ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলারের মামলা করলেন মাহমুদ খলিল
Published: 11th, July 2025 GMT
সম্প্রতি লুইজিয়ানার অভিবাসন কারাগার থেকে মুক্তি পান ফিলিস্তিনি অ্যাকটিভিস্ট মাহমুদ খলিল। কারামুক্ত হয়েই তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছেন। তার অভিযোগ, মিথ্যা অভিযোগে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে, বিদ্বেষমূলকভাবে বিচার করা হয়েছে এবং ইহুদি বিদ্বেষী হিসেবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণে সরকার তাকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেছে। খবর বিবিসি, সিএনএনের
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছর বয়সী এই প্রাক্তন স্নাতক শিক্ষার্থী তার ১০ সপ্তাহের পুত্র সন্তান দীনকে কোলে নিয়ে সেই কঠিন রাতের কথা স্মরণ করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি সন্তান ভূমিষ্ঠের সংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় শীতল কারাগারে প্রহর গুনছিলেন। খলিল বলেন, ‘সেই রাতের যন্ত্রণা আমি বর্ণনা করতে পারব না। এটা এমন কিছু; যা আমি কখনো ক্ষমা করব না।’
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছেন। খলিল জানান, তার লক্ষ্য হলো ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি বার্তা পাঠানো যে, তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ‘তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। কারণ, তারা মনে করে; তাদের কেউ আটকাতে পারবে না।’
খলিল আরও জানান, যদি তিনি কোনো ক্ষতিপূরণের অর্থ পান, তবে সেই অর্থ ট্রাম্প প্রশাসনের ফিলিস্তিনপন্থিদের দমনে ‘ব্যর্থ’ প্রচেষ্টার ভুক্তভোগী অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেবেন। তিনি একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা এবং প্রশাসনের নির্বাসন নীতিতে পরিবর্তনেরও দাবি করেছেন।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন মুখপাত্র খলিলের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলছেন, খলিলের ‘ঘৃণামূলক আচরণ ও বক্তব্য’ ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকি ছিল। তবে খলিল গ্রেপ্তারের আগে এবং পরেও ইহুদি-বিদ্বেষের নিন্দা করেছেন। তাকে আটক করে রাখা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি। হামাস বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন অভিযোগও সরকার আনেনি।
মাহমুদ খলিল জানান, গত ৮ মার্চ তাকে ‘কার্যত অপহরণ’ করা হয়েছিল। ওই সময় তিনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাকে কোনো পরোয়ানা দেখানো হয়নি। পরে ফেডারেল এজেন্টরা জেনে বিস্মিত হয়েছিলেন যে, তিনি আমেরিকার একজন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা। এরপর তাকে লুইজিয়ানার জেনা-তে একটি অভিবাসন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এই বিষয়টি তার পরিবার ও আইনজীবীদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। কারাবাসের সময় তাকে আলসারের ওষুধ দেওয়া হয়নি। তীব্র ফ্লুরোসেন্ট আলোর নিচে ঘুমাতে বাধ্য করা হয়েছে, ‘প্রায় অখাদ্য’ খাবার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তিনি ১৫ পাউন্ড ওজন হারিয়েছেন।
১০৪ দিন আটক থাকার পর, গত ২০ জুন একজন ফেডারেল বিচারক খলিলকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিচার বলেন, খলিলকে পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টা অসাংবিধানিক।
মুক্তির পর থেকে খলিল তার নবজাতক পুত্র এবং স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করছেন। গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ধানের শীষের ভোট চেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন প্রধান শিক্ষক
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ধানের শীষে পক্ষে ভোট চেয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার চররূপপুর এলাকায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এই স্লোগান দেন। তার দেওয়া বক্তব্যের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর বিক্রির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারী ৭ শিক্ষককে শোকজ
দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় না থেকেই যে উন্নয়ন করছে, ক্ষমতায় আসলে আরো বেশি উন্নয়ন করতে পারবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫ পাসেন্ট ইনক্রিমেন্ট চালু করেছিলেন। আগামীতে যদি ধানের শীষকে নির্বাচিত করেন তাহলে আরো বেশি উন্নয়ন হবে।”
তিনি বলেন, “আপনারা সবাই দোয়া করবেন, বেগম খালেদা জিয়া যেন আবার সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। ধানের শীষের বিজয় অর্জনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে, এই আশা ব্যক্ত করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি, জয় বাংলা, জয়...।” কথা শেষ না করেই তিনি মাইক্রোফোন অন্যজনের হাতে দিয়ে দেন।
একজন প্রধান শিক্ষকের সরাসরি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং দলীয় ভোট চাওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে উপজেলা জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে শাস্তির দাবিও করেছেন অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম আড়াল করতে ৫ আগস্টের আগে সিরাজুল ইসলাম কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সান্নিধ্যে চলতেন। সরকার পতনের পর হঠাৎ বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। রীতিমতো সভা-সমাবেশ ও মিছিল মিটিংয়ে যোগদান করে বক্তব্যও দিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। তিনি যে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট তা তার বক্তব্যে পরিষ্কার।
এ বিষয়ে লক্ষীকুন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল বলেন, “আমি রাজনীতি করি না, পূর্বেও কখনো করিনি। শিক্ষক হিসেবে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি দলের পক্ষে বক্তব্য দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। জয় বাংলা ভুলে বলে ফেলেছি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃক্ষিত।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আজমল হোসেন সুজন। তিনি বলেন, “স্থানীয় যুবসমাজের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিলো। এটি দলীয় আয়োজন ছিল না। সিরাজুল ইসলাম বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা বলে ফেলেছেন এবং তাৎক্ষণিক ক্ষমাও চেয়েছেন। যেহেতু তিনি শিক্ষক এবং আমাদের দলের কেউ না, তাই এ বিষয়ে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।”
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। সিরাজুল ইসলামের বক্তব্যের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “একজন শিক্ষক হিসেবে, সরকারি কর্মচারী হিসেবে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ