শস্যবৈচিত্র্যের দিকে মনোনিবেশ করেছি
Published: 28th, March 2025 GMT
দেশে ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যা বাড়ছে, কৃষিজমি কমছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ফসলহানির বিষয়টি প্রায় নিয়মিত। উপরন্তু কৃষিপণ্যের বিরাট অংশ পচে যায় ও নষ্ট হয়। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব তো রয়েছেই। এতে অনেক ফসল আমদানিনির্ভর হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে কৃষি খাতে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.
চাল উৎপাদন বাড়াতে কৃষিতে যান্ত্রিকভাবে চারা রোপণ ও ফসল সংগ্রহ নিশ্চিত করা এবং উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কৃষি সচিব। তাঁর মতে, গম আমদানি রাতারাতি কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। দেশে উৎপাদন বাড়াতে আবহাওয়ার বিষয় রয়েছে। উচ্চফলনশীল জাত ছড়িয়ে দেওয়া ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে গমের উৎপাদন এখনকার চেয়ে অনেক বাড়ানো সম্ভব হবে।
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন বছরে ৩৪ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। অবশ্য ৩০ শতাংশ আমরা সংরক্ষণ করতে পারি না। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো ও সংরক্ষণ করা গেলে ৩১ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। আমরা পেঁয়াজ সংরক্ষণে আরও কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করব।’
তিনি বলেন, তাজা টমেটো ও প্রক্রিয়াজাত টমেটো আমদানিতে বাংলাদেশকে বছরে ব্যয় করতে হয় প্রায় আড়াই কোটি ডলার। অথচ মৌসুমের সময় বাংলাদেশে টমেটো পচে যায়। হিমাগার প্রতিষ্ঠা করে টমেটো সংরক্ষণ করে আমদানি কমিয়ে আনা সম্ভব। সবজির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ইতোমধ্যে সবজির হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, ভোজ্যতেলের সংকট সমাধানে দেশে শস্য বিন্যাস পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ প্রাথমিকভাবে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে। এতে করে বিভিন্ন সময় হওয়া সংকটেরও সমাধান মিলবে। আমন ও বোরোর আবাদের মধ্যে যে ব্যবধান থাকে, তা বাড়িয়ে সরিষার আবাদ দ্বিগুণ করা হবে।
কৃষি সচিব বলেন, খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় শস্যবৈচিত্র্যকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষি খাতের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দানা জাতীয় এবং শাকসবজি, ফলমূল জাতীয় ফসলের পাশাপাশি মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর কাজ চলছে। মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে বস্তায় আদা চাষ ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একইভাবে জিরাসহ নানা রকম মসলার চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি ফসল চাষে বেশি লাভ হলে সবাই সেই ফসলের চাষ শুরু করেন। ফলে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বাজারমূল্য কমে যায়। তখন সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ওই ফসল চাষ থেকে বিরত থাকেন। সুষম ফসল চাষের একটি পরিকল্পনা করছি। আমরা আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি সম্ভাবনা অন্বেষণের পাশাপাশি শস্যবৈচিত্র্যের দিকে মনোনিবেশ করেছি।’
বাংলাদেশে সামগ্রিক অর্থনীতির মতো কৃষিতেও রূপান্তর ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অল্প জায়গা নিয়ে উৎপাদন বাড়াতে চাই। আমদানিনির্ভরতা কমাতে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি তা বাস্তবায়ন হলে অনেক ফসলে মাথাপিছু ভোগের হিসাবেও রেকর্ড গড়া যাবে। সে চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দানাদার খাদ্যশস্য ছাড়াও অন্যান্য শস্যের উৎপাদন বাড়িয়ে শস্যের বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। বোরো ও আমন মৌসুমে আরও উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার বাড়িয়ে সময়টা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এতে কয়েক লাখ হেক্টর জমি বেরিয়ে আসবে। তখন এসব জমিতে তেল ও ডালজাতীয় শস্য আবাদ করা সম্ভব হবে। শস্য উৎপাদন বাড়াতে গবেষণায় জোর দেওয়া, কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থায় দুর্বলতা কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে আছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
নেতানিয়াহু অঞ্চলজুড়ে আগুন লাগাতে চাইছেন: ইরানের প্রেসিডেন্টকে এরদোয়ান
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগাতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু ইরানে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপে এরদোয়ান এ কথাগুলো বলেছেন।
এরদোয়ানের দপ্তরের দেওয়া এক বিবৃতি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় হওয়া জাতিগত হত্যার ঘটনা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরাতে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইরানি প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সৌদি আরব, পাকিস্তান, জর্ডান ও মিসরের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন এরদোয়ান। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি।
শনিবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলই এখন এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তুরস্ক সরকারের যোগাযোগবিষয়ক দপ্তরের বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, এরদোয়ান মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। সিসিকে এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের হামলা গভীরভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করেছে। আইনের তোয়াক্কা না করার যে মনোভাব নেতানিয়াহুর মধ্যে দেখা গেছে তা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির।
এরদোয়ান আরও সতর্ক করেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।