ফেরি উদ্বোধনের দুদিনে পৌনে চার লাখ টাকা টোল আদায়
Published: 27th, March 2025 GMT
প্রথম তিন দিন দুই ট্রিপ করে ফেরি চলাচল করেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এক ট্রিপ করে ফেরি চলাচল করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে গত সোমবার বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া নৌপথে আনুষ্ঠানিক ফেরি চলাচল শুরুর পর থেকেই পারাপারের জন্য গাড়ির ব্যাপক চাপ দেখা গেছে। গত দুই দিনে বিআইডব্লিউটিএর পার্কিং ইয়ার্ড ও ফেরির টোল আদায় হয়েছে পৌনে চার লাখ টাকার।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেরি চলাচলের জন্য বিআইডব্লিউটিএ ২৪ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত একটি সময়সূচি প্রণয়ন করেছে। সূচি অনুযায়ী ২৪ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত দুই ট্রিপ দিয়েছে ফেরিটি। আজ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক ট্রিপ করে দেওয়ার কথা।
গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরি চলাচলের দ্বিতীয় ট্রিপ সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার পরও ৩০টির মতো গাড়ি সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয় উপকূলে রয়ে যায়। দূর থেকে আসা পণ্যবাহী কিছু গাড়ি বিআইডব্লিউটিএর ইয়ার্ডে পার্কিং করা হয়েছে। একইভাবে সন্দ্বীপেও অনেক গাড়ি রয়ে গেছে।
বাঁশবাড়িয়া উপকূলে কথা হয় অপেক্ষমাণ ট্রাকের চালক হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ট্রাকে পচনশীল মালামাল রয়েছে। দিনে দিনে পার হতে না পারলে পণ্যগুলো পচে যাবে। তিনি অনুরোধ করেও তাঁর গাড়ি ফেরিতে তুলতে পারেননি।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে পণ্যবাহী গাড়ি কয়েক দিনের জন্য বন্ধ করে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন শামসুল আলম নামের এক যাত্রী। তিনি ফেরি চলাচলে আরও ট্রিপ বাড়ানো দরকার বলেও জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো.
বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, তাঁরা বিআইডব্লিউটিএর সময়সূচি অনুযায়ী এখন ফেরি চালাচ্ছেন। ওই সময়সূচি অনুযায়ী আজ থেকে এক ট্রিপ করে ফেরি চলাচল করবে। চাহিদা অতিরিক্ত হলে তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দুই ট্রিপ দেওয়া যায় কি না, তা ভাবা হবে।
দুই দিনে টোল পৌনে চার লাখ টাকা২৪ মার্চ ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন হলেও গতকাল বুধবার থেকে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে ফেরিটি চলাচল করেছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। গত দুই দিনে বিআইডব্লিউটিএর পার্কিং ইয়ার্ড ও ফেরির টোল আদায় হয়েছে পৌনে চার লাখ টাকা। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, উদ্বোধনের পরদিন পার্কিং ইয়ার্ডসহ গত মঙ্গলবার ৪ হাজার ৭৫ টাকা এবং গতকাল বুধবার ৪ হাজার ৯৩০ টাকার টোল আদায় করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, উদ্বোধনের পরদিন ফেরিতে যাতায়াতে যাত্রী ও যানবাহন ভাড়া মিলিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও গতকাল ২ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। হিসাব করে দেখা গেছে, সংস্থা দুটি মোট আদায় করেছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭৫ টাকা।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ফেরি উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনও উভয় পাশে টোলবিহীন সরকারি কিছু যানবাহন চলাচল করেছে। গতকাল থেকে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে ফেরি চলাচল করেছে। ফলে উদ্বোধনের পরদিন টোল কিছুটা কম আদায় হয়েছে। গতকাল থেকে সব গাড়ি টোলের আওতায় আসছে। ফলে পরবর্তী দিনগুলোতে টোল আদায়ের হার আরও বাড়বে।
মো. কামরুজ্জামান আরও বলেন, বাঁশবাড়িয়া ঘাটটি সরাসরি বিআইডব্লিউটিএ পরিচালনা করে। সবেমাত্র ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন হলো। টোল আদায়ের জন্য তারা একটি টোলঘর নির্মাণ করলেও সম্পূর্ণরূপে গুছিয়ে উঠতে পারেননি। বিআইডব্লিউটিসির কোনো অফিস কক্ষ সেখানে নেই। ফলে পুরোপুরি সুফল পেতে আরও কিছু সময় লাগবে।
আগামীকাল থেকে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করবে দুই ট্রিপ করেসীতাকুণ্ডের কুমিরা ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি আইভি রহমান যাতায়াত করছে। এত দিন এক ট্রিপ দিলেও ঈদ উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার থেকে দুই ট্রিপ করে করবে জাহাজ এমভি আইভি রহমান। জাহাজটি যাত্রী নিয়ে সকাল ৮টা ও দুপুর ১২টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া উপকূল থেকে এবং সকাল ১০টা ও বেলা ৩টায় সীতাকুণ্ডের কুমিরা উপকূল থেকে ছেড়ে যাবে। জাহাজটি ঈদের পরবর্তী তিন দিন এই সময়সূচি অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র মজুমদার।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ট র প ট র প কর অন য য র জন য উপক ল গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ