পশ্চিমবঙ্গে ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করলেন সুপ্রিম কোর্ট
Published: 3rd, April 2025 GMT
পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ দেওয়া প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষকের চাকরিকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার ওই চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের পুরো প্যানেল বাতিলের আদেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই নিয়োগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগে সেই সময়ের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়সহ তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা এখনো কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট প্রথম ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই রায়কে অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে তারা সেই আদেশের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান এসএসসি।
সেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এখন তো এখানকার বিচারালয় বিজেপির বিচারালয় হয়ে গেছে। দিল্লির বিজেপির দপ্তরের নির্দেশে বিচারক নিয়োগ হয়। বিচার হয়। আমরা আজকের রায়কে অবৈধ মনে করি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।’
মমতা আরও বলেন, ‘ওরা জেলে পাঠাবে, আমি তৈরি। আমি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি। আমি চাকরিহারাদের পাশে আছি। আমার যত দূর যেতে হয় যাব। আমি তৈরি।’
সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার পর সেই মামলার শুনানি শেষ হয় গত ১০ ফেব্রুয়ারি। যদিও এই নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোট সংশয় প্রকাশ করে বলছিলেন, ওই নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর হেফাজত থেকে ৫০ কোটি নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছিল।
সেদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, ‘আমরা প্রকৃত চাকরিহারাদের পাশে আছি। তাদের আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’
অবশ্য এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেছিলেন, ‘আগে অবৈধভাবে যাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল, আমরা সিবিআইয়ের তদন্তের পর তাঁদের একটি তালিকা পাই। সেই তালিকায় অবৈধ চাকরিপ্রাপ্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার। অথচ চাকরি গেল যোগ্য প্রার্থীসহ ২৫ হাজার ৭৫২ জনের। তাই, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করছি।’
এই প্রসঙ্গে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন সেদিন এসএসসি ভাগ করে হাইকোর্টে জানাননি, কত চাকরি অবৈধভাবে হয়েছে? কেন সব বৈধ ও অবৈধ চাকরিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এক তালিকায় রাখা হলো? কে দায়ী? বিরোধীরা আরও দাবি তুলেছে, এই দুর্নীতির জন্য দায়ী রাজ্য সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অবৈধ চাকরিপ্রার্থীদের বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের নাম এক কাতারে রেখেছেন। এর দায় নিয়ে মমতাকে ইস্তফা দেওয়ার দাবি তুলেছে বিরোধীরা।
তবে একজন ক্যানসারে আক্রান্ত প্রার্থী সোমা দাসের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেননি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট।
সেদিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত হওয়া কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শাব্বর রশিদির সমন্বয়ে গড়া ডিভিশন বেঞ্চ চাকরিতে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের ১১২টি মামলার একত্রে শুনানি শেষে ওই রায় ঘোষণা করেন।
রাজ্য সরকার ২০১৬ সালে এসএসসির মাধ্যমে ৩০ লাখ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রার্থীকে চাকরি দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট এসব প্রার্থীর চাকরি বাতিলের পাশাপাশি এই রায়ও দেন যে, আগামী ৩ মাসের মধ্যে এই চাকরিহারাদের আবার চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সঙ্গে নতুন করে চাকরির প্রক্রিয়া শুরু করারও নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।
অভিযোগ উঠেছিল, রাজ্য সরকার ঘুষের বিনিময়ে ও প্রার্থীদের উত্তরপত্র বা ওএমআর সিট জাল করে চারটি স্তরে চাকরি দেয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং গ্রুপ ‘সি’ ও ‘ডি’ শ্রেণিভুক্ত প্রার্থীদের। সাদা খাতা জমা দিয়েও অনেকে চাকরি পেয়ে যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র র জ য সরক র ব চ রপত র চ কর এই র য়
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি: ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এসএসসি উত্তীর্ণদের সুযোগ
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে চার বছর মেয়াদি বিভিন্ন ডিপ্লোমা শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমের সময়সূচি ঘোষণা করেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় সরকারি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটগুলোতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ, ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি, ডিপ্লোমা ইন লাইভস্টক এবং ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাক্রমে ভর্তিতে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। আবেদনের এ প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামীকাল বুধবার (৩০ জুলাই) থেকে। আবেদনপ্রক্রিয়া চলবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৯ আগস্ট (শুক্রবার) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুননটর ডেম কলেজ: একাদশে ভর্তিতে যোগ্যতার শর্ত প্রকাশ, ও লেভেল শিক্ষার্থীদের আবেদন নয়, আসন ৩২৯০টি২৬ জুলাই ২০২৫ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বরে। একই দিনে শুরু হবে প্রথম পর্যায়ের নিশ্চয়ন কার্যক্রম, যা চলবে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর প্রথম পর্যায়ের মাইগ্রেশন ও অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের নিশ্চয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের নিশ্চয়নপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা। তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভর্তি কার্যক্রম চলবে ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বরে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ছে১৫ ঘণ্টা আগেপরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। শূন্য আসনের ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে তৃতীয় পর্যায়ের ফলাফল। তৃতীয় পর্যায়ের ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এবং ভর্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে শেষ হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।
ভর্তিসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ও নির্দেশিকা পাওয়া যাবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, টেকনিক্যাল এডুকেশন অধিদপ্তর এবং বিটিইবির ওয়েবসাইটে
আরও পড়ুনঅষ্টম শ্রেণিতে আবারও বৃত্তি পরীক্ষা ফিরছে, আছে প্রশ্নও২৮ জুলাই ২০২৫