বহু বছর পর একটা মুক্ত পরিবেশে এবং ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঈদ উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর একদিকে স্বৈরাচারমুক্ত নির্বিঘ্ন পরিবেশ, অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আবহে রাজনীতিতে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাব। সংস্কার বিতর্কে নির্বাচনের সময় নিয়ে শঙ্কাও আছে। এমন নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতা–কর্মীরা ঈদে এলাকায় যাচ্ছেন।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, এবারের ঈদটি তাঁদের কাছে নানা দিক থেকে একটু ভিন্ন রকমের। এর মধ্যে আছে স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে ঈদ উদ্‌যাপনের আনন্দ। আবার ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনসংযোগের কাজও চলবে। যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির সামনে নতুন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর আভাস মিলছে। এর একদিকে ক্ষমতাপ্রত্যাশী হয়ে ওঠা জামায়াতে ইসলামী, অন্যদিকে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজনীতির মাঠের এমন সব হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় নিয়েই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের বেশির ভাগ এবার ঈদে যাঁর যাঁর এলাকায় যাচ্ছেন।

তবে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ ঈদের দিন ঢাকায় থাকছেন। এর মধ্যে অনেকে ঈদের পর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় ঈদ করবেন। তিনি ঈদের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তাঁর সঙ্গে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য থাকতে পারেন। ঈদের দিন সকালে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

এবারের ঈদ সত্যিকারের উৎসবমুখর এবং নির্ভয়ে উদ্‌যাপন হবে। সব ঈদই ঈদ, তবে এবার মুক্ত পরিবেশে একটু আলাদা হবে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ঢাকা

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, সেলিমা রহমান ও মেজর (অব.

) হাফিজউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় (চিকিৎসা নিতে বর্তমানে ব্যাংককে আছেন) ঈদ করবেন। তাঁরা ঈদের নামাজ শেষে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে আমাদের ঈদ এবার ভালো যাবে। তবে সম্পূর্ণ স্বস্তিদায়ক হবে না। কারণ, দেশ তো স্থিতিশীল নয়। সবকিছুই তো দেশকে নিয়ে। আমাদের সদাশয় সরকার তো পরিষ্কার করে কিছু বলছে না। তারপরও ঈদটা ভালো কাটার চেষ্টা থাকবে। দেশবাসী আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম ও সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজারের পেকুয়ায় ঈদ করবেন। আমীর খসরু কাট্টলী চৌধুরীবাড়ির পারিবারিক মসজিদে ঈদের নামাজ পড়বেন। তিনি কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামে আছেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের ঈদ সত্যিকারের উৎসবমুখর এবং নির্ভয়ে উদ্‌যাপন হবে। সব ঈদই ঈদ, তবে এবার মুক্ত পরিবেশে একটু আলাদা হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ আজ রোববার কক্সবাজার এলাকায় যাবেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের ঈদটা সত্যি জাতীয় জীবনে মুক্ত-স্বাধীন পরিবেশে মানুষ উদ্‌যাপন করবে, আমরাও উদ্‌যাপন করব। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এটা নতুন অভিজ্ঞতা। নির্বাচনী পরিমণ্ডলে যে নতুন রাজনৈতিক চর্চা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে, সেটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিতে চাই। রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, প্রতিযোগিতা হবে, কিন্তু আমরা একে অপরের প্রতিপক্ষ হব না। দেশ একটা নির্বাচনী আবহের মধ্যে আছে। রোডম্যাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটাতে পারব।’

মা–ছেলের ভিন্ন রকম ঈদ

দীর্ঘদিন পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লন্ডনে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন। বিগত বছরগুলোতে খালেদা জিয়া হয় গুলশানের ভাড়া বাসায়, না হয় কারাগারে অথবা হাসপাতালে ঈদ করেছেন। আর তারেক রহমান স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে বিদেশে ঈদ করেছেন ঢাকায় মাকে নিঃসঙ্গ রেখে। বহু বছর পর এবারের ঈদটি মা-ছেলের জন্য ভিন্ন রকমের হবে। সেখানে আগে থেকেই আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। ঈদে লন্ডন যাচ্ছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান। ঈদের দিন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

রমজানজুড়ে বিএনপির নানা কার্যক্রম

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনী রাজনীতি জটিল জায়গায় যেতে পারে, সে রকম চিন্তা থেকে বিএনপি রমজানে সারা দেশে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে জনসম্পৃক্তি বাড়ানোর কর্মসূচি নিয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, এবার একেবারে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ইফতার মাহফিল করেছে বিএনপি।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাউদ্দিন আলাল গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতীতে জেলা ও থানা পর্যায়ে ইফতার মাহফিল হতো। এ ধরনের অনুষ্ঠানে কেবল নেতাদের সমাবেশ হতো, সাধারণ মানুষ থাকত কম। এবার সেটা বন্ধ করে ইউনিয়ন, পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতার মাহফিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে জনসম্পৃক্ততা বেড়েছে। কারণ ওয়ার্ডভিত্তিক ইফতারে বিএনপির নেতা থাকেন বড়জোর পাঁচ থেকে ১০ জন। বাকিরা সব সাধারণ মানুষ।’

এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি ও নিহতদের পরিবার এবং বিগত সময়ে গুম-খুন ও নিগ্রহের শিকার দলীয় নেতা-কর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। রমজানে অনেককে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, ঈদসামগ্রী পৌঁছিয়েছে।

দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র অনুভূতি জামায়াতের

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ঢাকায় ঈদ উদ্‌যাপন করবেন। তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, জাতি এমন এক মুহূর্তে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছে, যখন দেশ ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মানুষ মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিতে পারছে।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সৌদি আরবের মক্কায়, সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাড়িতে, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনার খানজাহান আলী থানায় নিজ বাড়িতে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মা’ছুম কুমিল্লার লাকসামের নারায়ণপুরে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়, হামিদুর রহমান আযাদ ও আবদুল হালিম ঢাকায় ঈদ করবেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মীরা এবারের ঈদ নতুন পরিবেশে উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছেন। মানুষের জন্যও এটা স্বস্তির ঈদ। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে নতুন শক্তির আগমন ঘটেছে। আমরা নতুন শক্তিকে প্রতিপক্ষ মনে করি না, রাজনৈতিক প্রতিযোগী ও সহযোগী শক্তি মনে করি। দেশ ও জাতীয় স্বার্থে আমাদের মধ্যে চিন্তার ঐক্য থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।’

ব্যতিক্রমধর্মী অনুভূতি

বিএনপির নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা, মামলা, হয়রানির মুখে ২০১৩ সালের পর টানা প্রায় এক যুগ বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের বড় অংশ এলাকায় যেতে পারেনি। ঠিকভাবে ঈদ উদ্‌যাপনও করতে পারেনি। তাই এবারের ঈদকে ঘিরে ব্যতিক্রমী অনুভূতি তাঁদের।

সেটা বলতে গিয়ে আগের অভিজ্ঞতার কথা বললেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন। তিনি এর আগে সর্বশেষ ঈদ করতে নিজ এলাকা বরিশালের গৌরনদীতে গিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সেটা ছিল ঈদুল আজহা। নামাজ শেষে ঈদগাহ থেকে তিনি মাত্র বাড়ি ফিরেছেন, গরু কোরবানির প্রস্তুতি চলছিল। এর মধ্যেই বাড়িতে অতর্কিত হামলা। কোরবানি আর হলো না। ঢাকায় ফিরে এলেন। এরপর আর বাড়িতে ঈদ করা হয়নি জহিরউদ্দিন স্বপনের। দু–একবার গোপনে বাড়ি গেলেও প্রতিবারই তাঁর বাড়ি ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল মহড়া দিতেন, আক্রমণ করেতন—এ ধরনের খবর পত্রপত্রিকায় প্রায়ই ছাপা হতো। তবে এবারের পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন।

ঈদ উদ্‌যাপন করতে গতকাল ভোরে গৌরনদী পৌঁছান জহিরউদ্দিন স্বপন। তিনি বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন নিয়মিত এলাকায় যান। নির্বিঘ্নে দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এবারের ঈদ হবে ব্যতিক্রমধর্মী অনুভূতির। সারা দেশেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক ত পর ব শ র জন ত ক প র ব এনপ র ন ত প রথম আল ক ন র জন ত ক ব এনপ র স ঈদ করব ন এল ক য় য ন পর ব শ ঈদ র দ ন ন ব এনপ র রহম ন ল ইসল ম অন ভ ত আম দ র পর য য় কর ম র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ