ঈদ ঘনিয়ে এসেছে, সারা বিশ্বের মুসলিমরা ঈদ উদ্যাপন করতে চলেছেন, কিন্তু এটাও ঠিক যে মুসলিম জাতির একটি অংশ এই সময়েও ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের মধ্যে যারা শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যে আছি, তারা কি এজন্য অপরাধবোধে ভুগবেন নাকি ঈদ পালন করবেন?
ঈদ উল-ফিতর এমন একটি সময় যখন ফিলিস্তিনে মুসলমানরা নির্মম দখলদারদের হাতে নিপীড়িত হচ্ছে, উইঘুর মুসলমানরা চীনে রমজান পালন করতে পারছেন না, দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যার কারণে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে…। এ তালিকা আরও দীর্ঘ। তাহলে যারা শান্তি, স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তায় আছি, তাদের কী করা উচিত? যখন আমরা দেখি যে পুরো বিশ্ব যেন আগুনে পুড়ে যাচ্ছে, তখন ঈদ উদ্যাপন করতে যাওয়া কি সঠিক হবে?
তাহলে আমরা কীভাবে ঈদ উদ্যাপন করব?
এমন প্রশ্ন অনেকর মনে আজকাল ঘুরপাক খেতে থাকে। মনে রাখবেন, আমাদের দুঃখ ভারাক্রান্ত হওয়া বা ঈদের আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করাটা পৃথিবীর কোনো ক্ষতের উপশম করবে না। সবকিছু সংশোধন করে দেবে না। বিশ্বের সমস্যাগুলোর প্রতি উদ্বেগ থাকার কারণে আমাদের সুখী হওয়ায় কোনও বাধা সৃষ্টি করবে না।
আরও পড়ুনঈদ যেভাবে এল১১ এপ্রিল ২০২৪আসুন, আমরা কয়েকটি কিছু বিষয় দেখি, যা হয়তো আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ ঈদ পালনে সাহায্য করবে।
১.
২. অন্যের সমস্যার প্রতি ‘যত্ন’ নেওয়া: সহানুভূতি মানে হলো, অন্যদের অনুভূতি শেয়ার করা। তবে এর অর্থ এটি নয় যে, আমরা তাদের সমস্যার বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে দেব। সহানুভূতি হলো এমনভাবে অন্যদের অনুভূতি অনুভব করা যাতে তাদের কষ্ট বুঝতে পারি, তারপর আমরা সাহায্য করার জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।
৩. বাস্তব পদক্ষেপ নিন: কাছের দুঃখী মানুষদের দান করুন। দেখবেন, আপনার চারপাশের মানুষও অনেক কষ্টে আছে, তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যান। প্রয়োজনে সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন, অন্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলুন। যারা কষ্ট পাচ্ছেন তাদের জন্য আন্তরিক দোয়া করুন, আল্লাহই সেরা পরিকল্পনাকারী।
৪. অন্যদের উজ্জীবিত করুন: সংগ্রামের গল্প শুনিয়ে আমরা চাইলে অন্যদের উজ্জীবিত করতে পারি। যারা সংগ্রাম করছেন, তাদের স্মরণ করি। তাদের মতো হতে চেষ্টা করি। পরিবারের সদস্যদের, শিশুদের সামনে বড়দের সংগ্রামের গল্প বলি।
৫. কৃতজ্ঞ থাকুন: দুঃখ বা অপরাধবোধে না ভুগে আলহামদুলিল্লাহ বলুন। আল্লাহর সমস্ত অনুগ্রহের জন্য তার শোকর আদায় করুন, কেননা, এখনো তিনি আপনাকে ভালো রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের স্মরণ করব, এবং আমাকে কৃতজ্ঞতা জানাও, কখনো অবিশ্বাস করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)
এভাবে ভাবলে ইনশা আল্লাহ, আমরা সবাই একটি ভারসাম্যপূর্ণ ঈদ উদ্যাপন করতে পারব।
সূত্র: মুসলিম ম্যাটার্স
আরও পড়ুনঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ম১০ এপ্রিল ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র অন আম দ র আল ল হ র সমস
এছাড়াও পড়ুন:
ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে পাকিস্তানের জার্সি ঢাকতে বলার ঘটনায় ক্ষমা চাইল ল্যাঙ্কাশায়ার
ইংল্যান্ড–ভারত টেস্ট সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাকিস্তানের জার্সি পরে খেলা দেখতে বসেছিলেন এক দর্শক। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা জার্সিটি ঢাকতে বলার পর সেই দর্শক তা না করায় তাঁকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছে ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব। ওল্ড ট্রাফোর্ড ল্যাঙ্কাশায়ারের ঘরের মাঠ।
সংক্ষিপ্ত সংস্করণে পাকিস্তানের সবুজ রংয়ের জার্সি পরে মাঠে গিয়েছিলেন ফারুক নজর নামের সেই দর্শক। ঘটনাটি তিনি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পর এ নিয়ে আলোচনার ঝড় শুরু হয়।
আরও পড়ুনওল্ড ট্রাফোর্ডে পাকিস্তানি জার্সি পরা নিয়ে বিতর্ক, তদন্তে ল্যাঙ্কাশায়ার২৮ জুলাই ২০২৫ভিডিওতে দেখা যায়, এক নিরাপত্তারক্ষী নজরকে জার্সিটি ঢাকতে বলছেন। সেই নিরাপত্তারক্ষী ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে কাজ করেন বলে পরিচয় দেন। ফারুককে তিনি বলেন, জার্সিটি ঢাকতে বলার জন্য ‘কর্তৃপক্ষ’ তাঁকে পাঠিয়েছেন। তবে তাঁর কথায় ফারুক রাজি হননি। এরপর পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তায় ফারুরকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়।
ল্যাঙ্কাশায়ারের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘(স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার কাজে) দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সঙ্গে অগ্রহণযোগ্য ব্যবহার করায় স্টুয়ার্ড ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে স্টেডিয়াম থেকে চলে যেতে বলেন।’ গত রোববার টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে এই ঘটনা ঘটে।
ল্যাঙ্কাশায়ার এর আগে জানিয়েছিল, এই ঘটনার তদন্ত করা হবে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে ক্ষমা চেয়ে ক্লাবটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া, তা পর্যালোচনা করা হবে।’
ল্যাঙ্কাশায়ারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, টেস্টের চতুর্থ দিনে অর্থাৎ শনিবার ভারত ও পাকিস্তান সমর্থকদের মধ্যে অন্য একটি ঘটনা ফারুক নজরের বিষয়টি ওভাবে সামলানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। ক্লাবটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রথমে একটি বিষয় আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, স্রেফ পাকিস্তানের জার্সি পরে আসায় কাউকে বের করে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। শনিবার একটি ঘটনার কারণে বিষয়টি সামলানো হয় ওভাবে। একদল সমর্থক পাকিস্তানের পতাকা ওড়ান, তাতে কাছাকাছি থাকা ভারতের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সম্মানের সঙ্গে পতাকা সরিয়ে রাখার কথা বলে ঘটনাটা আর বাড়তে দেননি। তাঁরাও (সমর্থক) কোনো প্রকার সন্দেহ ছাড়াই সেটা (পতাকা নামিয়ে ফেলা) করেছেন।’
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস (ডব্লুসিএল) টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত। এর মধ্যে একটি সেমিফাইনাল এবং আফ্রিদি–হাফিজদের বিপক্ষে সেই ম্যাচ খেলায় টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় যুবরাজ–হরভজনদের।বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রোববার আমাদের (নিরাপত্তা) দল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়। আমাদের কাছে নিরাপত্তাই আগে। কোনো উত্তেজনা যেন তৈরি না হয় এবং তাঁর (ফারুক নজর) নিজের স্বার্থে গ্যালারিতে আমাদের (নিরাপত্তা) কর্মী ভদ্রভাবে জার্সিটি ঢেকে রাখার কথা বলেন। কয়েকবার অনুরোধের পরও তিনি বার বার অসম্মতি জানান।’
আরও পড়ুনওল্ড ট্রাফোর্ডে পাকিস্তানি জার্সি নিয়ে বিতর্ক: খাজার প্রশ্ন, জার্সি ঢাকতে বলাটা কি বৈধ২৯ জুলাই ২০২৫ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্কে কয়েক বছর ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত মে মাসে দুই দেশের সামরিক সংঘাতের পর সেই উত্তেজনা আরও তীব্র হয়। এই টানাপোড়েনের ছায়া পড়েছে দুই দেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্কেও।
২০১৩ সালের পর আর কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেনি ভারত-পাকিস্তান। টেস্ট ক্রিকেটে মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা আরও পুরোনো, ২০০৭ সালে। এমনকি বৈশ্বিক ও মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সময় একে অন্যের দেশে গিয়ে খেলাতেও তৈরি হয়েছে জটিলতা। ফলে সম্প্রতি দুই দলের ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করতে হচ্ছে ‘হাইব্রিড মডেলের’ অংশ হিসেবে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে টেস্টটি ড্র হয়