আরও শুল্কের হুমকি ট্রাম্পের শেষ দেখতে চায় চীনও
Published: 9th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি চীনকে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে চীনের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে ঘাবড়ে যায়নি বেইজিং। চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বে; কিন্তু আকাশ ভেঙে পড়বে না। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শেষ দেখতে চায় তারা এবং ওয়াশিংটনের এই ‘ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ’ কখনোই মেনে নেবে না বেইজিং।
ট্রাম্পের হুমকিকে ‘ভুলের ওপর ভুল’ আখ্যায়িত করে চীন জানিয়েছে, শুল্ক আরোপের এই পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার মতপার্থক্যের সমাধান করা হোক। গত সোমবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে বলেন, শুল্ক স্থগিত করার ব্যাপারে তিনি ভাবছেন না। এমনকি এ নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দর কষাকষি করতেও আপাতত ইচ্ছুক নন তিনি। এ সময় দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হতে পারে– এমন খবরকে গুজব উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসছে, আর এগুলো হবে ন্যায্য চুক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, কিছু শুল্ক স্থায়ী হতে পারে, আবার কিছু কিছু নিয়ে আলোচনা সম্ভব। আমরা চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ন্যায্য ও ভালো মানের চুক্তি করার ব্যাপারে আলোচনা করব। আমেরিকা ফার্স্টনীতি বাস্তবায়নের এখনই সময়।
মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট বলেছেন, শুল্ক আলোচনা টেবিলে আছে। ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে আলোচনায় জড়িত থাকবেন। তিনি স্বীকার করেন, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় সুবিধা রয়েছে। তাঁর দাবি, চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা রপ্তানি করে, তার এক-পঞ্চমাংশ আমরা তাদের কাছে রপ্তানি করি, তাই এটি তাদের জন্য ক্ষতিকর।
ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে চীনের ওপর ওই বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। গত শুক্রবার চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। গত মার্চে চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করাই ছিল। ফলে হুমকির ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে চীনা পণ্যে শুল্ক দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশ, যা দেশটির জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
হেনরিখ ফাউন্ডেশনের ডেবোরা এলমস মনে করেন, ‘মার্কিন শুল্ক আরোপের ঘটনা বিশ্বায়নের সমাপ্তি ঘটাতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা বাণিজ্য বন্ধ করে দেব। উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যকলাপের পুনর্বিন্যাসের ফলে অস্থিরতা দেখা দেবে, যা সরকারগুলোকে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলবে।’
শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন মাস্কের
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন বলছে, প্রযুক্তি ধনকুবের ইলন মাস্ক সরাসরি ট্রাম্পের কাছে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে একটি ‘শূন্য শুল্ক’ ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছেন। এমনকি হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের এটিই প্রথম দ্বিমত নয়। ২০২০ সালে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মাস্ক। এ ঘটনা ট্রাম্পবিরোধীদের জন্য সমালোচনার বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।
বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ফিরল স্বস্তি
বিশ্বের অন্যান্য দেশের শেয়ার সূচকের মতো সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে প্রায় দুই হাজার পয়েন্ট পড়ে যায় মার্কিন বাজারের সূচক। ফলে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সেদিন লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজে শুরু হয় চরম অস্থিরতা। প্রথমেই ১ হাজার ৭০০ পয়েন্ট নেমে যায় এই সূচক। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ৮০০ পয়েন্ট লাফিয়ে ওঠে সেটি। এর পর আবার ৪১৪ পয়েন্ট নেমে যায় ওই শেয়ারের লেখচিত্র। এসঅ্যান্ডপি ৫০০-তে লেনেদেন ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। নাসডাক কম্পোজিটে বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ধাক্কা কাটিয়ে মঙ্গলবার সকালে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সোমবার ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন হয়েছিল ভারতের শেয়ার সূচক সেনসেক্স ও নিফটির। সেই দুই সূচক বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সকালে সেনসেক্স বেড়েছে ১ হাজার ২০৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ; নিফটি বেড়েছে ৩৬৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গতকাল সকালে জাপানের নিক্কিই এশিয়া সূচক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকের উত্থান হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। চীনের মূল ভূখণ্ডের ব্লি চিপস সূচকের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে ইইউর দেশগুলো
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় এবার পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপের ২৭টি দেশের এই জোট মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার লুক্সেমবার্গে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে ইইউ নেতারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন। আগামী ১৬ মে থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর ইইউর এই নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হতে পারে। ট্রাম্প ইইউভুক্ত দেশগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন।
ইইউর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিনের শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। তিনি বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে আমরা শুল্কযুদ্ধ চালিয়ে যাব। যুক্তরাষ্ট্রে পরিকল্পিত বিনিয়োগ স্থগিত করতে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র শ শ ল ক আর প চ ন র ওপর ইউর প র র জন য কর ছ ন স মব র বল ছ ন দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
পুতিন এমন কিছু চান, যা তিনি কখনোই পাবেন না
ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই বলেছেন, তিনি কোনো সাধারণ নেতা নন, সিংহাসনে আসীন একজন আইনজ্ঞ শাসক। শুরু থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের পরিচিতির অংশ হিসেবে একসময় যে তিনি আইনশাস্ত্র পড়েছেন, সেটা ভুলে যাননি। গত মে মাসে একদল ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি তাঁদের বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তো আমি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী।’ সেই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, একটি শান্তিচুক্তি হলে পশ্চিমা প্রতিযোগীরা রাশিয়ায় ফিরে আসতে পারে। এর উত্তরে পুতিন আরও বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে চুক্তিপত্রটি দেন, তাহলে আমি উল্টেপাল্টে দেখে বলে দেব কী করতে হবে।’
আমরা সাধারণত স্বৈরাচার মানেই এমন একজনকে ভেবে নিই, যিনি আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না। এটা একদম সত্যি। কিন্তু পুতিনের মতো একজন একনায়কের কাছে আইনের লঙ্ঘনের চেয়ে বরং আইনের দোহাই দেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো থেকে নির্দেশ মেনে চলতে চলতে প্রেসিডেন্টের আসন পর্যন্ত পৌঁছেছেন।
আজকের রাশিয়ায় রাজনৈতিক দমন-পীড়নের প্রতিটি নতুন ঢেউয়ের আগে নতুন কোনো আইন পাস হয় অথবা পুরোনো আইনে সংশোধন আনা হয়, যাতে আইন লঙ্ঘন না করেই আরও বেশি মানুষকে ‘আইনের আওতায়’ শাস্তি দেওয়া যায়।
একজন ব্যক্তির ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আইনি ব্যবস্থাকে সীমাহীনভাবে ব্যবহার করে যাওয়ার ব্যাপারটা ঘটনাক্রমে একটি উচ্চতর বৈধতার দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে পুতিনের সমগ্র রাজনৈতিক জীবনই কেটেছে এমন একটি বৈধতার উৎস খুঁজতে খুঁজতে, যেটা আইনের চেয়েও গভীর। নিজের কর্তৃত্ব প্রমাণের এটা একটা ব্যক্তিগত বাতিক। এটা বিজয়ের বাসনার মতোই একটি ব্যাপার। এটাই ইউক্রেন যুদ্ধে তাকে চালিত করেছে। এ যুদ্ধের লক্ষ্য হলো সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে রাশিয়াকে আবার বিশ্বশক্তির অভিজাত ক্লাবে ফেরত নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এ প্রত্যাবর্তন পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি ছাড়া অসম্ভব। আর দিন দিন এ ধারণা পরিষ্কার হচ্ছে যে পুতিন সেই স্বীকৃতি হয়তো আর কখনোই পাবেন না।
পুতিনের রাজত্ব শুরুর বছরগুলোতে একটি কৌশল কাজ করেছিল। তিনি পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নিতেন। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে তিনি যখন আবার প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তখন দেশজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবাদ শুরু হয়। তখন থেকেই তিনি বিধ্বংসী পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে তথাকথিত রুশ ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ রক্ষার লড়াই শুরু করেন।
এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের অর্থ ছিল সরাসরি পশ্চিমের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া, যার পরীক্ষাক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইউক্রেন। ক্রিমিয়া দখলকে পুতিন একটি ঐতিহাসিক অবিচারের ‘সংশোধন’ বলে তুলে ধরেছিলেন। এর পরপরই পূর্ব ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু করেন। এটিকে তিনি চমকপ্রদ বিদ্যুৎ গতির আক্রমণ মনে করেছিলেন। এটা তার পশ্চিমাদের প্রতি বৈরিতাপূর্ণ নীতির চূড়ান্ত রূপ।
পুতিন এখন সেই একই দ্বিধার পড়েছেন। যতটা সম্ভব ভূখণ্ড দখল করে নেওয়া এবং দখল করা অঞ্চলের ওপর বৈধতা প্রতিষ্ঠা—এই দুয়ের মধ্যে কোন পথটি তিনি বেছে নেবেন। স্তালিনও একসময় দ্বিধায় থেকে শেষ পর্যন্ত যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, পুতিনও সম্ভবত সেই পথেই হাঁটবেন।এসব প্রচেষ্টা রাশিয়ার ভেতরে পুতিনের সমর্থন জয় করে নেওয়ার জন্য চোখে পড়ার মতো সফল ছিল। তবে একই সঙ্গে এগুলো রাশিয়া ও পশ্চিমের সম্পর্ক ভাঙার নয়; বরং তা নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টাও ছিল। এমনকি ক্রিমিয়া দখল ও পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাতের পরও ক্রেমলিন আলোচনার পথ অনুসরণ করে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মিনস্ক চুক্তি। এর লক্ষ্য ছিল কূটনৈতিক একঘরে অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে নিজের আসন পুনরুদ্ধার করা। সেই প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয় এবং পুতিন আরও ঝুঁকি বাড়ানোর পথ বেছে নেন। এখন ক্রেমলিন কিছু মাত্রায় নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত।
সব অনমনীয় কথাবার্তার পরও ক্রেমলিন এরই মধ্যে কিছু চরম অবস্থান থেকে সরে এসেছে। মার্চ মাসে পুতিন ইউক্রেনকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রদান কিংবা যেকোনো আলোচনা শুরুর পূর্বশর্ত হিসেবে ইউক্রেনের নির্বাচন দেওয়ার মতো ধারণাগুলো নিয়ে এসেছিলেন। মস্কো এখন আর জোর দিয়ে বলছে না যে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা অর্থহীন এবং যেকোনো প্রকৃত চুক্তির আগে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা নিষিদ্ধকারী আইন বাতিলের জন্য ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি তোলা হয়েছিল, সেখান থেকেও রাশিয়া নীরবে সরে এসেছে।
নিশ্চয়ই এ নতুন নমনীয়তারও একটা সীমা আছে। মস্কো এর মূল দাবিগুলো এখনো পরিত্যাগ করেনি। কারণ, গত তিন বছরে রাশিয়া এক যুদ্ধরত দেশে পরিণত হয়েছে। শত্রু হয়ে উঠেছে একপ্রকার পৌরাণিক শয়তান, সেনারা এখন নায়ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বেশি মানুষ আর কোনো যুদ্ধে নিহত বা আহত হননি। যুদ্ধ-অর্থনীতি সচল হয়ে উঠেছে; ভিন্নমত গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পুতিন নিজেও এখন প্রায়ই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ না বলে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। যুদ্ধ যত দীর্ঘ ও বিস্তৃত হয়, এর ফলাফল ততই বিশ্বাসযোগ্য ও জোরালো হতে হয়।
এখানেই আসে দর-কষাকষির বিষয়টি। ক্রেমলিন স্পষ্টতই দর–কষাকষির বিষয়টাকে এমন একটা হিসেবে দেখছে, যেন সেখানে তারা একটি বিজয় দাবি করতে পারে, যেটা তারা যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জন করতে পারেনি। রাশিয়া কেন ইউক্রেনকে এমন সব এলাকা থেকেও সরে যাওয়ার দাবি তুলেছে, যেগুলোর ওপর দেশটির নিয়ন্ত্রণই নেই—এর ব্যাখ্যা এখান থেকে পাওয়া যায়। পুতিনের কাছে বিজয় মানে শুধু ভূখণ্ড দখল নয়। তাঁর কাছে বিজয় মানে, শর্ত চাপিয়ে দেওয়া, নতুন করে সীমান্ত আঁকা এবং সেই নতুন বাস্তবতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়। এভাবেই পুতিন তাঁর কাঙ্ক্ষিত বৈধতা নিশ্চিত করতে পারেন।
পুতিনের এ অবস্থান বুঝতে পারাটা মোটেই কঠিন নয়। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা পুতিনের প্রতি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরাও মনে করেন যে পুতিন অনেক বেশি দাবি করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে। শান্তির জন্য তাঁর ৫০ দিনের সময়সীমা এখন কমে এসে ‘১০ বা ১২ দিনে’ দাঁড়িয়েছে, যা তাঁর ধৈর্য ফুরিয়ে আসারই প্রমাণ। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধক্লান্তির লক্ষণ ও বেদনাদায়ক আপসের বিষয়টি বিবেচনা করা সত্ত্বেও এটা বিশ্বাস করার এমন কোনো কারণ নেই যে মস্কোর চূড়ান্ত শর্ত মেনে নেবে। এমনকি এর কিছু অংশে যদি ওয়াশিংটন সমর্থন দেয়, তারপরও সেটা নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে।