প্রথম চলচ্চিত্রেই দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার
Published: 28th, March 2025 GMT
বাঙালি বা বাংলাদেশের সমাজে গর্ভধারণ করা নারীকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানানোর ঘটনা সচরাচর চোখে পড়ে না। ‘ভয়েড অ্যান্ড ব্লিডিং’ চলচ্চিত্রটির প্রথম সংলাপ, ‘কনগ্রাচুলেশন ফর ইয়োর প্রেগন্যান্সি’। যেন অন্য কোনো সমাজের ছবি।
ভয়েড অ্যান্ড ব্লিডিং—১৬ মিনিটের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এর পরিচালক ফাহমিদা জামান সুইডেনের স্টকহোম সিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা নারী চলচ্চিত্র নির্মাতার সম্মান পেয়েছেন। রাশিয়ার মস্কো ইনডাই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শব্দে সেরা পুরস্কার পেয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও ভারতের কেরালা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে। এটি ফ্লোরার প্রথম চলচ্চিত্র।
কাহিনিটি পরিচিত গণ্ডির বাইরের। বলা যায় গণ্ডি পেরিয়ে। নারী সে উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে স্তরেরই হোক অবহেলা তার পায়ে-পায়ে। রাজধানীর গুলশানে স্বামীকে নিয়ে চাকচিক্যের মধ্যে থাকলেও শ্রেয়ার জীবন বাংলাদেশের যেকোনো শ্রেণির নারীর মতোই। গর্ভধারণ শ্রেয়ার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। স্বামীর সময় অল্প, ব্যস্ততা বেশি। মন খারাপ, শরীর খারাপ বা অন্য কোনো কারণে ফোন করলেই ওপার থেকে আওয়াজ আসে, সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ম্লানমুখে, শূন্যতার মধ্যে দিন কাটে।
জটিলতা আরও প্রকট হয়ে চোখে পড়ে শ্রেয়ার এক গোপন সম্পর্কের দৃশ্য। সামিরা নামের এক নারীর সঙ্গে বিয়ের আগেই তার সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও সে সম্পর্ক পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। ইউরোপ-আমেরিকায় এই সম্পর্কের দৃশ্য দর্শকে উদ্বিগ্ন করে না। সাধারণ বাঙালি সমাজও অন্য পুরুষের সঙ্গে শ্রেয়ার সম্পর্ক জেনে কপালে চোখ তোলা হয়তো বন্ধ করেছে। তবে উচ্চবিত্ত বাঙালি সমাজে পরিচালকের দেখানো সম্পর্ক কতটা স্বাভাবিক হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে হয়তো।
গর্ভবতী শ্রেয়ার জার্নিটা বেশ জটিল। অবসরে কাছে থাকে পোষা বিড়াল। বড় আদরের বিড়ালটিও একসময় চোখের আড়াল হয়। বিড়ালটির ছবি দেখা যায় ম্যাগাজিনে। ক্যাট লাইফ—এমন দৃশ্য দেখিয়ে শেষ হয় চলচ্চিত্র। কথা বা সংলাপ খুবই কম।
স্বল্পদৈর্ঘ্য এই চলচ্চিত্র দেশের কোথাও এখনো দেখানো হয়নি। এপ্রিল বা মে মাসের কোনো এক সময় কিছুটা জাঁকজমক করে প্রথম প্রদর্শনী করার ইচ্ছা আছে পরিচালকের।
ফাহমিদা জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার গর্ভধারণের ছয় মাসের সময় শুটিং হয়। কাহিনি আমার। আমি নিজে যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তার কিছুটা প্রতিফলন আছে এতে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে
আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার।
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান।
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’