কেরানীগঞ্জের বিটি মাঠে ১৭ শর্তে আবার বৈশাখী মেলার অনুমতি
Published: 13th, April 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জের অধ্যাপক হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে বৈশাখী মেলা আয়োজনের অনুমতি বাতিলের পর নতুন করে ১৭টি শর্তে মেলার অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে বিটি মাঠ নামে পরিচিত এই স্টেডিয়ামে মেলার অনুমতির প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ রোববার অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা পালন করেনি।
ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় জেলা প্রশাসকের কাছে মেলার জন্য নতুন করে অনুমতি চান। পরে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শামসুন নাহার শিলার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৭টি শর্তে মেলার অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়।
শর্তগুলো হলো খেলার মাঠে কোনো ধরনের স্থাপনা ও মেলার আয়োজন করা যাবে না; নিজ দায়িত্বে খেলার মাঠ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে আগের অবস্থায় বুঝিয়ে দিতে হবে; ক্রিকেট পিচ সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণ করতে হবে; মেলা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জনস্বার্থবিরোধী কোনো কার্যকলাপ করা যাবে না; কোনো ধরনের জুয়া, র্যাফল ড্র, লটারি, অশ্লীল নৃত্য, নীতিবিবর্জিত আচরণ, সমাজ ও পরিবেশবিরোধী কার্যকলাপ করা যাবে না; ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন কোনো কার্যকলাপ হতে বিরত থাকতে হবে; নামাজের সময় উচ্চ শব্দে স্পিকার বা মাইক বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে; বৈশাখী মেলায় আসা নারীদের যাতে কেউ উত্ত্যক্ত বা হয়রানি করতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে; গণ–উপদ্রব ও অসামাজিক কার্যকলাপ সৃষ্টি হয় এমন কাজ হতে বিরত থাকতে হবে; বৈশাখী মেলা চলাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে থানা–পুলিশ মেলার কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে; মাঠের যেকোনো ক্ষয়ক্ষতির জন্য আয়োজক কমিটিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং এই অনুমতিকে ভবিষ্যতে নজির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
আরও পড়ুনঅনুমতি বাতিল হলেও বৈশাখী মেলা করার ঘোষণা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের২১ ঘণ্টা আগেআজ বিকেলে বিটি মাঠ নামে পরিচিত অধ্যাপক হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, শর্ত অনুযায়ী ক্রিকেট পিচের চারপাশে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হচ্ছে। মাঠের পাশে বাঁশের খুঁটি দিয়ে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে।
চারটার দিকে মাঠ পরিদর্শনে আসেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শর্তগুলো পালন করা হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে এসেছেন তিনি। শর্ত ভঙ্গ হয়েছে এমন কোনো বিষয় তার চোখে পড়েনি। তিনি আরও বলেন, শর্ত পালন নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ থাকবে।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই মেলা হোক, কিন্তু মাঠ নষ্ট করে নয়। শর্ত মেনে মেলার আয়োজন হলে সেটা ভালো। তবে শর্তগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না, সেটা তদারকি করা জরুরি।’
মাঠে অনুশীলনকারী এক খেলোয়াড়ের বাবা বলেন, মাঠের অবস্থা যেন খারাপ না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নজরদারি দরকার।
এদিকে মেলার অনুমতির প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেরানীগঞ্জ উপজেলা শাখা আজ মাঠে ‘শান্তিপূর্ণ অনশন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত মাঠে কাউকে অনশন করতে দেখা যায়নি। পরে ছয়টার দিকে ৩০ থেকে ৩৫ জন সেখানে উপস্থিত হন। তাঁরা সেখানে অবস্থানরত ইউএনওর সঙ্গে মেলার শর্তাবলির বিষয়ে কথা বলে চলে যান।
অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেরানীগঞ্জ উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আল আমিন মিনহাজ বলেন, ‘১৭টি শর্তে জেলা প্রশাসন মেলার অনুমতি দিয়েছে। শর্তগুলো আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হওয়ায় অনশন না করার সিদ্ধান্ত নিই। যদি আয়োজক কর্তৃপক্ষ ওই সব শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে পরবর্তী সময়ে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
প্রসঙ্গত, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ওই স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ল র অন ম ক র যকল প ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকার ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ–দিনাজপুর সড়কের কাটামোড় এলাকায় এ কর্মসূচিতে অংশ নেন শতাধিক সাঁওতাল ও বাঙালি নারী–পুরুষ। পরে বিকেল চারটার দিকে কয়েকজনকে শরবত পান করিয়ে অনশন ভাঙান আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এ কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির, বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, ফারুক কবীর, সাঁওতাল নেতা স্বপন শেখ, প্রিসিলা মুর্মু, তৃষ্ণা মুর্মু, বিটিশ সরেন, গৌড় পাহাড়ি, রাফায়েল হাসদা, অলিভিয়া হেমব্রম, বার্নাবাস টুডু, লুইস মুর্মু, খিলন রবিদাস প্রমুখ। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
গণ–অনশনে বক্তারা বলেন, গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণ করার মতো সরকারের অনেক জমি পতিত আছে। কিন্তু বিরোধপূর্ণ সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতেই কেন ইপিজেড করতে হবে? এ আন্দোলন ইপিজেডের বিরুদ্ধে নয়; বরং বাপ–দাদার জমি উদ্ধারের জন্য তাঁরা আন্দোলন করছেন। এসব জমি উদ্ধার করতে গিয়ে তিন সাঁওতালকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আজও গ্রেপ্তার করা হয়নি। দোষী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি।
বক্তারা বিরোধপূর্ণ জমিতে ইপিজেড নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ, তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, সাঁওতাল–বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পৈতৃক জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রংপুর চিনিকল সূত্রে জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মার্ডি নামে তিন সাঁওতাল নিহত হন। সেই সঙ্গে অন্তত ২০ জন আহত হন।
এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেপজা) ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে চিনিকলের জমিতে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি।