  • নৌযানের অভাবে নদী তীরে ঢাকামুখী যাত্রীদের অপেক্ষা
  • ভোলা লঞ্চঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়ে বৈধ নৌযান–সংকট, ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি