বই বুকে নিয়ে কেন পালিয়েছিল ৮ বছরের মেয়েটি
Published: 2nd, April 2025 GMT
আট বছর বয়সী অনন্যা যাদবের কাছে হিন্দি, ইংরেজি ও গণিতের বইভর্তি স্কুলব্যাগটি অমূল্য সম্পদ। একদিন ‘আইএএস কর্মকর্তা’ হয়ে দেশরক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে স্কুলব্যাগ তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আর তাই গত ২১ মার্চ ভারতের উত্তর প্রদেশের আম্বেদকরনগরে উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে আগুন ধরে যাওয়া একটি ছাউনির পাশে রাখা ব্যাগটি রক্ষা করতে ছুটে যায় সে।
ছোট্ট অনন্যা হয়তো জানত না যে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে তার ছুটে যাওয়ার ভিডিওটি ভারতের শীর্ষ আদালতের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। গতকাল মঙ্গলবার এক শুনানির সময় বিচারপতি এ এস ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার একটি বেঞ্চ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া (ভাইরাল) ভিডিওটির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘এটি সবাইকে হতবাক করেছে।’
বিচারপতি ভুঁইয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন, ‘সাম্প্রতিক একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বুলডোজার দিয়ে ছোট ছোট কুঁড়েঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে। একটি ছোট মেয়ে ভেঙে পড়া কুঁড়েঘর থেকে বইভর্তি একটি ব্যাগ বুকে নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। এটি সবাইকে হতবাক করেছে।’
আম্বেদকরনগরের আড়াই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা যাদব। সে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছে, ‘আমি স্কুল থেকে ফিরে আমার ব্যাগটি চাপারে (খড়ের তৈরি ছাউনি) রেখেছিলাম, যেখানে পশুগুলো বেঁধে রেখেছিলেন আমার মা। (ভাঙার সময়) আমাদের পাশের চাপারে আগুন লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমার স্কুলব্যাগ এবং বইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। আমার মা আমাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সেখানে ছুটে যাই।’
অনন্যা আরও বলেছে, ‘আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে আমার বই ও ব্যাগ পুড়ে যাবে। পরে আমি আমার মায়ের কাছে ফিরে যাই।’ পুড়ে গেলে স্কুল থেকে আর বই দেবে না বলে আশঙ্কা ছিল তার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অনন্যার দাদা রাম মিলন যাদব (৭০) দাবি করেন, প্রশাসন প্রায় ‘দুই বিসওয়া’ (দুই কাঠার সমান) জমির ওপর নির্মিত স্থাপনা ভেঙে ফেলতে এসেছিল, যা ‘৫০ বছর ধরে’ তাঁদের পরিবারের দখলে আছে। তিনি আরও বলেন, যখন তিনি এবং তাঁর ছেলেরা বুঝিয়ে বলছিলেন যে আদালতে একটি মামলার শুনানি চলছে, তখনই উচ্ছেদ অভিযান হয় আর ওই সময় খড়ের তৈরি একটি চালায় আগুন ধরে যায়।
অনন্যার বাবা অভিষেক পেশায় শ্রমিক। তিন বলেন, ‘ওই ভিডিও দেখার পর অনেক রাজনীতিবিদ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আমরা বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে।’ তিনি কোনো ঝামেলা চান না বলে জোর দেন।
রাম মিলন যাদব আরও বলেন, ‘ভিডিওটির বিষয়ে লোকেরা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসার আগপর্যন্ত এটি বড় কোনো বিষয় ছিল না। আমরা শুধু বুঝি যে জমির জন্য আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।’
সমাজবাদী দলের প্রধান অখিলেশ যাদব ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। অন্যদিকে অনন্যার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে কংগ্রেস। তবে এই উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো আবাসিক স্থাপনা কিংবা অনন্যার বইয়ের ব্যাগ যেখানে রাখা ছিল, সেখানকার কোনো কুঁড়েঘর হাত দেওয়া হয়নি।
জালালপুরের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট পবন জয়সওয়াল বলেন, ‘দুই মাস আগে আমরা রাম মিলন যাদবকে দখলকৃত জমিটি খালি করার জন্য একটি নোটিশ দিয়েছিলাম। আমরা যখন উচ্ছেদ করতে যাই, তখন তাঁরা প্রতিবাদ শুরু করেন। আমরা জানি না কীভাবে খড়ের তৈরি একটি স্থাপনায় আগুন লেগেছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে একটি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়, তবে এটি ছিল সম্পূর্ণ অনাবাসিক।’
ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পবন জয়সওয়াল বলেন, ‘মেয়েটি যেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই স্থাপনা স্পর্শও করা হয়নি। এটি আগুন লাগার জায়গা থেকে অনেক দূরে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, এ–সংক্রান্ত ‘ভুয়া’ ভিডিওগুলোর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অনন য র র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ