প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তিতে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে দিনাজপুর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে চার হাজার প্রজেক্টর, স্ক্রিন, কেবল ও ব্যাগ আসে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি ১ হাজার ৬৫৪টি ও আরেকটি ২ হাজার ৩৪৬টি প্রজেক্টরসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করে। প্রথমটির সরবরাহ করা ১৭টি প্রজেক্টরসহ বিভিন্ন সামগ্রী বুয়েটে পাঠানো হয় টেস্টের জন্য। বাকি ১ হাজার ৬৩৭টি জেলার ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয়।
গত বছরের আগস্ট মাসে এসব বিতরণের পর প্রায় আট মাস পার হয়েছে। এরই মধ্যে হঠাৎ গত সপ্তাহে এসব ফেরত দেওয়ার জন্য ১৩টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিদ্যালয়গুলো এসব ফেরতও দিয়েছে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, এসব সরঞ্জাম যাচাই-বাছাই না করেই এবং নির্দেশনা আসার আগেই ভুলে বিতরণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য, এসব সামগ্রী গ্রহণের সময় কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হলেও ফেরত নেওয়ার সময় দেওয়া হয়নি কোনো ডকুমেন্টস। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রজেক্টর দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছিল। হঠাৎ এসব সামগ্রী বিদ্যালয়গুলো থেকে ফিরিয়ে নেওয়ায় এ কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম রয়েছে, এসব সামগ্রী একটি একটি করে বুঝে নিতে হবে। অধিদপ্তর থেকে এক্সপার্টরা এসে এসব যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। কিন্তু সেটি হয়নি, বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমান কর্মকর্তার যোগদানের আগেই এসব হয়েছে। টেকনিক্যাল কমিটির যাচাই ছাড়া এসব কোন কোন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হবে, এমন নির্দেশনা ছিল না। এক্সপার্টরা এসব যাচাই-বাছাইয়ে এলে দেখা যায়, অনেকগুলো বিতরণ হয়ে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে বলা হয়।
২০২৪ সালের ২১ আগস্ট বিরল উপজেলায় ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রজেক্টরসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। এগুলো গত ৯ ও ১০ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা অফিস ফেরত নিয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুর্শিদা খাতুন জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে এসব ফেরত নিয়েছেন তারা। বোচাগঞ্জের ১২৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরণ করা সামগ্রীও ফেরত নেওয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিকের ভাষ্য, প্রজেক্টর ও অন্যান্য সামগ্রী সব বিদ্যালয় থেকে ফিরিয়ে নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন। এসব বিতরণে ভুল ছিল।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, দুটি কোম্পানি থেকে চার হাজার প্রজেক্টর, স্ক্রিন, কেবল ও ব্যাগ আসে দিনাজপুরে। এগুলো মূলত দিনাজপুরের পাশাপাশি লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ছিল। যেসব প্রতিষ্ঠানে এসবের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেসব বিদ্যালয়ে এগুলো দেওয়ার কথা। নিয়ম থাকলেও এসব বুয়েটে টেস্ট করা হয়নি। পাশাপাশি কোন কোন প্রতিষ্ঠানে বিতরণ হবে, তারও নির্দেশনা ছিল না।
দিনাজপুরসহ ১৯টি জেলায় অধিদপ্তর থেকে এসব সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিতরণ হবে। কিন্তু তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভুলে এসব দিনাজপুরের জন্য বরাদ্দ বলে মনে করেন। ১৩ উপজেলার ১ হাজার ৬৩৭টি বিদ্যালয়ে 
এসব বিতরণও করা হয়। চলতি মাসে বিষয়টি জানার পর শিক্ষা কর্মকর্তা সেসব প্রজেক্টর ও সরঞ্জাম ফেরত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে এসব ফেরত নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক। তিনি বলেন, একটি একটি করে এসব সামগ্রী যাচাই-বাছাই করা হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে অধিদপ্তর থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করবেন তারা। জেলায় ১ হাজার ৮৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অনেক বিদ্যালয়ে প্রজেক্টরসহ সংশ্লিষ্ট সামগ্রী রয়েছে। যেসব প্রজেক্টর নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার হয়নি। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠানে আগে থেকে প্রজেক্টর রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র র জন য এসব ব উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ