বগুড়া শহরের বাড়িতে একাই থাকতেন আসিফ আহমেদের (২০) বাবা রফিকুল ইসলাম। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মুঠোফোনে তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, তাঁর প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হবে ১৩ জুলাই; এরপর ঢাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় যাবেন। সেখানে তাঁর বাবাকেও আসতে বলেন। তবে আসিফের সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি; কফিনে মোড়ানো লাশ হয়ে ফিরেছেন বাড়িতে। ছেলের এই অকালমৃত্যুতে শোকে পাগলপ্রায় অবস্থা রফিকুল ইসলামের।

আসিফ আহমেদের বাড়ি বগুড়া শহরের নারুলি দক্ষিণপাড়া এলাকায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে নেমে আসিফসহ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র ভেসে যান। পরে গতকাল বুধবার সকালে কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে আসিফের লাশ ভেসে ওঠে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়ায় আসিফের লাশ দাফনের আগে রফিকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ঢাকায় এসো বলে আসিফ নিজেই এল লাশ হয়ে। এ শোক সইব কীভাবে?’

আরও পড়ুনকক্সবাজার সাগরে গোসল করতে নেমে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিখোঁজ ২০৮ জুলাই ২০২৫

রফিকুল ইসলাম গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দুই বছর আগে স্ত্রী মারা গেছেন। তাঁদের দুই ছেলের মধ্যে আসিফ ছোট। রফিকুল বলেন, পরিবারের সবার চোখের মণি ছিলেন আসিফ। তাঁকে (রফিকুলকে) ঢাকায় বড় ছেলের বাসায় যেতে বলে নিজেই (আসিফ) চলে গেলেন মায়ের কাছে। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এর চেয়ে কষ্টদায়ক কিছু নেই।

ছেলে হারানোর শোক কিছুতেই ভুলতে পারছেন না রফিকুল ইসলাম। বারবার তাঁর স্মৃতি মনে করছিলেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘আমাকে না বলেই বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে গিয়েছিল। আমাকে যেতে হয়নি। নিজেই ফিরেছে, কফিনে মোড়ানো নিথর লাশ হয়ে।’

আরও পড়ুনএক দিন পর ভেসে এল আরেক শিক্ষার্থীর লাশ, নিখোঁজ ১০৯ জুলাই ২০২৫

আসিফ বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং বগুড়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসিফ ও তাঁর সহপাঠীদের প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষা গত সোমবার শেষ হয়। পরীক্ষা শেষে বিকেলে আসিফসহ পাঁচজন কক্সবাজারে বেড়াতে যান। এর মধ্যে তিনজন গত মঙ্গলবার সকালে হিমছড়ি সৈকত এলাকায় সাগরে গোসল করতে নেমে ভেসে যান। পরে তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়। আজ সকালে দুই দফা জানাজা শেষে গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে আসিফের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি, সাগরে তল্লাশি চলছে০৮ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল শ হয় আস ফ র

এছাড়াও পড়ুন:

কীটনাশকে বিলুপ্তির মুখে পোকামাকড়

ফল-ফসল ও এসব থেকে তৈরি খাবার খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি। আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে এসব ফল-ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। আর এতে মারা যায় পোকামাকড়। অনেকটা নির্বিচারেই তাদের প্রাণ যায়। এগুলোর মধ্যে অনেক ভালো পোকামাকড়ও থাকে, যারা প্রকৃতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ফসল রক্ষায় কীটনাশক ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী পোকামাকড়ের অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির মুখে।

নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ফল ও সবজিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করে পোকামাকড়ের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। নিরাপদ বলে বিবেচিত মাত্রায় ব্যবহার কীটনাশকও বড় ক্ষতির কারণ হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটির এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত রাসায়নিক ক্লোরোথ্যালোনিল পোকামাকড়ের বংশ বৃদ্ধির ক্ষমতা নষ্ট করছে ও মেরে ফেলছে। 

ম্যাককোয়ারির স্কুল অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসের গবেষকরা ল্যাবে ব্যবহৃত সাধারণ পোকামাকড়ের মডেল, ফলের মাছিগুলোয় ক্লোরোথ্যালোনিলের প্রভাব পরীক্ষা করেছেন। ফলের মাছি বন্য অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক অনুরূপ পোকামাকড়ের প্রতিনিধিত্ব করে। এগুলো সাধারণ ফলের মাছি বা ভিনেগার মাছি নামে পরিচিত। ফসলের ক্ষতি করা পোকামাকড়ের বিপরীতে এগুলো পচা ফল খায়। খামার ও বাগানে বর্জ্য ভেঙে ফেলা ও পুষ্টির পুনর্ব্যবহারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক পিএইচডি প্রার্থী দর্শিকা দিসাওয়া বলেন, ডি. মেলানোগাস্টার (সাধারণ ফলের মাছি) খাদ্যশৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত। তারা অন্য অনেক প্রজাতির খাদ্য।

পরীক্ষায় ফলের মাছি লার্ভা ক্লোরোথ্যালোনিলের সংস্পর্শে আসে, যা প্রকৃত কৃষিজাত পণ্য যেমন– ক্র্যানবেরি ও ওয়াইন গ্রেপে পাওয়া যায়। দর্শিকা দিসাওয়া বলেন, ‘আমরা যেসব মাছি পরীক্ষা করেছি, তার প্রজননের ওপর খুব কম ঘনত্বের কীটনাশকেরও বিশাল প্রভাব পড়ে। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোট সংখ্যার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এটি স্ত্রী-পুরুষ– উভয়ের উর্বরতাকেই প্রভাবিত করে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মাছি কীটনাশকের সংস্পর্শে আসেনি, তাদের তুলনায় রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা মাছিগুলোর ডিম উৎপাদন ৩৭ শতাংশ হ্রাস পায়। অধ্যাপক ফ্লেউর পন্টন বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, বেশি মাত্রার কীটনাশক মাছির ডিম উৎপাদনের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, খুব কম পরিমাণও তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

ছত্রাকনাশক ক্লোরোথ্যালোনিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নিষিদ্ধ। তবে অস্ট্রেলিয়ায় ছত্রাকজনিত রোগ ও পাতার ঝলসানো ঠেকাতে এটি ব্যাপকভাবে স্প্রে করা হয়। এ ছত্রাকনাশকের অবশিষ্টাংশ খামারের কাছাকাছি মাটি ও পানিতে পাওয়া যায়। খাবারের প্রতি কিলোগ্রামে এর মাত্রা প্রায় শূন্য থেকে ৪৬০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। অধ্যাপক পন্টন বলেন, ক্লোরোথ্যালোনিল প্রায়ই কোনো রোগ না থাকলেও প্রতিরোধমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। মানুষ ধরে নেয় ক্লোরোথ্যালোনিলের মতো ছত্রাকনাশক শুধু ছত্রাকজনিত রোগের ওপর প্রভাব ফেলে। এগুলো অন্যান্য প্রজাতির জন্যও ধ্বংসাত্মক।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ