সাহসী, সুন্দরী যে ফিলিস্তিনি বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন
Published: 9th, April 2025 GMT
আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এই নিবন্ধটিতে এমন একজন বিস্ময় নারীকে নিয়ে লিখছি, সাহসিকতা, নাটকীয়তা ও সংকল্পের জন্য যাঁকে বিশ্বকে অবশ্যই স্মরণ করা উচিত। তিনি লায়লা খালেদ। ১৯৭০-এর দশকে আমিসহ হাজার হাজার কিংকর্তব্যবিমূঢ় কিশোর-কিশোরীর কাছে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস।
ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি শ্রমজীবী সমাজে কঠোর জীবন সংগ্রামের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন লায়লা খালেদ। চেহারা ছিল খুবই হ্যাংলা-পাতলা। অনেকটা আন্ড্রু হেপবর্নের মতো দেখতে। সে কারণেই লায়লাকে যখন একে-৪৭ হাতে নির্ভীক চেহারায় দেখা গেল, তখন বিশ্বজুড়ে অগণিত কিশোরী ও তরুণীর কল্পনায় তিনি বন্দী হয়ে গেলেন।
ফিলিস্তিনি দুর্দশাকে তিনি বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে এনেছিলেন। আমাদের মতো যাঁরা ট্যাবলয়েডের শিরোনামের বাইরে কিছু পড়তে বিরক্ত হতাম, তাঁরাই আজীবনের জন্য ফিলিস্তিনিদের ন্যায়বিচারের দাবিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে সময়ে আমি প্রথম ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রথম একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছিলাম।
সত্তর দশকে স্কুলপড়ুয়াদের একটা ফ্যাশন ছিল সেনাবাহিনীর জলপাই রঙের হ্যাভারস্যাক ব্যবহার করা। জনপ্রিয় কখনো ব্যক্তিত্বের হাতে আঁকা সাদা-কালো ছবি থাকত সেসব হ্যাভারস্যাকে। ছেলেদের কাছে প্রিয় ছিলেন আর্জেন্টিনার মার্ক্সবাদী বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক ও গেরিলা নেতা আর্নেস্ত চে গুয়েভারা। ১৯৬৭ সালে মৃত্যুর পর তাঁর স্টাইলিশ ছবি বিশ্বজুড়ে প্রতীক হয়ে উঠেছিল বিক্ষুব্ধ তরুণদের অভিব্যক্তি প্রকাশের উপায় হিসেবে।
সুতরাং বিপ্লবী কিশোর-তরুণেরা যখন তাঁদের হ্যাভারস্যাকে চে গুয়েভারের ছবি নিয়ে ঘুরছিলেন, তখন কিশোরী ও তরুণীদের হ্যাভারস্যাকে থাকত ফুটবলার অথবা পপস্টারের ছবি।
এরপর লায়লা খালেদ অধ্যায়। নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম উড়োজাহাজ ছিনতাই করলেন। ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট তিনি রোম থেকে তেল আবিবগামী উড়োজাহাজ ছিনতাই করেন এবং সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যান। একই বছর কসমেটিক সার্জারি করে চেহারা পাল্টিয়ে তিনি আবার উড়োজাহাজ ছিনতাই করলেন। এবার তিনি লন্ডনে গ্রেপ্তার হলেন। যদিও একটা নাটকীয় জিম্মি বিনিময়ের সময় তিনি মুক্তি পান। এসব তিনি করেছিলেন তাঁর বয়স যখন ৩০ বছরের কম।
রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীর ও গাজায় তরুণদের মধ্যে এখন ভিন্ন ধরনের বীরত্ব দেখা যাচ্ছে। সেক্যুলার বামপন্থীদের ক্ষয় হামাসের উত্থানের পথ তৈরি করেছে এবং লায়লা খালেদের মতো যেসব নারী ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, ইতিহাস থেকে তাঁদের মুছে ফেলা হয়েছে।লায়লা শুধু আবেদনময়ী ছিলেন না। তিনি আমার মতো কিশোরী, তরুণী যাঁরা নিজেদের বৈধ ও যোগ্য কারণে বিপ্লবী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইতেন, তাঁদের কাছে লায়লা একটা বড় আবেদন তৈরি করেছিলেন।
অন্যরা তাঁদের কন্যাশিশুর নাম রেখেছিলেন লায়লা অথবা লায়লার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরতেন। লেখক পলা স্মিটের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে লায়লার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘লায়লার জন্য একজন উদ্বাস্তুর জীবন ছিল অবজ্ঞা আর অপমানের। রেশন কার্ড ও কম্বলের জন্য অনুগতভাবে হাঁটা এবং কালাশনিকভ রাইফেল হাতে নেওয়া—এই দুটি আরোপিত বিকল্পের মধ্যে তিনি পরেরটিকে বেছে নিয়েছিলেন।’
চে গুয়েভারার মতো লায়লাও ছিলেন মার্ক্সবাদী। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিইএলপি) একজন সদস্য ছিলেন তিনি। লেখক সারাহ আরভিং বলেছেন, লায়লা খালেদ যখন প্রথমবার উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছিলেন, তখন পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন ছিল একটি বামপন্থী সংগঠন। আন্তর্জাতিকভাবে অন্য বামপন্থীদের সঙ্গে এই তাদের যোগসূত্র ছিল।
জেরুজালেমের দেয়ালে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে আঁকা লায়লা খালেদের ছবি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ য ভ রস য ক কর ছ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন
যমুনা ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. বেলাল হোসেন সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দেশের একজন সফল উদ্যোক্তা। খবর বিজ্ঞপ্তি
যমুনা ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, মো. বেলাল হোসেন ১৯৫৬ সালে নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে তাঁর পরিবারের দেশ-বিদেশে সুনাম আছে। পরিবারের মালিকানাধীন বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে নানা ধরনের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ খাদ্যশস্য শিল্প। তিনি একজন বিশিষ্ট আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক। বর্তমানে তিনি বেলকন কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, বিএইচ হাইটেক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, নাদিয়া ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড ও বিএইচ স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বেলাল হোসেন নওগাঁ, দিনাজপুর ও হিলি অঞ্চলের বিভিন্ন ক্রীড়া ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদের এডিজিপি ফেলো মেম্বারশিপ সম্মাননা লাভ করেন। ২০০৫ সালে এফএনএস বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে সেরা কৃষিভিত্তিক শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
বেলাল হোসেন নওগাঁ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, নওগাঁ এবং বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতি, ঢাকার কার্যনির্বাহী সদস্য।