কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রির চেয়ে ডলার কিনছে বেশি
Published: 12th, April 2025 GMT
রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির চেয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কিনছে বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বকেয়া দায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ডলারের দরে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। মূল্যস্ফীতি আরও কমে এলে আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের শর্ত মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আর ডলার বিক্রি হয়নি। এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রিজার্ভ থেকে ৮০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। পরের দুই মাসে বিক্রি না করে কেনা হয় ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। পরের তিন মাসে বাজার থেকে আরও ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কত ডলার কিনেছে তা জানা যায়নি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তথ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোর ডলার বেচাকেনার তথ্য নেয়। সেখানে কোন ব্যাংকের কাছে কত ডলার রয়েছে, নিকটতম সময়ে তার কত পরিশোধ করতে হবে– এসব দেখা হয়। এর ভিত্তিতে ডলার কেনা হয়। গত ৫ আগস্টের পর ব্যাংক খাতের নেট ওপেন পজিশন (এনওপি) ৪০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে। গত বছর যা ঋণাত্মক ছিল। কোনো ব্যাংকের হাতে বেশি ডলার থাকলে প্রথমে সংকটে থাকা অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া ৩৭০ কোটি ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে আর বকেয়া রাখার সুযোগ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গত ৬ এপ্রিল ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় ডলারের জোগান বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রেমিট্যান্স প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ। এ সময়ে আমদানি সাড়ে ৪ শতাংশ বাড়লেও ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড.
জুনের মধ্যে ডলার দর বাজারভিত্তিক হচ্ছে
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে গভর্নর জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন দুই অঙ্কের ঘরে থাকা মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। গত মার্চে মূল্যস্ফীতি নেমেছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে। আগামী জুনের মধ্যে ৮ শতাংশে নামার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময়ে রিজার্ভ পরিস্থিতির আরও উন্নতির আশা করা হচ্ছে। ফলে আগামী জুনের মধ্যে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি অব্যাহত রাখবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো ব্যাংক বা বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস যেন কারসাজি করে ডলারের দর বাড়াতে না পারে, তা তদারকি করা হবে। বর্তমানে কোনো ব্যাংক হঠাৎ দর বাড়ালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে নীতিমালা করা হবে। একই সঙ্গে যে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসবে ওই ব্যাংকেই বিক্রি বাধ্যতামূলক করা এবং এক ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংক থেকে ডলার কিনে দায় সমন্বয়ে বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। একই সঙ্গে দৈনিক ভিত্তিতে ডলার বেচাকেনার তথ্য নেওয়া অব্যাহত থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব জ র র ওপর ব যবস থ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ২০৪ কোটি ডলার। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ এখন যে রিজার্ভ আছে, এর সমান ছিল।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ফলে মোট রিজার্ভ ও নিট রিজার্ভ—উভয়ই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এর আগে ১৪ এপ্রিল রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয় ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১১ কোটি ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো আয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ছে। গত মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে; এক মাসের হিসাবে যেকোনো সময়ের চেয়ে এটি বেশি। আর চলতি মাসের ২৬ দিনে এসেছে ২২৭ কোটি ডলার। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই রিজার্ভ বাড়ে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপর চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২২ টাকায় অনেক দিন ধরে স্থির আছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। ৮৫ টাকার ডলার বেড়ে ১২৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর নানা উদ্যোগের কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। ২০২২ সালের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে অনেক ব্যাংক।