যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা শুল্ক আরোপ ঘোষণার পর থেকেই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকেই ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঘটছে। দেশের পুঁজিবাজারে মার্কিন শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। তাই এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

গত ২ এপ্রিল (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ঈদের ছুটির কারণে লেনদেন বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এতদিন শুল্ক আরোপের ধাক্কা লাগেনি। রবিবার (৬ এপ্রিল) ঈদের ছুটি শেষে দেশের উভয় পুঁজিবাজার খুলছে। তবে লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টায় বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রির চাপ লক্ষ্য করা গেছে। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সূচকে পতনমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

তবে এরপর থেকেই সূচকের নেতিবাচক প্রবণতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। দিনের লেনদেনের শেষে সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছে পুঁজিবাজার।

আরো পড়ুন:

যেসব অভিযোগে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএসইসি

ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি, জড়িতদের ৫৩.

২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের কিছু নেই। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই পুঁজিবাজারে নেই। আর পুঁজিবাজারে যেসব তালিকাভুক্ত রয়েছে সেগুলোর ইউরোপে বড় বাজার রয়েছে। তবে যেসব কোম্পানি ডেনিম পণ্য রপ্তানি করে সেগুলোর বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়। সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তাই এ ধরনের ঘোষণার প্রভাব খুব বেশি পড়ার সুযোগ নেই। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হলে খুব দ্রুত এ শঙ্কা মুক্ত হওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশের ওপর চলমান শুল্কহার গড়ে ১৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে নতুন আরোপ করা ৩৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর প্রায় ৫২ শতাংশ শুল্ক বসবে। দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে বস্ত্র খাতের ৫৮টি ও চামড়া খাতের ৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের মোট বাজার মূলধনের ৩.৪০ শতাংশ বস্ত্র এবং ০.৬০ শতাংশ চামড়া খাতের দখলে রয়েছে। সব মিলিয়ে এ দুই খাতের দখলে রয়েছে মোট বাজার মূলধনের ৪ শতাংশ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ ঘোষণার প্রভাব খুব বেশি পড়ার সুযোগ নেই। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার যে পর্যায়ে রয়েছে, এর চেয়ে খুব বেশি নিম্নমুখী হওয়ার সুযোগ দেখছি না। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়া জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”

রবিবার সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না। এটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভালো কিছু হবে বলে আশাবাদী।”

বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মুখপাত্র মো. নুরুল ইসলাম মানিক বলেন, “মার্কিন নতুন রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ নীতির অংশ হিসেবে শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর অনেক দেশের পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। আমাদের পুঁজিবাজার সেই শঙ্কার বাইরে নয়। তবে আমাদের পুঁজিবাজার বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তাই এরচেয়ে খুব বেশি নিচে নামার সুযোগ কম। আশা করছি শিগগিরই এ শঙ্কা থেকে মুক্ত হবে দেশের পুঁজিবাজার।”

পুঁজিবাজার পরিস্থিতি
৯ দিন ছুটি শেষে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বাড়ালেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কমেছে। এদিন ডিএসইতে আগের কার্যদিবসের চেয়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। তবে ডিএসই ও সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৩.৯৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২০৫ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.২৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৪.৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১০১টি কোম্পানির, কমেছে ২৬২টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩০টির।

এদিন ডিএসইতে মোট ৪১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩১৫ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১১.৬২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮৫৪ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯.৪১ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৫৬০ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২.৭৪ পয়েন্ট বেড়ে ৯৪৪ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৮৭.৬২ পয়েন্ট বেড়েছে ১২ হাজার ১১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ১৭৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৬৯টি কোম্পানির, কমেছে ৮৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৬টির।

সিএসইতে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স এসই ড এসই ল খ ট ক র শ য় র ও ইউন ট ন শ ল ক আর শ ল ক আর প আতঙ ক ত ন স এসইত ড এসই স এসই

এছাড়াও পড়ুন:

৫ বছর মেয়াদের নতুন ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু

দেশের পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যু করা নতুন ৫ বছর মেয়াদের ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে উভয় পুঁজিবাজারে ট্রেজারি বন্ডটির লেনদেন শুরু হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

তথ্য মতে, নতুন বন্ডটির নাম হলো- ‘‘05Y BGTB 10/09/2030’’। ডিএসইতে বন্ডটির লেনদেন কোড- ''TB5Y0930'' এবং ডিএসইতে স্ক্রিপ্ট কোড- "88545"। একই ভাবে সিএসইতে বন্ডটির লেনদেন কোড- 'TB5Y0930'' এবং সিএসইতে ট্রেডিং আইডি- "50311"।

তথ্য মতে, ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ডিএসই ও সিএসই’র ডেবট বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বন্ডটির মেয়াদ আগামী ২০৩০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। বন্ডটির প্রতি ইউনিটের মূল্য ১০০.১১৭৪ টাকা এবং অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। বন্ডের মার্কেট লট ১০০০টি করে। এই বন্ড ১০.০৩ শতাংশ হারে বছরে ২ বার কুপন প্রদান করবে।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, বেড়েছে লেনদেন
  • পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান, কমেছে লেনদেন
  • ৫ বছর মেয়াদের নতুন ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু