ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুর্শিদাবাদের দুটি প্রশাসনিক ব্লকের (সুতি ও সামসেরগঞ্জ) কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল শনিবার রাত থেকে এই টহল শুরু হয়।

সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ানের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি বেশ থমথমে। অনেক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধানত গ্রামাঞ্চলে এই গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো ঘটেছে, যেখানে মুসলমানরা বসবাস করেন। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। ভয়ে বাড়ির পুরুষেরা অন্যত্র চলে গেছেন।

গতকাল রাত থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে অন্তত ১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে।

ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে মুসলমানপ্রধান মুর্শিদাবাদ জেলায় গত শুক্রবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় শুক্রবার দুপুরের দিকে।

এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে গতকাল সকালে সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ান পৌর অঞ্চলের অন্তর্গত জাফরাবাদ থেকে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংঘাতের খবর আসে।

যে দুই ব্যক্তি লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা হলেন হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস। তাঁরা বাবা–ছেলে। তাঁরা ছাগলের ব্যবসা করতেন।

আগের দিন শুক্রবার সুতি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় ১৭ বছরের কিশোর ইজাজ আহমেদ। সে গতকাল বিকেলে মারা যায়। এ খবরেও উত্তেজনা বাড়ে।

পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে যান। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আরজি জানান। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট সুতি ও সামসেরগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে ৬৬ শতাংশ সংখ্যালঘু। এই জেলায় প্রায় একচেটিয়াভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি-এমএলএ রয়েছেন। এ ছাড়া জেলার আটটির মধ্যে সাতটি পৌরসভাই তৃণমূলের দখলে। এরপরও এই ঘটনা কীভাবে ঘটল, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আপনজন নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক জায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের, এত বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসনের তরফে আবেদন করা হয়েছিল, যাতে কেউ কোনো প্ররোচনায় পা না দেন, অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা না করেন। তারপরও কী করে এ ঘটনা ঘটল, তা তদন্তের দাবি রাখে।

সামসেরগঞ্জের ধুলিয়ানের সমাজকর্মী জিম নওয়াজ কিছুদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পরে ওয়াক্‌ফ নিয়ে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। ধুলিয়ান বাজারে দোকানপাট খুলেছিল। কিন্তু এরপর মুসলমানদের কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। তিনি যত দূর জানেন, পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। এখানে এ প্রশ্ন করা প্রাসঙ্গিক যে কীভাবে এই সহিংসতা ছড়াতে দেওয়া হলো।

ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ১৬ এপ্রিল তিনি রাজ্যের ইমাম, মুয়াজ্জিন, বুদ্ধিজীবী, আলেম-উলামাদের সঙ্গে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে একটি সভা করবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের পৌর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

অন্যদিকে মুর্শিদাবাদে বড় ধরনের আন্দোলনের কথা ভাবছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। রাজ্য বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেছে, ধুলিয়ান থেকে ৪০০ জনের বেশি হিন্দুকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাঁরা অন্যত্র গিয়ে রয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত শ ক রব র এল ক য় গতক ল কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে সৎমা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা

পটুয়াখালীতে কুলসুম বেগম ও মোসা. সাহিদা বেগম নামের দুই নারীকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক তরুণের বিরুদ্ধে। আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চারাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত আল আমিন (২৭) সম্পর্কে নিহত সাহিদা বেগমের সৎছেলে এবং বৃদ্ধা কুলসুম বেগমের নাতি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত দুই নারীর স্বজন মো. আশ্রাফ খাঁ জানান, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে অস্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। এরপর তাঁর পরিবার তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরে আল আমিনের বাবা রাজ্জাক খাঁ পাশের একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলে আল আমিন দা দিয়ে গলা কেটে তাঁর সৎমা সাহিদা বেগম ও বৃদ্ধ দাদি কুলসুম বেগমকে হত্যা করেন।

বাহাদুর আলম খাঁ (৫০) নামের এক আত্মীয় বলেন, নিহত সাহিদা সম্পর্কে তাঁর চাচিশাশুড়ি এবং কুলসুম বেগম দাদিশাশুড়ি। দুপুরে বাড়ির সবাই জুমার নামাজ পড়তে গেলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছোট ছেলে আল আমিন রান্নার কাজে ব্যবহৃত ধারালো দা দিয়ে প্রথমে সৎমা এবং পরে দাদিকে গলা কেটে হত্যা করেন। তিনি বলেন, আল আমিন মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর তিন বছর আগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে যান। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসক দেখালেও সুস্থ হননি।

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, দুই নারীকে হত্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ড ঘটানো ব্যক্তি ওই পরিবারের সদস্য। ঘটনার পর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে উদ্ধার করে পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়েছে। জড়িত তরুণ এখন পলাতক। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন কি না, তদন্ত করে দেখা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
  • শ্রীলঙ্কা পৌঁছেছেন মিরাজ-শান্তরা
  • পটুয়াখালীতে সৎমা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা