আগারগাঁওয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীর ওপর লাঠিপেটা করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় কয়েকজনকে আটকও করা হয়। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসি কার্যালয়ের সামনে চলছিল ধারাবাহিক আন্দোলন। 

বৃহস্পতিবারও চলে বিক্ষোভ-সমাবেশ। বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে থেকে পিএসসির দিকে যেতে চাইলে যৌথ বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে, লিখিত পরীক্ষা ৮ মে থেকে শুরুর ব্যাপারে অনড় পিএসসি। আজ প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে লিখিত পরীক্ষার সময়সূচিও প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও সূচি প্রকাশের পর জরুরি সভায় বসে পিএসসি। সভার সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি। এর আগে মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের ছয় প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন পিএসসি চেয়ারম্যান। বৈঠকে তিন দিন সময় চেয়েছিল পিএসসি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়ার পর চাকরিপ্রার্থীরা সেখান থেকে পিএসসি অভিমুখে রওনা দিতে চাইলে যৌথ বাহিনী প্রথমে তাদের বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। চাকরিপ্রার্থীরা জোর করে পিএসসির দিকে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের লাঠিপেটা শুরু করে। 

প্রকাশিত পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী, আগামী ৮ মে প্রথম দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলা পরীক্ষা হবে। ১৯ মে সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিষয়ের পরীক্ষার মাধ্যমে আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আবশ্যিক ও পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষার হল, আসন ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা যথাসময়ে পিএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ২৬ এপ্রিল প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ মে প্রথম দফায় ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পিএসসি। প্রথম দফায় প্রকাশিত ফলে ১০ হাজার ৬৩৮ জন উত্তীর্ণ হন।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর ফের ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করা হয়।  প্রকাশিত ফলে আগে উত্তীর্ণসহ মোট ২১ হাজার ৩৯৭ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এই বিসিএসে মোট পদসংখ্যা ৩ হাজার ১৪০টি। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প এসস চ কর প র র থ র ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র র স মন প রথম প এসস

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ