মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৪২৪ কোটি ডলারের পণ্য
Published: 7th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ থেকে গত মার্চ মাসে ৪২৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যা ৫১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতি মাসের শুরুতে পণ্য রপ্তানি আয়ের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে থাকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। কিন্তু সংস্থাটি গতকাল রোববার পর্যন্ত গত মাসের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৮১ কোটি ২২ লাখ ডলারের পণ্য। আর এনবিআরের হিসাবে, গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪২৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি। সেই হিসাবে গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এবার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সাধারণত ঈদের ছুটির আগে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। ঈদে ৭ থেকে ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটি থাকে। ফলে ছুটির মধ্যে ও তার পরপর যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য জাহাজীকরণের বাধ্যবাধকতা থাকে, সেগুলো ছুটির আগেই শেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঈদের ছুটি শেষে কারখানাগুলো যখন খুলছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাল্টা শুল্ক নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যাঁরা পণ্য রপ্তানি করেন, তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন। প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর এই শুল্কের হার ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ; যদিও চীনকে দিতে হবে ৩৪ শতাংশ (মোট শুল্ক ৫৪) ও ভিয়েতনামকে দিতে হবে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। আর সেই পোশাক রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরের বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ১৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। পোশাকের পাশাপাশি এই বাজারে যাঁরা জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও হিমায়িত খাদ্য পণ্য রপ্তানি করেন, তাঁরাও উদ্বেগে আছেন।
তৈরি পোশাক, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকেরা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, পাল্টা শুল্কের কারণে ইতিমধ্যে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। বাড়তি শুল্কের ক্ষতি পোষাতে মূল্যছাড় দাবি করছে তারা। আগামী দু-এক দিনে এমন ঘটনা আরও বাড়বে বলেই তাঁদের শঙ্কা।
ইপিবির প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে, অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তাপমাত্রা বেড়ে দেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের দিনমজুর পারভিন আক্তার (৪৭)। তিনি এই বাজারে আলুর একটি আড়তে কাজ করেন। বসে বসে আলু বাছাই করা তাঁর কাজ। প্রতিদিন পান ৬০০ টাকা। সংসারে অসুস্থ স্বামী। তবে তিনি মাঝেমধ্যে রিকশা চালান। স্বামীর আয় নিয়মিত নয়। তাঁদের মেয়ে ও এক ছেলে সঙ্গে থাকে। মেয়েটির আবার দুটি সন্তান আছে। পুরো পরিবারটি পারভিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল।
গত এপ্রিল থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নিজে অন্তত দুই বার এবং মেয়ে ও তাঁর ছেলেটি তিন বার করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পারভিন কাজে গেলে টাকা পান, না গেলে নেই। এভাবে অসুখের কারণে এ বছর ১১ দিন কাজে যেতে পারেননি, স্মরণ করে বলেন পারভিন। কারওয়ানবাজারে কাজের যে পরিবেশ, সেখানে গরমে ঘামতে হয়। কয়েক বছর ধরে গরমটা অসহনীয় বলে মনে হয় তাঁর কাছে।
পারভিন বলছিলেন, ‘ঘাম শরীরে বইসা অসুখ বাধায়। গরম এত বাড়ছে যে কওনের কথা নাই।’
পারভিনের মতো এমন অসংখ্য মানুষের এভাবেই গরমের কারণে কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। এই তো গত বছরেই (২০২৪) ২১ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির নাম ‘অ্যান আনসাস্টেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ।’ এতে ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সঙ্গে আছে ২০২৪ সালে করা একটি বড় জরিপ, যেখানে দুই ধাপে ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশ্ন করা হয়।
১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১°ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এ সময় গরমের অনুভূতি বেড়েছে ৪ দশমিক ৫°ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ সময়ে ঢাকার গরম বেড়েছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার গরম জাতীয় গড়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। এর ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘ কাশি, শ্বাসকষ্ট আর প্রচণ্ড অবসাদ—এসব রোগ বেড়েছে।
অধ্যাপক আবদুস সালাম তাঁর একাধিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে দূষণের সম্পর্ক আছে। তিনি বলছিলেন, বিশেষ করে ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কয়েকটি ক্ষতিকর গ্যাস। এর মধ্যে আছে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই–অক্সাইড ও মিথেন।গরমের প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে। ২০২৪ সালে গরমের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ মিলিয়ন কর্মদিবস (আড়াই কোটি দিন) নষ্ট হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার এবং প্রতিবেদনের সহলেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অতিরিক্ত গরমে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং এর সঙ্গে সরাসরি উৎপাদনশীলতার ক্ষতিও ঘটছে। অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীলতা হারানোর বাস্তব ঝুঁকির মুখে।’
আরও পড়ুনতাপমাত্রা এত বাড়ছে কেন?২১ এপ্রিল ২০২৪প্রখর রোদে ছাতা মাথায় মাঠের মধ্যে ধান শুকাচ্ছেন এক গৃহবধূ। কাইমউদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, নর্থ চ্যানেল, ফরিদপুর