কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, পরীক্ষা ১২ এপ্রিল
Published: 10th, April 2025 GMT
কৃষি গুচ্ছভুক্ত নয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর গুচ্ছ পদ্ধতির নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। এ উপলক্ষে সব কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) রেজিস্ট্রার অফিসের সভা কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড.
তিনি বলেন, “এ বছর নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র ও ১৩টি উপকেন্দ্রে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা একযোগে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে বলা হবে। বিশেষ করে ঢাকায় একই দিনে ‘মার্চ টু গাজা’ কর্মসূচির কারণে সড়কে যানজটের সম্ভাবনা থাকায় সময় নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাকৃবি ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “এ বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৮৬৩টি। এর বিপরীতে ৯৪ হাজার ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করেছে। আবেদনকারীদের মধ্যে ৪৬ হাজার ৯৩২ জন ছাত্র এবং ৪৭ হাজার ৮৮ জন ছাত্রী রয়েছে।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি আসনের জন্য প্রতিযোগিতা করছে ২৫ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) নয়টি কেন্দ্রে ও ১৩টি উপকেন্দ্রে বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সম্ভাব্য আগামী ১৫ এপ্রিল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম এবং শিক্ষা বিষয়ক শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান।
বাকৃবি কেন্দ্রে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদারে ভর্তি পরীক্ষার দিন বেলা ১২টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও পরীক্ষার আগেরদিন রাত থেকে সবগুলো স্থানে বিশেষ করে নদের পাড় এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সন্ধ্যা ৭টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নদে কোনো নৌকা চলাচল করতে দেওয়া হবে না।”
প্রশ্নফাঁস বা পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বনের বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রশ্নফাঁস যাতে কোনোভাবেই না হয়, সে বিষয়ে সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র প্রতিটি কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে কতদূর এবং কোথায় প্রশ্নপত্র যাচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়াও সর্বদা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের আগে তাদের পুরোপুরিভাবে তল্লাশী করা হবে, যাতে কোনো ডিভাইস বা পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য কোনো উপকরণ তাদের কাছে না থাকে।”
কৃষি গুচ্ছের অওতাভূক্ত নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপক ন দ র পর ক ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস নয়, উদ্দেশ্য আরও বেশি কিছু
নব্বয়ের দশক থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর কৌশলগত লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। আর তা হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা। যখন ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তি করেছিল, তখনও তিনি লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি।
তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তিচুক্তির সমালোচনা করলেও ধারাবাহিকভাবে ‘ইরানি হুমকি’ তুলে ধরেছিলেন। এমনকি যখন বিষয়টি বিশ্বব্যাপী বা আঞ্চলিক অগ্রাধিকার ছিল না, তখনও নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলতে একাই দাঁড়িয়েছিলেন।
নেতানিয়াহু সর্বদা চেয়েছেন ইহুদি ইতিহাসে তাঁর ছাপ রেখে যেতে। ইরানি পারমাণবিক হুমকি ধ্বংস করা নেতা হিসেবে নিজেকে তিনি স্মরণীয় করতে চেয়েছেন।
পরিকল্পনা ব্যর্থ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুনরুজ্জীবিত
২০১০ সালের মধ্যে নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক সেনাবাহিনীকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলার প্রস্তুতি নিতে বলেন। পাশাপাশি তারা ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। তবে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পিছু হটার কারণে সেই অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। তৎকালীন চিফ অব স্টাফ গাবি আশকেনাজি, শিন বেট প্রধান ইউভাল ডিস্কিন ও মোসাদপ্রধান মেইর দাগান সবাই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, মার্কিন সমর্থন ছাড়া ইরানে আঘাত করার সামরিক ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই।
এহুদ বারাকের সতর্কবার্তায় মার্কিন প্রশাসন কূটনীতির দিকে ঝুঁকে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এতে ক্ষুব্ধ হন নেতানিয়াহু। কিন্তু তাঁর ইরানে বোমা হামলার স্বপ্ন কখনও ম্লান হয়নি। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে বোমার একটি কার্টুন দেখিয়ে তিনি সতর্ক করেছিলেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমারেখা অতিক্রম করছে।
সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহু কিছুটা সফলতার দেখা পান। তিনি ট্রাম্পকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যেতে রাজি করাতে সফল হন। রাজনৈতিক ও সামরিক গতি বজায় রাখতে তিনি সামরিক বাহিনীকে বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই ইরানের ওপর হামলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এই নীতি বাক্যটি তিনি প্রায়ই পুনরাবৃত্তি করেন, ‘বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের ভাগ্য অপরিচিতদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না, এমনকি তারা আমাদের মিত্র হলেও।’
এর পর তেল আবিব গুপ্তহত্যা এবং সাইবার আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডে একটি বার্তা ছিল, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ কখনও থামেনি। নেতানিয়াহু এই সংঘাতের স্থপতি হিসেবেই রয়েছেন। নাফতালি বেনেট-ইয়ার ল্যাপিড সরকারের অধীনে নেসেটে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পরও তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেট নেতানিয়াহুর অবস্থানকে সমর্থন করে গেছেন। এভাবে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের দৈনন্দিন রাজনৈতিক জীবনে ইরানবিষয়ক ফাইলটি গেঁথে দিয়েছেন। কোনো প্রধানমন্ত্রী এটি উপেক্ষা করতে পারবেন না।
গুপ্ত হামলা থেকে প্রকাশ্য যুদ্ধ
হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণ তেল আবিবের ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। নেতানিয়াহু সরকার একাধিক ফ্রন্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং গোপনে ইরানে হামলা চালায় তারা।
তেল আবিব বিশ্বাস করে, ২০১০ সালে ইরানে আঘাত না করে তারা একটি কৌশলগত ভুল করেছিল। এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরও বেশি সুরক্ষিত এবং এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী। কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক যুক্তি দেন, যদি তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তাহলে তারা এবং তার মিত্ররা আরও সাহসী হয়ে উঠবে।
বর্তমান যুদ্ধ নেতানিয়াহুর কয়েক দশক ধরে চলা উন্মাদনার চূড়ান্ত পরিণতি। ইসরায়েলি মিডিয়া এখন স্বীকার করছে, অপারেশন ‘লায়নস কারেজ’ ইরানি বিজ্ঞানী, পারমাণবিক স্থাপনা, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) অবকাঠামো এবং সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করে চলছে। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও গভীর।
শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের নীলনকশা
ইসরায়েলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও কৌশলগত পরিকল্পনাকারীদের নথিভুক্ত তথ্য বলছে, ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো ইরানের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন। দেশটির ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে ফেলা, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিরোধ অক্ষের অস্তিত্ব মুছে ফেলা। এ ছাড়া ইরানের নেতৃত্বের ওপর হামলা এবং জ্বালানি তেল অবকাঠামোর ওপর আক্রমণের মাধ্যমে দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা উস্কে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো বিশাল, তবে তেল আবিব এটিকে একটি ঐতিহাসিক সূচনা হিসেবে দেখছে।
এটি আর ছায়াযুদ্ধ নয়। প্রথমবারের মতো, ইসরায়েল প্রকাশ্যে ইরানি ভূখণ্ডের গভীরে আক্রমণ করেছে। তেহরানও সরাসরি হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো দেশটিকে রক্ষা করার জন্য ছুটে এসেছে।
ইসরায়েল বাজি ধরছে, তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ভেঙে ফেলতে পারে এবং আগামী কয়েক দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ার শক্তির সমীকরণ নতুন করে লিখতে পারে।
তবে হিসাবটি এত সরল নয়। কারণ, ইরান এখনও বিচ্ছিন্ন নয়। নেতানিয়াহু হয়তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগছেন। প্রতিরোধ অক্ষ হিজবুল্লাহ থেকে হুতি এবং ইরাকি ছোট ভোট উপদল পর্যন্ত তেহরানের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। এই অঞ্চলটি আরও বিস্তৃত সংঘাতের জন্য প্রস্তুত।
নেতানিয়াহু একটি জানালা দেখতে পাচ্ছেন। তেহরান কেবল একটি নয়, বরং অনেকগুলো সীমারেখা অতিক্রম করতে দেখছে। পশ্চিম এশিয়ার বাকি অংশ এমন একটি যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে, যা মানচিত্রটি নতুন করে আঁকতে পারে।