মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি এক্স ভারতে সম্প্রতি তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট গ্রোক উদ্বোধন করে। এর পরই দেশটিতে শুরু হয় বিতর্কের সুনামি। গ্রোককে নানা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন ভারতীয়রা। দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থি সংগঠন আরএসএসের ভূমিকা কী ছিল– এমন প্রশ্নে গ্রোক জানায়, তেমন কোনো ভূমিকাই তাদের ছিল না। সোনিয়া গান্ধী বার ডান্সার ছিলেন কিনা– প্রশ্নে গ্রোক জানায়, তিনি বার এটেন্ডেন্স হিসেবে কাজ করেছেন, ডান্সার ছিলেন না।

গ্রোকের এসব জবাবে অনেকেই বলছেন, এটি বেশ স্বচ্ছভাবে ঐতিহাসিক সত্যগুলোকে তুলে ধরছে। গ্রোক যা বলছে, সেগুলো ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে অনেকে ক্ষেত্রে সত্য হলেও ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তাদের আশাপাশে থাকা কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, ইলন মাস্কের এআই চ্যাটবট তো কংগ্রেস সমর্থক। এআই চ্যাটবট কি আসলেই নিরপেক্ষ মতামত দেয়? এর ওপর কি আস্থা রাখা যায়? 

নতুন এক গবেষণা বলছে, সব সময় এআইর ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখা সম্ভব নয়। কারণ, এআইও অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আমাদের মতো ভুলের ফাঁদে পড়ে। এটি ঝুঁকি এড়াতে পছন্দ করে। বিশেষ করে পুরোপুরি যৌক্তিক নয়, এমন বিষয়ে এটি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে পারে।

বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা ওপেন এআইর তৈরি চ্যাটজিপিটির মতো জনপ্রিয় চ্যাটবট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। প্রাপ্ত ফলে দেখা গেছে, গণিত ও যৌক্তির বিষয় যখন আসে, তখন এআই ভালো পারফর্ম করছে।  

সাধারণত দ্রুত সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ভুল করে মানব মস্তিষ্ক। এ ছাড়া সবকিছু সাধারণ করে বিবেচনা করার বিষয় তো আছেই। ধরুন, কোনো কিছু থেকে আপনার মস্তিষ্ক একটা বাজে অভিজ্ঞতা পেয়েছে, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অন্য কিছুতেও আপনি ভয় পাবেন। মানে হলো, জঙ্গলে গিয়ে সাপের মুখে পড়লে, আরেকটি জঙ্গলে ঢুকে একই ভয়ই আপনি পাবেন। মানব মস্তিষ্ক এভাবে কাজ করে। আমাদের বিচার তৈরি হয় মূলত পরিবেশ, পরিবার, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। সময়ের বিবর্তনে আমরা ক্রমাগতই মানুষ, পরিস্থিতি ও তথ্য সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলাতে থাকি। 

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, চ্যাটজিপিটি মানুষের মতোই নানা বিষয়ে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক পরীক্ষায় ভুল করছে। এটাও অতি আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে। সেই সঙ্গে জটিলতা এড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণও দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই গণিতভিত্তিক সমস্যার সমাধানে ভালো ফল করছে। তবে কোনো কিছু বিচার বা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কখনও বিভ্রান্ত হচ্ছে। 

কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ইয়াং চেন বলেন, যেহেতু এআই মানুষের সরবরাহ করা তথ্য থেকে শেখে, তাই এটা চিন্তাও করে মানুষের মতো। সেখানে পক্ষপাতিত্ব বা অন্যান্য বিষয় থাকে। সূত্র: আর্থ ডটকম। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এআই ক ত র ম ব দ ধ মত ত চ য টবট

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ