হোয়াইট হাউস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন, তখন তারা একে অপরের প্রশংসা করেছেন। ওই সময়টিতেও গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল ইসরায়েল। এসব হামলায় এ পর্যন্ত উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৭৫ জনেরও বেশি মানুষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চান, তাহলে ইসরায়েলকে তারা যে সামরিক সহায়তা দেন, তা ব্যবহার করে নেতানিয়াহুকে চুক্তিতে সম্মত হতে চাপ দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান ফিনুকেন ট্রাম্পের মিশ্র বার্তা ও তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের মধ্যে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, উভয় ব্যক্তিই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিতে অনিচ্ছুক। তিনি বলেন, ‘আপনি হোয়াইট হাউস থেকে একই রকম ঘোষণা শুনতে পাবেন। যদি যুদ্ধবিরতি সত্যিই হোয়াইট হাউসের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হয়, তবে বাস্তবায়নেরও ক্ষমতা এর রয়েছে।’

জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরায়েলকে কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেয়। মার্কিন কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করলেও নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েলের ‘গাজায় এখনও কাজ শেষ করা বাকি’ এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করা বাকি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক আইনজীবী ফিনুকেন নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘সর্বোচ্চ বাগাড়ম্বর’ ও ‘অস্পষ্টতা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য ‘সামরিক সহায়তা স্থগিতের হুমকি’ ব্যবহার করতে পারেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ও কূটনৈতিক জয় অর্জনের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের স্বার্থেও হবে।’

নেতানিয়াহু গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছান। গত মাসে ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যৌথ হামলা তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ‘উদযাপন’ করেন। শুরু থেকেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের অহংকারকে কাজে লাগাতে দেখা গেছে। গত সোমবার রাতে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে বসে নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন। পরদিন মঙ্গলবার দু’জন আবার দেখা করেন। ট্রাম্প বলেন, তাদের আলোচনার মূল বিষয় হবে গাজা ও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব। 

এক দিন পর নেতানিয়াহু জানান, তিনি ও ট্রাম্প গাজা নিয়ে ‘একমত্যে’ পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি চুক্তি চান। কিন্তু কোনো মূল্যে নয়। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা এটি অর্জনের জন্য একসঙ্গে কাজ করছি।’ 

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফ্টের রিসার্চ ফেলো অ্যানেল শেলিন বলেন, যুদ্ধবিরতির পথে বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ইসরায়েল। হামাস ইতোমধ্যেই যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির কথা জানিয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি। তিনি বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুদ্ধবিরতি চান। কিন্তু তা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তি প্রয়োগ করতে দেখিনি। 

পুষ্টির ওষুধ নিয়ে আসা শিশুদের সারিতে হামলা

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক দিনে আরও ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দায়েল আল বালাহতে একটি ওষুধ সরবরাহ কেন্দ্রে পুষ্টি সম্পূরক নিতে আসা শিশুদের ওপর বর্বর হামলা হয়েছে। এতে ১৫ জন নিহত হন, যার মধ্যে ১০ শিশু ও তিন নারী রয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ওই ওষুধ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে রুগ্ণ নারী ও শিশুকে পুষ্টির ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছিল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ইসর য় ল কর ছ ন র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা চায় আদানি

শীতে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতের খোলাবাজারে বিক্রি করতে চায় আদানি পাওয়ার। এ জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুমোদন চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পিডিবি বলছে, তারা আদানির প্রস্তাবে রাজি হবে, যদি কোম্পানিটি কয়লার দাম কমায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হলেও সুরাহা হয়নি। পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, সিদ্ধান্ত জানানোর মতো পর্যায়ে বিষয়টি এখনও পৌঁছেনি। আলোচনা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। চুক্তি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। বাণিজ্যিক লেনদেনও কমে আসে। এ পরিস্থিতিতে গত আগস্টে অন্য দেশে রপ্তানির জন্য উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতেও বিক্রির সুযোগ রেখে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন করে দেশটির সরকার। 

বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন নথিতে উল্লেখ করা হয়, শুধু একটি প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রণীত ২০১৮ সালের ওই নির্দেশিকায় সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হলে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে আরও বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ বা আংশিক উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার না হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধার্থে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন ভারতীয় গ্রিডে যুক্ত করার অনুমোদন দিতে পারবে ভারত সরকার। 

আদানি পাওয়ার তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি স্থানীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে। তবে এই নির্দিষ্ট লাইনের মাধ্যমে ভারতীয় বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে পিডিবির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। কারণ বাংলাদেশে শতভাগ রপ্তানির জন্য আদানি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি নির্মাণ করেছে। 

সম্প্রতি আদানি শীতকালে বাংলাদেশের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নিজ দেশের খোলাবাজারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। পিডিবি বলছে, আদানিকে যদি এই অনুমোদন নিতে হয়, তাহলে কয়লার দাম কমানোর প্রস্তাব মানতে হবে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৮ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। 

পি‌ডি‌বির এক কর্মকর্তা জানান, শীতকালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। যে কারণে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির আলোচনা চলছে। একই কারণে আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চাহিদাও কমে যায়। বিদ্যুৎ না কিন‌লেও ক্যাপা‌সি‌টি পে‌মেন্ট ঠিকই দি‌তে হয়। এ জন্য আদা‌নি বাড়‌তি বিদ্যুৎ অন্য কোথাও বি‌ক্রি কর‌লে তার লাভ, বাংলা‌দ‌েশেরও লাভ। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, পিডিবি ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্সকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের সব কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের কয়লা এই ইনডেক্স অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে। আর আদানি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ একাধিক ইনডেক্সের গড় করে কয়লার দর নির্ধারণ করে। ফলে টনপ্রতি কয়লার দাম ১০ থেকে ১২ ডলার বেড়ে যায়। 

নাম প্রকাশ না করে পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লা কেনায় ছাড়ের বিষয়টি রয়েছে। পায়রা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে দামে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায়, যার সুবিধা প্রকৃতপক্ষে পিডিবি ভোগ করে। রামপালও বছরজুড়ে কয়লা কেনার সময় ছাড়ের শর্তেই চুক্তি করে। আদানি নিজের খনির কয়লা সরবরাহ করে। চুক্তিতে ছাড়ের বিষয়টি নেই। ফলে কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিটি। ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, এ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের আগে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়: প্রাথমিক প্রতিবেদন
  • ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র
  • দাম বেড়েছে সবজি ও মুরগির, কাঁচামরিচে আগুন 
  • বৃষ্টির প্রভাব সবজির বাজারে, কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা
  • গ্যাস সংকটে ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ
  • শনিবার ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকবে না সুনামগঞ্জে
  • গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে
  • গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে
  • ভারতের বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা চায় আদানি