মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমরা দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ করতে চাই। দ্রুত এগোতে হবে। ইউক্রেনের সঙ্গে এই যুদ্ধ অর্থহীন।’ গতকাল শুক্রবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করা ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দ্রুত একটি শান্তিচুক্তিতে রাজি হতে তিনি মস্কো ও কিয়েভকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের দফায় দফায় বৈঠক সত্ত্বেও ক্রেমলিন এখন পর্যন্ত বড় কোনো ছাড় দিতে রাজি হয়নি।

গত মাসে এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্টের আচরণ নিয়ে আমি “বিরক্ত”।’ গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, ইউক্রেন সংঘাত মিটমাট করা নিয়ে মস্কোর সঙ্গে ‘অন্তহীন দর–কষাকষি’ চালিয়ে যাবে না ওয়াশিংটন।

গতকাল পুতিনের সঙ্গে উইটকফের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘রাশিয়ার এগিয়ে যাওয়া দরকার’। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধকে ‘অর্থহীন’ মন্তব্য করে এটা ‘কখনো শুরু হওয়া দরকার ছিল না’ বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

ওয়াশিংটন–মস্কোর মধ্যকার আলোচনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। তাঁদের মতে, দর–কষাকষির অজুহাতে ফলপ্রসূ শান্তিচুক্তি নস্যাৎ করতে চাইছে মস্কো। তারা সময়ক্ষেপণ করছে।

গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধে বেইজিংও সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে। রুশ সেনাদের সঙ্গে কয়েক শ চীনা সেনা রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করছেন। কিন্তু জেলেনস্কির এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছে বেইজিং।

গতকাল সেন্ট পিটার্সবার্গে রাষ্ট্রপতির গ্রন্থাগারে পুতিন ও উইটকফ বৈঠকে বসেন। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার তথ্যমতে, তাঁদের বৈঠক প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে।

বৈঠকের পর ক্রেমলিন সংক্ষেপে বলেছে, সূচি অনুযায়ী যথাসময়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ইউক্রেনের বিভিন্ন বসতির (রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চল) নানা দিককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে’। এর বাইরে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ক্রেমলিন।

বৈঠকের আগে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, এই বৈঠক থেকে ‘বড় ধরনের কূটনৈতিক কোনো ফল’ আসার সম্ভাবনা নেই।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পুতিন ও উইটকফ এবার নিয়ে তিনবার বৈঠক করেছেন। সব বৈঠক হয়েছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয়।

গতকাল দিমিত্রি পেসকভ এটাও বলেছেন, পুতিন ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠক আয়োজন নিয়ে আলোচনা করতে পারেন উইটকফ। কিন্তু আলোচনার পর এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, তা নিয়ে কোনো পক্ষই মুখ খোলেনি।

আরও পড়ুনইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়াকে দিয়ে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ট্রাম্পের দূত১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ