যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ভোটাররা তাঁদের অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের জন্য একজন নতুন বিচারপতি বেছে নিতে গতকাল মঙ্গলবার ভোট দিয়েছেন। এর নির্বাচনী প্রচারে এত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।

নির্বাচনে ৯ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রার্থী, স্থানীয় দল ও বাইরের বিভিন্ন গ্রুপ এই অর্থ ব্যয় করছে। এদের মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্কও আছেন।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইলন মাস্ক এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন রাজনৈতিক গ্রুপগুলো উইসকনসিনে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি নির্বাচনের প্রচারে ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি ব্যয় করেছে।

উদারপন্থীদের পক্ষে কাউন্টি বিচারক সুসান ক্রফোর্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। রক্ষণশীলদের পক্ষে লড়েছেন অঙ্গরাজ্যের সাবেক রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেল ব্র্যাড শিমেল। তিনিও কাউন্টি বিচারক।

উইসকনসিনের শীর্ষ আদালতে বিচারপতিদের মধ্যে বর্তমানে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন উদারপন্থীরা। তবে একজন উদারপন্থী বিচারক অবসর গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্প রক্ষণশীল প্রার্থী শিমেলকে সমর্থন দিয়েছেন। অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।

গতকাল স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।

২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন ও ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাধিকার ও ভোটের নিয়মকানুন কেমন হবে, তা নিয়ে উইকনসিনের শীর্ষ আদালত থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

অঙ্গরাজ্যটি ভবিষ্যতেও ভোটের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের ময়দান হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১ শতাংশের কম পয়েন্ট ব্যবধানে উইসকনসিনে জিতেছিলেন ট্রাম্প। আর কোনো অঙ্গরাজ্যে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান এতটা কম ছিল না।

এ ছাড়া, উইসকনসিনে গর্ভপাতের অধিকারের আইনি বৈধতা থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্তও অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত নেবেন। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে দেশব্যাপী নারীদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেন। সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের সম্মিলিত দর-কষাকষির সুযোগ থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্তও আসতে পারে। রিপাবলিকান–সমর্থিত এক আইনে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল উইসকনসিনের ভোটার গ্যারি ক্রিস্টেনসন বলেছিলেন, তিনি শিমেলকে সমর্থন করবেন।

অবসরে যাওয়া এই ব্যক্তি আরও বলেন, যদি একজন উদারপন্থী সেখানে যান, তবে তাঁরা ট্রাম্পের সরকারি ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।

আরও পড়ুনঅক্টোবরের প্রথমার্ধে ট্রাম্পের প্রচারে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার দিয়েছেন মাস্ক২৫ অক্টোবর ২০২৪

২৬ বছরের তরুণ ভোটার ওয়েস্ট রবার্টস ক্রফোর্ডকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওই সব লোকজন যাঁরা ইলন মাস্ক অথবা অন্য ধনকুবেরদের সমর্থন করেন, তাঁদের চেয়ে সাধারণ মানুষকে সমর্থন জানানো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ট্রাম্পের পক্ষে ২৫ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছিলেন মাস্ক।

গতকালের ভোটের আগে মাস্ক স্বেচ্ছাসেবকদের শিমেলের পক্ষে একজন ভোটার নিয়ে আসার বিনিময়ে ২০ ডলার করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর গতকাল ভোটের দিন তিনি ভোটারদের শিমেলের ছবি ধরে ‘থাম্বস আপ’ করে আছেন এমন যে কারও ছবি অনলাইনে পোস্ট করার বিনিময়ে ১০০ ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনী প্রচারে মাস্কের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছেন। ক্রফোর্ডের সমর্থকেরা জোর দিয়ে বলেছেন, নিশ্চয়ই ভোটের ফলাফলের সঙ্গে মাস্কের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ রপত সমর থ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি

প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।

ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।

ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।

তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।

মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।

আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।

আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদ

আনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।

সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি