‘মুসলিম রব তোলা বিজেপিতে নেই একজনও মুসলমান এমপি’
Published: 9th, April 2025 GMT
ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল নিয়ে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানদের বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিদিন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করছেন। ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাসের জন্য দেশটির অনেক সচেতন নাগরিকও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ভারতে ক্ষমতাসীন এমন দল মুসলিম মুসলিম রব তুলে ওয়াক্ফ বিল সংশোধন করেছে, যাদের দলে একজনও মুসলমান এমপি নেই।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি সাগরিকা ঘোষ এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লেখেন, আত্মবিভ্রান্তিতে ভোগা বিজেপি নিজেদের বিশ্বাস করিয়েছে যে, মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং এই সম্প্রদায়ের কিছু অংশকে নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ের মধ্যে ঠেলে দেওয়া তাদের নিজেদের জন্যই ভালো। ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল ২০২৫ নিয়ে পার্লামেন্টে সাম্প্রতিক বিতর্কের সময় ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা হঠাৎ জোরেশোরে দাবি করেছেন, তাদের হৃদয়ে দরিদ্র মুসলমানদের জন্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অথচ এটা যেন ছিল বিদ্রুপের চেয়েও বড় বিদ্রুপ। কারণ বিজেপি এমন একটি দল, যাদের কোনো মুসলমান লোকসভা সাংসদ নেই এবং তারা কখনও কোনো মুসলিম নারীকে মূলধারার রাজনীতিতে উৎসাহিত করেনি।
এমনকি বিজেপি নির্বাচনী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও মুসলিমদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব দেয় না। দলটির কোনো উচ্চ পদেও নাম নেই কোনো মুসলিম নেতার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য ‘হিন্দুত্বের পরীক্ষাগার’খ্যাত গুজরাটে গত দুই দশক ধরে কোনো মুসলিম নেতাকে বিধানসভার টিকিট দেওয়া হয়নি।
১৯৯৮ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে একজন মুসলিম নেতা নির্বাচনের টিকিট পেয়েছিলেন। ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলটি পার্লামেন্টে জোর করে পাস করানোর পরও দলটি সাহস করে দাবি করছে, তারা মুসলমানদের কল্যাণের জন্য কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, বিজেপির দাবি ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলটি ভারতের মুসলমানদের কল্যাণের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ কল্পকাহিনি এবং ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। বিলটির আসল উদ্দেশ্য হিন্দুত্ববাদী ভোটব্যাংককে উৎসাহিত করা। সেই সঙ্গে দলটির অধস্তন এই বার্তা পাঠানো যে, মুসলমানদের আবার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কারণ মুসলমানদের ওপর সরকারের এই নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে নিঃসন্দেহে হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ঝড় বইবে। তাদের ধারণা, অতীতের ‘দুর্বল’ সরকারগুলো, যারা মুসলমানদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করেছিল, তাদের এ বিল দিয়ে পর্যুদস্ত করা গেছে। এ ছাড়া বিজেপির গেরুয়া সেনাদের কাছেও এমন আনন্দের ইঙ্গিত পাঠায় যে, সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কিনা, তা আর গুরুত্বপূর্ণ নয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদির তীব্র সমালোচনা করে সাগরিকা বলেন, মোদি সরকার নাগরিকদের সার্বভৌমত্ব সম্মান করে না। ওয়াক্ফ বিল ব্যক্তির ধর্ম পালনের অধিকার এবং সংবিধানের ২৫-২৮ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করা নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ধ্বংস করেছে।
এদিকে ওয়াক্ফ বিল পাসের ধারাবাহিকতায় ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সহিংসতা অব্যাহত আছে। পাঞ্জাবের জলন্ধরে গত সোমবার গভীর রাতে বিজেপি নেতা মনোরঞ্জন কালিয়ার বাড়িতে কে বা কারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এর আগে গত ৬ এপ্রিল মণিপুর রাজ্যে ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল সমর্থন করার অভিযোগে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আসকার আলীর বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ গোপনভাবে ১০টি চুক্তি করে দেশকে পরাধীন করেছিল: রেজাউল করীম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ গোপনভাবে ১০টি চুক্তি করে দেশকে পরাধীন জাতিতে পরিণত করেছিল। আওয়ামী লীগ দেশের জন্য রাজনীতি না করে ভারতের তাবেদারি করেছে।”
তিনি বলেন, “সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না। জবাবদিহিমূলক সরকার কায়েম হবে। একটি সুন্দর দেশ গঠন হবে।”
বুধবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নড়াইল পুরাতন বাস টার্মিনাল মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করীম বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রতিটি ভোটের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সব দল-মতের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার তৈরি হবে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে বাক্সে ঢুকিয়ে বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতায় আসীন ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত পতিত ফ্যাসিস্টদের হাতে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেওয়ার পায়তারা করে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।”
রেজাউল করীম বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বক্তব্য এবং মন্তব্যে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর। কারণ কোনো অবস্থাতেই পতিত ফ্যাসিবাদকে এদেশে সুযোগ করে দেওয়া যাবে না।”
চরমোনাই পীর সমাবেশ শেষে নড়াইলের দুইটি আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাত পাখা প্রতীকের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন- নড়াইল-১ (কালিয়া-সদর উপজেলার আংশিক) আসনে মাওলানা আব্দুল আজিজ এবং নড়াইল-২ আসনে (লোহাগড়া-নড়াইল সদরের আংশিক) অধ্যক্ষ মাওলানা তাজুল ইসলাম।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নড়াইল জেলার সভাপতি মাওলানা খায়রুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- দলের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আওয়াল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নড়াইল জেলা আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগরীর নেতা মাওলানা জান্নাতুল ইসলাম, নড়াইল জেলা সেক্রেটারি এসএম নাসির উদ্দিন।
ঢাকা/শরিফুল/মাসুদ