আট বছর বয়সী অনন্যা যাদবের কাছে হিন্দি, ইংরেজি ও গণিতের বইভর্তি স্কুলব্যাগটি অমূল্য সম্পদ। একদিন ‘আইএএস কর্মকর্তা’ হয়ে দেশরক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে স্কুলব্যাগ তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আর তাই গত ২১ মার্চ ভারতের উত্তর প্রদেশের আম্বেদকরনগরে উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে আগুন ধরে যাওয়া একটি ছাউনির পাশে রাখা ব্যাগটি রক্ষা করতে ছুটে যায় সে।    

ছোট্ট অনন্যা হয়তো জানত না যে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে তার ছুটে যাওয়ার ভিডিওটি ভারতের শীর্ষ আদালতের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। গতকাল মঙ্গলবার এক শুনানির সময় বিচারপতি এ এস ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার একটি বেঞ্চ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া (ভাইরাল) ভিডিওটির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘এটি সবাইকে হতবাক করেছে।’

বিচারপতি ভুঁইয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন, ‘সাম্প্রতিক একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বুলডোজার দিয়ে ছোট ছোট কুঁড়েঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে। একটি ছোট মেয়ে ভেঙে পড়া কুঁড়েঘর থেকে বইভর্তি একটি ব্যাগ বুকে নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। এটি সবাইকে হতবাক করেছে।’

আম্বেদকরনগরের আড়াই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা যাদব। সে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছে, ‘আমি স্কুল থেকে ফিরে আমার ব্যাগটি চাপারে (খড়ের তৈরি ছাউনি) রেখেছিলাম, যেখানে পশুগুলো বেঁধে রেখেছিলেন আমার মা। (ভাঙার সময়) আমাদের পাশের চাপারে আগুন লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমার স্কুলব্যাগ এবং বইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। আমার মা আমাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সেখানে ছুটে যাই।’

অনন্যা আরও বলেছে, ‘আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে আমার বই ও ব্যাগ পুড়ে যাবে। পরে আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে যাই।’ পুড়ে গেলে স্কুল থেকে আর বই দেবে না বলে আশঙ্কা ছিল তার।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অনন্যার দাদা রাম মিলন যাদব (৭০) দাবি করেন, প্রশাসন প্রায় ‘দুই বিসওয়া’ (দুই কাঠার সমান) জমির ওপর নির্মিত স্থাপনা ভেঙে ফেলতে এসেছিল, যা ‘৫০ বছর ধরে’ তাঁদের পরিবারের দখলে আছে। তিনি আরও বলেন, যখন তিনি এবং তাঁর ছেলেরা বুঝিয়ে বলছিলেন যে আদালতে একটি মামলার শুনানি চলছে, তখনই উচ্ছেদ অভিযান হয় আর ওই সময় খড়ের তৈরি একটি চালায় আগুন ধরে যায়।

অনন্যার বাবা অভিষেক পেশায় শ্রমিক। তিন বলেন, ‘ওই ভিডিও দেখার পর অনেক রাজনীতিবিদ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আমরা বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে।’ তিনি কোনো ঝামেলা চান না​ বলে জোর দেন।

রাম মিলন যাদব আরও বলেন, ‘ভিডিওটির বিষয়ে লোকেরা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসার আগপর্যন্ত এটি বড় কোনো বিষয় ছিল না। আমরা শুধু বুঝি যে জমির জন্য আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।’

সমাজবাদী দলের প্রধান অখিলেশ যাদব ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। অন্যদিকে অনন্যার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে কংগ্রেস। তবে এই উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো আবাসিক স্থাপনা কিংবা অনন্যার বইয়ের ব্যাগ যেখানে রাখা ছিল, সেখানকার কোনো কুঁড়েঘর হাত দেওয়া হয়নি।

জালালপুরের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট পবন জয়সওয়াল বলেন, ‘দুই মাস আগে আমরা রাম মিলন যাদবকে দখলকৃত জমিটি খালি করার জন্য একটি নোটিশ দিয়েছিলাম। আমরা যখন উচ্ছেদ করতে যাই, তখন তাঁরা প্রতিবাদ শুরু করেন। আমরা জানি না কীভাবে খড়ের তৈরি একটি স্থাপনায় আগুন লেগেছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে একটি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়, তবে এটি ছিল সম্পূর্ণ অনাবাসিক।’

ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পবন জয়সওয়াল বলেন, ‘মেয়েটি যেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই স্থাপনা স্পর্শও করা হয়নি। এটি আগুন লাগার জায়গা থেকে অনেক দূরে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, এ–সংক্রান্ত ‘ভুয়া’ ভিডিওগুলোর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অনন য র র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”

আরো পড়ুন:

বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন 

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির 

রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।

তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”

দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”

সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ