পর্যটক আকষর্ণে ভূমিকা রাখছে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। বছরের পর বছর ধরে উদ্যানটি পর্যটকদের মন জয় করে চলেছে। ঈদ, বর্ষবরণ ও পূজায় বৃদ্ধি পায় পর্যটক সমাগম।

এ উদ্যানের ভেতরে রয়েছে অন্তত ২৪টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস। রয়েছে বন বিভাগের লোকজন। পর্যটকদের জন্য চালু আছে প্রজাপতি বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, হাঁটার ট্রেইল, খাবার হোটেল, রেস্ট হাউস, মসজিদ, রাত যাপনে স্টুডেন্ট ডরমিটরি। 

উদ্যানে দুই শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধা জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তুর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬ প্রজাতির উভচর রয়েছে।

আরও আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি। রয়েছে লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, ভাল্লুক, চশমাপরা হনুমান, শিয়াল, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণের বিচরণ। সরীসৃপের মধ্যে আছে নানা জাতের সাপ। কাও ধনেশ, বন মোরগ, লাল মাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাসস্থল এই উদ্যান।

এ উদ্যান ছাড়াও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন চা বাগান, শাহাজিবাজার রাবার বাগান। চুনারুঘাট উপজেলার মুড়ারবন্দের সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র.

) এর মাজার, কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, বিভিন্ন চা ও রাবার বাগান। 

বানিয়াচং উপজেলার সাগরদিঘী, লক্ষ্মীবাওড় জলাবন, বিথঙ্গল আখড়া। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ ও বাহুবল উপজেলার দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন হাওড় এলাকা। জেলা ছাড়া দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকরা এসব স্থানে অতি সহজে যেতে হলে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় আসতে হবে। পরে এ স্থান থেকে গাড়ি করে দর্শনীয় স্থানগুলোকে ভ্রমণ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা মাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “বর্তমানে পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানই। এ উদ্যানে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পর্যটকদের অবস্থান লেগেই থাকে। কারণ, এখানে সহজেই আসা যায়। উদ্যানের গভীর অরণ্যে দেখা যাচ্ছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণি। আশেপাশে রয়েছে চা বাগান। পাশেই তেলিয়াপাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। উদ্যানে রয়েছে থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা। রয়েছে নিরাপত্তা।”

তিনি বলেন, “সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশাপাশি রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যে পর্যটক সমাগম বাড়ছে। ঈদে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সাজানো হয়েছে উদ্যানে অবস্থিত দোকানগুলো।”

সাতছড়ি উদ্যানের কাউন্টার দায়িত্বে থাকা সন্ধ্যা রাণী দেববর্মা বলেন, “ঈদে পর্যটক বরণে পুরোপুরি প্রস্তুত সাতছড়ি উদ্যান। এ লক্ষে কাজ করা হয়েছে। রয়েছে নিরাপত্তা।”

সাতছড়ি বন্যপ্রাণি রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, “সাতছড়িতে প্রচুর বন্যপ্রাণি রয়েছে। রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। মনোরম প্রাকৃতি পরিবেশে ঘুরে পর্যটকরা আনন্দিত। ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তা মনিটরিং করা হবে। পরিস্কার করা হয়েছে বসার আসনগুলো।”

কলেঙ্গার রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, “কালেঙ্গায় পর্যটকরা আসছে। তবে সাতছড়ির ন্যায় পর্যটক কালেঙ্গায় আসে না। আমরা পর্যটক আকর্ষণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”

হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, “উন্নত মানের চায়ের কথা মনে পড়তেই যেকয়টি জেলার নাম চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তারমধ্যে হবিগঞ্জ অন্যতম। এ জেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট, পূর্বে মৌলভীবাজার, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলার এক পাশে হাওড়। অপর পাশে পাহাড়ি এলাকা। মাঝে শিল্পাঞ্চল, গ্রাম ও শহর। এরমধ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পর্যটক আকর্ষণে বিরাট ভূমিকা পালন রাখছে।”

জানা গেছে- সাতছড়িতে প্রতিদিন ৩০০ থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত পর্যটক আসেন। উদ্যানে প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকিট ১১৫ টাকা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৬০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১ হাজার ১৫০ টাকা। শুটিংয়ের জন্য ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। পিকনিক পার্টির জন্য জনপ্রতি ২৩ টাকা। পার্কিংয়ের জন্য ছোট গাড়ির ফি ১১৫ টাকা ও বড় গাড়ি ফি ২৩০ টাকা। 

একইভাবে কালেঙ্গায় টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়। তবে দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে সবাই প্রবেশ করতে পারেন না। এখানে যাদের অঢেল টাকা রয়েছে, তারা সেখানে ভ্রমণ করতে পারেন। অবশ্য হবিগঞ্জের অন্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে টিকিট করার নিয়ম চালু হয়নি।

প্রায় ১৬ হাজার একরজুড়ে অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গার বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য মূলত তরফ পাহাড় সংরক্ষিত বনভূমির অংশ, যা দেশের অবশিষ্ট পার্বত্য বনভূমির মধ্যে সর্ববৃহৎ। অভয়ারণ্যটি চুনারুঘাট উপজেলার অন্তর্গত গাজীপুর ও রানীগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর বিস্তত। অপেক্ষাকৃত দুর্গম স্থানে অবস্থিত বলে এই সমৃদ্ধ মিশ্র চিরহরিৎ বনটি এখনো টিকে রয়েছে। অভয়ারণ্যটির আশেপাশে রয়েছে ৩টি চা-বাগান।

রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যে ৩৭ প্রজাতির স্তণ্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও উড়ংরা এই বনভূমির আশেপাশে এবং অভ্যন্তরে বসবাস করছে।

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ত উপজ ল র র জন য স তছড়

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, বিপাকে ৪০ হাজার পর্যটক
  • হাওরের স্বচ্ছ জলে মুগ্ধ পর্যটক, বাড়ছে ভিড়
  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কেউ অসুন্দর করলে ব্যবস্থা: চসিক মেয়র
  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ