ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রাম থেকে অপহৃত রিফাত মিয়াকে উদ্ধার ও ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে গত সোমবার মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালুর ছেলে রিফাতকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে। পরে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে কসবা উপজেলা থেকে তাঁকে উদ্ধার এবং রেজাউল করিম নামে একজনকে আটক করেছে। অন্য আটজনকে বুধবার খুলনা থেকে আটক করা হয়।

ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া রেজাকে নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি মাইক্রোবাসের নম্বর ও চালকের ফোন নম্বরের সূত্র ধরে আটজনকে আটক করা হয়। কসবা পৌর এলাকার রেজা জানায়, সে বিমানবাহিনীতে চাকরি করত। অপহরণে চালকসহ ১২ জন জড়িত। 

আটক অন্যরা হলো– ডুমুরিয়ার সাহাপুর গ্রামের জাহিদুর রহমান, খরসংগ গ্রামের আশরাফুল কবির, মাসুম বিশ্বাস, মধুরাম সাহাপুর গ্রামের রাজন কুম্ভ, আন্দুলিয়া গ্রামের মো.

নয়ন আকোঞ্জী, খরসংগ গ্রামের মো. আলমগীর মোল্লা, কেশবপুরের ভরতভাইনা গ্রামের আব্দুল গফুর সরদার, ডুমুরিয়ার শাহাপুর গ্রামের মোহাম্মদ তৈবুর রহমান।

রিফাতের (১৯) বাবা মালু মিয়া সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা নিজেদের ডিজিএফআই সদস্য পরিচয় দিয়ে রিফাতকে ধরে নিয়ে যায়। এর চার ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে নগদ ৩ কোটি টাকা দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নবীনগর থানার ওসির সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ওসি তখন বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন, তবে পুলিশ পাঠাচ্ছেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই থানা থেকে দুই এসআই আবদুল মন্নাফ ও রাম কানাই সরকারের নেতৃত্বে সাত-আট পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বদলে তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে শলাপরামর্শ করে। এ সময় সামান্য দূরে থাকা এসআই মন্নাফকে কমপক্ষে ২০ বার ফোন করেন। কিন্তু তিনি ফোন না ধরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলাপ করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা নগদ টাকা, স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয় এবং রিফাতকে নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও চলে যায়। তিনি মঙ্গলবার নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এজাহারে তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। নাম উল্লেখ বরা তিনজন হলেন– লাউর ফতেপুর গ্রামের কামাল মিয়া ও কামাল খন্দকার এবং বাড়িখলা গ্রামের আবু কালাম আজাদ।

উদ্ধার হওয়া রিফাত বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনভর কসবা রেললাইনের পাশে সীমান্তের কাছাকাছি মাইক্রোবাসে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি করি, আমাকে ছেড়ে দিলে ৩ কোটি টাকা এনে দেব। চুক্তি অনুযায়ী, দুই ধাপে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তারা বাকি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর আমার পরিবারের কাছে পাঠালে এর সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে উদ্ধার ও রেজাকে আটক করে।’

এসআই মোন্নাফ ও এসআই রামকানাইয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহরণ হওয়া যুবক রিফাতকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল ওদের কথা সত্যি, পরে যখন রিফাতকে নিয়ে যায়, তখন টের পাওয়া গেছে তারা প্রতারক চক্র। এতে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপহরণ

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি

রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।

নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’

পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।

এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি