শুল্ক নীতি কার্যকর হওয়ার দিনই তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেভাবে চীন মার্কিন পণ্যে প্রতিশোধমূলক শুল্ক এবং তার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে শুল্কের হার বাড়িয়ে যাচ্ছিল, তাতে পৃথিবী নতুন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। এর জেরে শেয়ারবাজারে ধস নামে, ডলারের বিনিময় হার কমে যায়, তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। সামগ্রিকভাবে বাজার অর্থনীতিতে রীতিমতো কাঁপন শুরু হয়ে যায়।

অথচ শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও এই শুল্কনীতি শিথিলের কোনও লক্ষণ দেখায়নি তার প্রশাসন। ট্রাম্পের দাবি, হৃদয়ের কথা শুনে হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। খবর পলিটিকোর

বুধবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, গত কয়েকদিন ধরেই শুল্কের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি। বোধহয় আজ সকালে সব আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন কোনও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের সময় ছিল না। কেবল নিজের অন্তরের কথা শুনে যেটি সঠিক মনে হয়েছে, সেটাই করেছি।

বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ও অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গে মিলে ট্রাম্প এই পোস্ট লিখেছিলেন বলে জানান লুটনিক। তবে অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার কাছেই এই ঘোষণা ছিল বিস্ময়কর।

শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর শেয়ারবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেরি হয়নি। তবে তার আকস্মিক স্থগিত সিদ্ধান্তে হাওয়া বদলেও সময় লাগে না। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বাজারমূল্য বুধবারই ১ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়।

স্থগিতাদেশের পর ট্রাম্প প্রশাসনের হয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে সবার আগে হাজির হয়েছেন বেসেন্ট। তিনি বলেন, বাজারের অস্থিরতার কারণে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে চুক্তি করার ইচ্ছা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেছেন, প্রতিটি সমস্যার সমাধান হবে আলাদা। তাই, এ কাজে বেশ কিছুটা সময় প্রয়োজন। পুরো প্রক্রিয়াতে প্রেসিডেন্ট নিজে যুক্ত থাকতে চান বলেই ৯০ দিনের বিরতি দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা

দেশের নারী ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের স্বপ্ন জুগিয়ে যাচ্ছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়। সেখানকার ছোট্ট গ্রাম রাঙাটুঙ্গীর মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম এখন ফুটবল। গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলছে একদল অদম্য নারী ফুটবলার। আর তাদের এগিয়ে নিতে আছেন কোচ তাজুল ইসলাম। রোদ, বৃষ্টি, সামাজিক কটূক্তি—সবকিছু উপেক্ষা করে গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলের নিয়মিত অনুশীলনে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। 

২০১৪ সালে স্থানীয় টুর্নামেন্টে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কিছু মেয়ের ফুটবলপ্রেম দেখে তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি’। সে সময় তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তিরস্কার ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুর্মু ও সাবেক স্থানীয় ফুটবলার জয়নুলের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই তিরস্কার ও সমালোচনা আজ গর্বে পরিণত হয়েছে।

মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই একাডেমি থেকে উঠে আসেন মুন্নি আক্তার, সোহাগী, স্বপ্না রানী, সাগরিকা, কোহাতির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে এই একাডেমি থেকে ২৩ জনের বেশি তরুণী জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও লিগে খেলছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে এখন গ্রামের মানুষ, এমনকি একসময়কার সমালোচকেরাও তাঁদের নিয়ে গর্ব করেন। রাঙাটুঙ্গীর মানুষের কাছে ফুটবল এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা গ্রামের মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।

জাতীয় দলের খেলোয়াড় কোহাতি কিসকু জানান, এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না। মাঠে আসার পথে তাঁদের অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোচ ও প্রশিক্ষকদের উৎসাহ এবং নিজেদের দৃঢ় মনোবল তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের এই সাফল্য প্রমাণ করে, মেধা ও ইচ্ছাশক্তি সব ধরনের সামাজিক বাধা ভেঙে দিতে পারে।

তবে এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তাঁদের অনুশীলনের মাঠটি এবড়োখেবড়ো, অনুশীলনের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম বা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তাজুল ইসলাম নিজের অর্থায়নে একাডেমি চালালেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।

রাঙাটুঙ্গীর ফুটবল আন্দোলন প্রমাণ করে, একটি স্বপ্ন আর কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। মাঠের সংস্কার, খেলার সরঞ্জাম এবং খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের সবার প্রত্যাশা, রাঙাটুঙ্গীর মেয়েরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশের সম্মান বাড়াবে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, সেটিই কাম্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ