চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোতলজাত গ্যাসে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিএনজি অটোরিকশা
Published: 13th, April 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জ্বালানি হিসেবে বোতলজাত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে উঁচুনিচু রাস্তায় ঝাঁকি খেয়ে এসব বোতলের রেগুলেটর ঢিলা বা ছিদ্র হয়ে যখন তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মেয়োদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোরিকশায় বোতালজাত গ্যাসের ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, জেলায় গত দশ বছর ধরে অল্প ভাড়ায় দ্রুত যাতায়াতের অন্যতম বাহন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কাছের কিংবা দূরের যাত্রায় মানুষের কাছে জনপ্রিয় তিন চাকার এ বাহনটি। তবে পেট্রোলিয়াম গ্যাসে চলা বাহনটিতে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাহনটির পেছনের অংশে অথবা সিটের নিচে গ্যাসের বোতল রেখেই যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছেন মানুষজন।
সিএনজি অটোরিকশার চালকরা জানান, নতুন করে বাজারে যেসব সিএনজিচালিত অটোরিকশা উঠছে, সেগুলোয় মানসম্মত গ্যাসের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখনও পুরাতন সব গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাসের বোতল। এছাড়া অনেক চালক পুরাতন গ্যাসের বোতলকে রঙ করে অনভিজ্ঞ কারিগরের কাছে গিয়ে স্থায়ীভাবে গ্যাসের চেম্বার বানিয়ে নিচ্ছেন। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজিচালক বলেন, “নতুন করে যেসব গাড়ি এখন রাস্তায় নামছে সেগুলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। কারণ, সেগুলোর সিলিন্ডার অনেক মজবুত। তবে আগের গাড়িগুলোয় এখনও বোতলজাত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন চালক গ্যাসের বোতল পেছনে রাখছেন। আবার কেউ ঝালাই করে সিটের নিচেই স্থায়ীভাবে বসিয়ে নিচ্ছেন। এতে যাত্রীদের ঝুঁকি আছে ঠিকই, কিন্তু আমাদেরও তো কিছু করে খেতে হবে।”
সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীরাও দুর্ঘটনা নিয়ে থাকেন উৎকণ্ঠায়। তবে দ্রুতগামী বাহন আর অল্প ভাড়ায় গন্তব্যে যাওয়া যায় বলে নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা।
রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা শোনা যায়। এসব ভাবলে যে কারোরই ভেতরে ভয় কাজ করবে। তবুও কাজের সুবাদে যাতায়াত করতেই হয়।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেসবাউল হক বলেন, “আমাদের সংগঠনে প্রায় দেড়শ সিএনজি আছে। এছাড়াও জেলায় রয়েছে আরও দুটি সিএনজির সমিতি। সব মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক সিএনজি জেলাজুড়ে যাত্রী পরিষেবা দিয়ে থাকে। এসব অটোরিকশার মধ্যে বেশিরভাগই সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এখনও অনেক গাড়িতে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিলাম। তাদের সচেতনামূলক কথার মাধ্যমেই বোতলজাত গ্যাসের সিএনজির সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। তবে একেবারেই কমে যায়নি। আমারও বৈঠকের মাধ্যমে চালকদের নিয়মিত সচেতন করে থাকি।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো.
তিনি আরও বলেন, “যানবাহনে গ্যাস ব্যবহারের অনুমতি আছে ঠিকই। কিন্তু গ্যাসের সিলিন্ডার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হয়। পরিবর্তন না করলে মেয়াদোত্তীর্ণ বোতল ব্যবহারে রয়েছে আরও ঝুঁকি।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, “যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্যাসের সিলিন্ডার মেয়দোত্তীর্ণ হলে বা জোড়াতালি দেওয়া হলে অথবা এতে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামের (গ্যাস ভাল্ব, হোসপাইপ, রেগুলেটরসহ নানা ইকুইপমেন্ট) দুর্বলতার কারণে বিস্ফোরিত হতে পারে। এক্ষেত্রে চালকরা যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণ করতে পারেন।”
ঢাকা/শিয়ামি/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ য স ব যবহ র কর ব তলজ ত গ য স প ইনব বগঞ জ য ত য় ত কর দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
চিনি আর লবণ– দুটিই সাদা ও ঝকঝকে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক হলেও তাদের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই সরল অথচ গভীর সত্যটি আমাদের চারপাশের সমাজের প্রতিচ্ছবি। আজ যখন মানুষ শুভাকাঙ্ক্ষীর মুখোশ পরে এগিয়ে আসে, আমরা বুঝতে পারি না– কে চিনি, কে লবণ। এই বিভ্রমের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের চিরন্তন দ্বন্দ্ব। তার ফলে সমাজে জন্ম নিচ্ছে ভাঙন, ক্ষয় ও ব্যথার করুণ কাব্য।
শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে প্রতারণার ছায়া আজ সমাজের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও বন্ধুত্বের আবরণে, কখনও আত্মীয়তার মোড়কে, আবার কখনও নির্ভরতার চাদরে ঢাকা পড়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের বারবার আহত করে। রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন বা পারিবারিক জীবন– বিশ্বাসের অবক্ষয়ের নির্মম চিত্র আজ সর্বত্র বিদ্যমান। সবচেয়ে আপন বলে যার হাত ধরেছি, সেই হাত কখন যে ছুরি হয়ে ফিরে আসে– বলা দুষ্কর।
সম্প্রতি রাজধানীর উপকণ্ঠে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে। বৃদ্ধ মা তাঁর তিন সন্তানকে অকুণ্ঠ বিশ্বাস করে সব সম্পত্তি লিখে দেন। সন্তানরা কথা দিয়েছিল– শেষ দিন পর্যন্ত মায়ের পাশে থাকবে। কিন্তু দলিলের কালি শুকানোর আগেই মাকে উঠিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধাশ্রমে। মায়ের চোখের জল তখন ছিল মূল্যহীন; সম্পদের নেশাই ছিল মূল।
অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ‘বিশ্বস্ত’ বন্ধু ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অদৃশ্য হয়েছে রাতের অন্ধকারে। এসব গল্প আজ প্রতিটি নগর-পল্লীর অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্পর্কের পবিত্রতা আজ যেন লোভ ও মুনাফার কাছে নতজানু।
বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণা কোনো দাগের মতো নয়, যা সময়ের সঙ্গে মুছে যায়। বরং এটি মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। একজনের আঘাত শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; ছড়িয়ে পড়ে সমাজজুড়ে। গড়ে ওঠে এক অবিশ্বাসের দেয়াল, যেখানে একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সম্পর্কের উষ্ণতা ক্রমে ঠান্ডা হতে হতে বরফে পরিণত হয়, যা গলাতে লাগে যুগের পর যুগ।
ভোগবাদী সভ্যতা মানুষকে করে তুলেছে আত্মকেন্দ্রিক। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার সংকট এবং তাৎক্ষণিক লাভের মোহে সম্পর্কও আজ মুনাফার মাপে মাপা হয়। বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, প্রেম– সবকিছু যেন পরিণত হয়েছে একেকটি চুক্তিতে। ‘কে কতটা কাজে লাগবে’– এই প্রশ্নই আজ সম্পর্কের মানদণ্ড। তবে সব আলো নিভে যায়নি। অন্ধকার যত গভীর হোক, এক টুকরো মোমবাতি গোটা ঘর আলোকিত করতে পারে। এই সংকটময় সময়ে আমাদের প্রয়োজন আত্মসমালোচনা ও মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ। ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক হতে হবে। কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে, যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগের তাড়নায় নয়, বিবেকের আলোয় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষাকে মজবুত করতে হবে। শিশুর মনে শৈশব থেকেই সততা, বিশ্বস্ততা ও মানবিকতার বীজ বপন করতে হবে। পরিবারই হচ্ছে ব্যক্তিত্ব গঠনের মূল কেন্দ্র। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে সমাজে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা পায়। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে নৈতিক চেতনা জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। তবু এই অন্ধকারে কিছু আলোকবর্তিকা রয়েছেন, যারা এখনও বিশ্বাসের মানদণ্ডে অবিচল। যাদের জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, অপরের কল্যাণে নিবেদিত। সংকটে পাশে দাঁড়ানো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বিলানো– এটাই তাদের ধর্ম। এরা প্রমাণ করে– বিশ্বাস এখনও বিলুপ্ত হয়নি পুরোপুরি। শুধু খুঁজে নিতে জানতে হবে।
পরিশেষে, চিনি ও লবণের বাহ্যিক সাদার ভ্রম নয়, আসল স্বাদ বোঝার সক্ষমতা অর্জন করাই আজ সময়ের দাবি। মানুষকে তার কার্যকলাপের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে; বাহ্যিক মোহের ফাঁদে পা না দিয়ে। অন্ধবিশ্বাস নয়– সচেতন, বিবেকবান বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে তুলতে হবে সম্পর্কের ভিত।
মুহাম্মদ ইমাদুল হক প্রিন্স: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়