যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ডিলার ছিলেন কে এম শরিফুল ইসলাম। গত ৩০ জানুয়ারি তিনি মারা যান। এরপরও ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে শরিফুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের সার উত্তোলনও করা হয়েছে। তবে চলতি এপ্রিল মাসে বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরে সেটি বাতিল হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি মাসে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা সার চাহিদানুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি জেলার বিসিআইসি ও বিএডিসির ডিলারের নামে চাহিদামতো মাসিক উপবরাদ্দ দেয়।

সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণসংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯–এর ৯ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়, ইউনিয়ন বা পৌরসভার চাহিদানুযায়ী সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত এবং ডিলার ব্যতীত উত্তোলিত সার অন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার বিষয়টি কঠোরভাবে রোধ করতে ডিলারদের অনুকূলে বরাদ্দ সার ডিলার নিজেই উত্তোলন করবেন অথবা তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্য থেকে একজনকে উত্তোলনের ক্ষমতা দেবেন। সে ক্ষেত্রে ডিলার মনোনীত প্রতিনিধির ছবি প্রত্যয়নপূর্বক লিখিতভাবে জানাতে হবে।

উপধারা ১০-এ বলা হয়, ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার ডিলারের মৃত্যু অথবা অন্য কোনো কারণে ডিলারশিপ শূন্য হলে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাময়িকভাবে পাশের ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার ডিলারকে বরাদ্দের সার উত্তোলন ও বিতরণের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি বিসিআইসি ডিলার শরিফুল মারা যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম মৃত্যুসনদ সংযুক্ত করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। গত ১৩ মার্চ উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভার রেজল্যুশন জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়। রেজল্যুশনে সাময়িকভাবে পাশের ইউনিয়নের ডিলারকে ওই ইউনিয়নের বরাদ্দের সার উত্তোলন ও বিতরণের ক্ষমতা দিতে সুপারিশ করা হয়। এরপরও ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বরাদ্দের সার মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের সার ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক তুলে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন।

সূত্র জানায়, মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), ৩৫ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন ডিএপি (ডাই–অ্যামোনিয়াম ফসফেট), ২৮ দশমিক ২০ মেট্রিক টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) এবং ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার; মার্চ মাসে ৭ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন টিএসপি, ১২ দশমিক ২০ মেট্রিক টন ডিএপি, ১১ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন এমওপি ও ২৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার এবং এপ্রিল মাসে ৫ দশমিক ৭০ মেট্রিক টন টিএসপি, ১৪ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন ডিএপি, ৮ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন এমওপি ও ৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে এপ্রিল মাসের বরাদ্দ বাতিল করে উপজেলার সব ডিলারের নামে ওই সার সমানভাবে বণ্টন করা হয়।

জানতে চাইলে ফেরদৌসী  ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী বিসিআইসির ডিলারশিপ পরিচালনা করতেন। তিনি ৩০ জানুয়ারি মারা যান। আমি কৃষি অফিসে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। স্বামীর মৃত্যুর পর আমরা সার উত্তোলন করছি না। এখন কে তুলছে, তা জানি না।’

তবে মেসার্স আমিন করপোরেশনের ব‍্যবস্থাপক সোহেল রানা বলেন, ‘মৃত্যুর আগে মালিক আমাকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রত্যয়ন দিয়ে সার উত্তোলনের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। ওই সময় বোরোর সিজন ছিল। এ জন্য আমি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বরাদ্দের সার উত্তোলন করেছি। সমুদয় সার সঠিকভাবে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে আমাদের সার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

হাসান আলী বলেন, শরিফুলের মৃত্যুর বিষয়টি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্ত্রী লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তার আগে মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে ফেব্রুয়ারি মাসের সারের বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সভার রেজল্যুশন জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, মেসার্স আমিন করপোরেশনের নামে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের সার তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক তুলেছেন। নিয়মানুযায়ী তিনি ওই সার তুলতে পারেন না। তবে ওই সার ঠিকমতো কৃষকেরা পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্যসচিব মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ভুল করে এপ্রিল মাসের সারের উপবরাদ্দ মেসার্স আমিন করপোরেশনে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর উপবরাদ্দ বাতিল করা হয়। উপজেলার সব ডিলারকে ওই সার সমানভাবে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র বর দ দ কর মকর ত কম ট র স ব স আইস র ক ষমত ওই স র দশম ক ব তরণ ব ষয়ট ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ