দলিত কংগ্রেস নেতার স্পর্শে ‘অপবিত্র’ মন্দির, গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘পবিত্র’ করলেন বিজেপি নেতা
Published: 8th, April 2025 GMT
ভারতের রাজস্থানে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা জ্ঞানদেব আহুজা। আলওয়ার এলাকার একটি রামমন্দির তিনি পবিত্র করলেন গঙ্গাজল ছিটিয়ে। কেননা, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী নেতা টিকারাম জুলি ওই মন্দিরে ঢুকেছিলেন। বিগ্রহ স্পর্শ করেছিলেন।
টিকারাম জুলি কংগ্রেসের দলিত নেতা। দলিত হওয়া সত্ত্বেও গত রোববার রামনবমী উপলক্ষে তিনি আলওয়ারের রামমন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। স্পর্শ করেছিলেন বিগ্রহকে। ফলে বিগ্রহসহ গোটা মন্দির ‘অপবিত্র’ হয়ে যায়। অপবিত্র মন্দিরকে পবিত্র করতেই জ্ঞানদেব আহুজা মন্দিরে ও বিগ্রহে গঙ্গাজল ছিটিয়েছেন।
বিজেপির এই সাবেক বিধায়ক নিজেই বড় মুখ করে এই কথা জানিয়েছেন। টিকারামের মন্দিরে যাওয়ার খবর শুনে জ্ঞানদেব বলেন, ‘দলিত নেতা টিকারামের লজ্জিত হওয়া দরকার। তিনি হিন্দুত্ব বিরোধীই শুধু নন, সনাতন বিরোধীও। তাঁর অপবিত্র ছোঁয়ায় কলুষিত হয়েছে পবিত্র মন্দির ও বিগ্রহ। মন্দিরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে আমি তা পবিত্র করব।’
কথা রেখেছেন আলওয়ারের রামগড় কেন্দ্রের এই সাবেক বিজেপি বিধায়ক। গত সোমবার তিনি সদলে ওই মন্দিরে যান। গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘পবিত্র’ করেন মন্দির ও বিগ্রহ। কংগ্রেস নেতা টিকারামকে তিনি ‘পাপী’ বলে সম্বোধন করেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়েছে, বিজেপি নেতা জ্ঞানদেব আহুজা কংগ্রেসের দলিত নেতা টিকারামের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে চাননি। তাঁর কথায়, ওই পাপীর নাম নিলে আমার মুখ অপবিত্র হবে। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবে পাই না, এই ধরনের অপবিত্রদের কেন মন্দিরে আহ্বান জানানো হয়।’
রাজ্যে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক কাজিয়া।
কংগ্রেস নেতা টিকারাম জুলি গণমাধ্যমে বলেন, ‘দলিতদের বিষয়ে বিজেপির মনোভাব কেমন, আহুজার এই আচরণই তার প্রমাণ। ওই দল দলিতদের এখনো অস্পৃশ্য মনে করে। তাই মন্দিরে গঙ্গাজল ছিটায়। এই আচরণ ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে আক্রমণই শুধু নয়, অস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক ব্যাধিও ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ মারাত্মক অপরাধ।’
টিকারাম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি মদন রাঠোরকে এ ঘটনার জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে, বিজেপি এই দলিতবিরোধী মনোভাব অনুমোদন করে কি না।
বিজেপি নেতার ওই আচরণের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার গোটা রাজ্যে কংগ্রেস প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে।
রাজ্যের সাবেক কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসরাসহ দলীয় নেতারা প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। গেহলট বলেন, ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপি যে দলগতভাবে দলিতবিরোধী, আহুজার এই আচরণই তার প্রমাণ। সেই কারণে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো নীরব। আহুজার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তাই নেওয়া হয়নি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দোতাসরা বলেন, বিজেপির হৃদয়ে যে দলিতদের প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই, এই ঘটনা ও তাদের নেতৃত্বের নীরবতা তার প্রমাণ। শুধু দলিতদেরই নয়, বিজেপি ঘৃণা করে কৃষকদের, নারীদের, শ্রমিকদেরও। বোঝা যায় না, তাদের মনে কেন এত ঘৃণা জমা রয়েছে।
এই ঘটনার নিন্দা না করলেও বিজেপি দলগতভাবে তাদের এ ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে। দলের মুখপাত্র লক্ষ্মীকান্ত ভরদ্বাজ গণমাধ্যমকে বলেন, আহুজা যা করেছেন, তার দায় তাঁর। দল এ জন্য দায়ী নয়। বিজেপি অস্পৃশ্যতায় বিশ্বাস করে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ঞ নদ ব অপব ত র মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫