ঢাকার কেরানীগঞ্জের অধ্যাপক হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে বৈশাখী মেলা আয়োজনের অনুমতি বাতিলের পর নতুন করে ১৭টি শর্তে মেলার অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে বিটি মাঠ নামে পরিচিত এই স্টেডিয়ামে মেলার অনুমতির প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ রোববার অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা পালন করেনি।

ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় জেলা প্রশাসকের কাছে মেলার জন্য নতুন করে অনুমতি চান। পরে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শামসুন নাহার শিলার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৭টি শর্তে মেলার অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়।

শর্তগুলো হলো খেলার মাঠে কোনো ধরনের স্থাপনা ও মেলার আয়োজন করা যাবে না; নিজ দায়িত্বে খেলার মাঠ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে আগের অবস্থায় বুঝিয়ে দিতে হবে; ক্রিকেট পিচ সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণ করতে হবে; মেলা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জনস্বার্থবিরোধী কোনো কার্যকলাপ করা যাবে না; কোনো ধরনের জুয়া, র‍্যাফল ড্র, লটারি, অশ্লীল নৃত্য, নীতিবিবর্জিত আচরণ, সমাজ ও পরিবেশবিরোধী কার্যকলাপ করা যাবে না; ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন কোনো কার্যকলাপ হতে বিরত থাকতে হবে; নামাজের সময় উচ্চ শব্দে স্পিকার বা মাইক বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে; বৈশাখী মেলায় আসা নারীদের যাতে কেউ উত্ত্যক্ত বা হয়রানি করতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে; গণ–উপদ্রব ও অসামাজিক কার্যকলাপ সৃষ্টি হয় এমন কাজ হতে বিরত থাকতে হবে; বৈশাখী মেলা চলাকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে থানা–পুলিশ মেলার কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে; মাঠের যেকোনো ক্ষয়ক্ষতির জন্য আয়োজক কমিটিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং এই অনুমতিকে ভবিষ্যতে নজির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

আরও পড়ুনঅনুমতি বাতিল হলেও বৈশাখী মেলা করার ঘোষণা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের২১ ঘণ্টা আগে

আজ বিকেলে বিটি মাঠ নামে পরিচিত অধ্যাপক হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, শর্ত অনুযায়ী ক্রিকেট পিচের চারপাশে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হচ্ছে। মাঠের পাশে বাঁশের খুঁটি দিয়ে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে।

চারটার দিকে মাঠ পরিদর্শনে আসেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শর্তগুলো পালন করা হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে এসেছেন তিনি। শর্ত ভঙ্গ হয়েছে এমন কোনো বিষয় তার চোখে পড়েনি। তিনি আরও বলেন, শর্ত পালন নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই মেলা হোক, কিন্তু মাঠ নষ্ট করে নয়। শর্ত মেনে মেলার আয়োজন হলে সেটা ভালো। তবে শর্তগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না, সেটা তদারকি করা জরুরি।’

মাঠে অনুশীলনকারী এক খেলোয়াড়ের বাবা বলেন, মাঠের অবস্থা যেন খারাপ না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নজরদারি দরকার।

এদিকে মেলার অনুমতির প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেরানীগঞ্জ উপজেলা শাখা আজ মাঠে ‘শান্তিপূর্ণ অনশন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত মাঠে কাউকে অনশন করতে দেখা যায়নি। পরে ছয়টার দিকে ৩০ থেকে ৩৫ জন সেখানে উপস্থিত হন। তাঁরা সেখানে অবস্থানরত ইউএনওর সঙ্গে মেলার শর্তাবলির বিষয়ে কথা বলে চলে যান।

অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেরানীগঞ্জ উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আল আমিন মিনহাজ বলেন, ‘১৭টি শর্তে জেলা প্রশাসন মেলার অনুমতি দিয়েছে। শর্তগুলো আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হওয়ায় অনশন না করার সিদ্ধান্ত নিই। যদি আয়োজক কর্তৃপক্ষ ওই সব শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে পরবর্তী সময়ে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

প্রসঙ্গত, পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ওই স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মো.

সামিউল্লাহর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেলার অনুমতিও দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন মেলা আয়োজনের অনুমতি বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। গত শনিবার অনুমতি বাতিলের তীব্র প্রতিবাদ জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সেদিন তিনি বলেন, ‘কাফনের কাপড় পরে হলেও এই মাঠে মেলা করব।’ তাঁর এমন মন্তব্যের পর ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ল র অন ম ক র যকল প ব এনপ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ

সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।

এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।

তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।

আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।

অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।

অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।

আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।

আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ‍্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’

আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগে

যতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।

তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
  • ৩ দাবিই পূরণ চান অনশনরত জবি শিক্ষার্থীরা
  • টানা ৩০ ঘণ্টা অনশনে তিন জবি শিক্ষার্থী অসুস্থ
  • তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
  • তিন দাবিতে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা
  • ডিসেম্বর মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আশ্বাস জবি উপাচার্যের
  • জকসুর রোডম্যাপসহ ৩ দাবিতে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা
  • সম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী