লাল কাপড়ে বাঁধাই করা খাতাটি দেখলে প্রথমেই মনে পড়বে ‘বাকীর খাতা শূন্য থাক’ পঙ্ক্তিটির কথা। এ কি শুধু পরম্পরার ঐতিহ্য! মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, বিনিময়ের আস্থা-বিশ্বাসের প্রতীক লাল কাপড়ে বাঁধাই করা খাতাটি, যার আরেক নাম ‘হালখাতা’। তবে হালখাতা শব্দ মানে শুধু মলাট আঁটা পৃষ্ঠা নয়, বরং এর সঙ্গে আরও বেশি জড়িয়ে আছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের ইতিহাস। সেখানে দেনা শোধ এবং নতুন খাতায় হিসাব তোলা উপলক্ষে দেনাদারকে নিমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ আছে। এখনো কিছু কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বছরান্তে জমা, খরচ ও বাকির হিসাবের জন্য বদলে যায় পুরোনো খাতাটি। কিন্তু দেনাদারকে আগের মতো আর নিমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ নেই। তাঁকে কাঠের বেঞ্চে বসিয়ে মিষ্টি, নিমকি আর তরমুজের ফালি খাইয়ে আতিথেয়তা করার চল নেই পাওনাদারের। গ্রামে-গঞ্জে-সদর-মফস্সল আর নগরে এই ছিল চৈত্রসংক্রান্তির আরেক বড় আয়োজন।
গত বুধবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে বনেদি, পুরোনো, নতুন, খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখনো কিছু কিছু জায়গায় ব্যবসার হিসাবপত্র খাতাতেই হয়ে থাকে। তাতে হিসাব রাখতে ও বোঝাতে সুবিধা হয়। ‘সরকার’ পদবির ব্যক্তি এই হিসাব লেখার কাজ করেন। তিনিই কিনে নেন ৩০০ থেকে ৫০০ পৃষ্ঠার কয়েকটি খাতা। কিন্তু সেই আমন্ত্রণের ব্যাপারটি গত হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা, বাকিতে বিক্রি কমে যাওয়া এবং হিসাবের জন্য প্রযুক্তিতে নির্ভরশীলতার কারণে।
তাঁতীবাজারে লম্বা টানা পথের দুপাশ দিয়ে সোনার দোকান। এখানে পাইকারি, খুচরা সোনা বেচাকেনাসহ সোনা বন্ধক রেখে টাকা ধার দেওয়া হয়। এখানকার শরীফ জুয়েলার্সের মালিক এবং বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, বছরে তাঁদের ৩০০ পৃষ্ঠার ৭ থেকে ৮টি খাতা প্রয়োজন হয়। জমা, কর্তন, দেনা, পাওনা—এ সবকিছুর খাতা হয় পৃথক পৃথক। নতুন বাংলা বছরে শুধু পাওনা লেখা হয়, তা নয়, হিসাব চূড়ান্ত করে নতুন বছরের আবার নতুন খাতা শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, কারখানায় তৈরি হয়ে খাতা যায় বাংলাবাজারের বিভিন্ন দোকানদারের কাছে। তাঁদের কাছ থেকে হকাররা এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে।
এ কথা সত্যি, হালখাতা রাজধানীতে আটকা পড়েছে নির্দিষ্ট এক সীমানায়। তাঁতীবাজার আর শাঁখারীবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধোয়ামোছার কাজ শুরু হয়েছে গত শুক্রবার। শরীফ জুয়েলার্স থেকে সামান্য এগিয়ে পি সি চন্দ্র জুয়েলার্স। এ দোকানের কর্মচারীরা বলেন, চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে তাঁদের ধোয়ামোছাও শুরু হবে। আমন্ত্রণ না জানালেও কেউ এলে তাঁর আতিথেয়তার ব্যবস্থা থাকবে। তবে হিসাব তাঁরা রাখবেন সেই লাল বাঁধানো খাতায় টুকে টুকে। নতুন বছরে নতুন খাতায় উঠে যাবে বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের একটি সামষ্টিক হিসাব।
লাল কাপড়ে বাঁধাই করা হালখাতা বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখছেন এই বিক্রেতা। তাঁতীবাজার, পুরান ঢাকা, ১২ এপ্রিল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাখা সভাপতি এসএম ফরহাদ।
আগামী ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট এই কর্মসূচিগুলো অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনে থাকছে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বিপ্লবী নাটক, গান, কবিতা, আলোচনা সভা ও বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী। কর্মসূচির সূচনা হবে ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) ভোর ৫টায় প্রতীকী সাইকেল র্যালির মাধ্যমে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে গণভবন পর্যন্ত যাবে।
আরো পড়ুন:
মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপকে চলছে বেরোবি
তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
সকাল ৯টায় টিএসসিতে থাকবে সাধারণ নাস্তার আয়োজন। এর পরপরই প্রদর্শিত হবে ‘জুলাই বিপ্লব’ ভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র। একইসঙ্গে বিপ্লবী গান ও কবিতা পরিবেশিত হবে । সকাল ১০টা থেকে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের মুখে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা শোনার আয়োজন থাকবে।
দুপুর ২টায় একটি মাইম পরিবেশনা ও নাটক মঞ্চস্থ হবে। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা ও সাড়ে ৫টায় পরপর আরো দুটি নাটক প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি প্রতীকী বিতর্ক, যেখানে গণআন্দোলনে নিহতদের উত্তরাধিকার ও আত্মিক উপস্থিতিকে ঘিরে আলাপ-প্রতিআলাপের একটি রূপক পরিসর গড়ে উঠবে ।
৬ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতেই থাকবে রাজনৈতিক ও দার্শনিক আলোচনা সভা। সকাল ১০টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পলায়নের ১ বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি ও ডাকসু নির্বাচন’ বিষয়ে আলোচনা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ইসলাম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক মতবিনিময়ের মাধ্যমে পর্দা নামবে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির।
কর্মসূচির তৃতীয় দিন ৭ আগস্ট দিনব্যাপী চলবে বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। সেখানে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ও গণআন্দোলন সংশ্লিষ্ট নানা দলিল, ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণজাগরণ ও ছাত্র প্রতিরোধ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। সেই ঘটনার স্মরণে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণের প্রয়াসে ঢাবির টিএসসি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা আয়োজন করতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘আমরাই ৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।”
তিনি বলেন, “এ আয়োজন হবে শিল্প, সংস্কৃতি, স্মৃতি ও রাজনৈতিক ভাবনার এক সংমিশ্রণ। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রেরণা। আর সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা সেই প্রতিরোধ চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী