‘আইজ কিতা ফয়লা বৈশাখ নি, ভালা দিনে পুয়া জন্ম নিছে’
Published: 15th, April 2025 GMT
বাংলা নতুন বছরের প্রথম সকালে মা হয়েছেন রুহেনা বেগম (২২)। নির্ধারিত তারিখের আগে স্বাভাবিকভাবে প্রসব হয়েছে তাঁর ছেলেসন্তানের। সমকালের প্রজন্ম বরণের কথা শুনে লজ্জায় তিনি মুখ লুকিয়ে ফেলেন ওড়নায়। সেই কক্ষে কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে বিষয়টি শুনে আপ্লুত হয়ে ওঠেন নবজাতকের বাবা হাবিবুর রহমান। তাঁর কাছ থেকে বর্ণনা শুনে রুহেনা বলে ওঠেন, ‘আইজ কিতা পয়লা বৈশাখ নি? বড়ো ভালা দিনে পুয়া (ছেলে) জন্ম নিছে।’
আগের রাতটি মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে তীব্র যন্ত্রণায় কেটেছে এই গৃহবধূর। তাঁর বাবার বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের কিচ্যা জালালপুর। গত বছর রুহেনার বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ঐয়া গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বরিশালের একটি চীনা পাওয়ারপ্লান্টে কর্মরত। সন্তান প্রসবের আলামত শুনে দ্রুত বাড়িতে ফেরেন রোববার। কুশিয়ারা নদীপথ ও সড়ক পাড়ি দিয়ে এদিন বেলা ৩টার দিকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুহেনাকে।
রুহেনার সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর মা আলিমা বেগম (৫২)। তিনি জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মেয়ের প্রসবব্যথা তীব্র হতে থাকে। কখনও কমে, কখনও বাড়ে– এমন অবস্থা চলে ভোর পর্যন্ত। সোমবার ৫টার দিকে ব্যথা মাত্রা ছাড়ায়। তখন দুই নার্স রুহেনাকে নিয়ে যান প্রসূতি কক্ষে। অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা শুরু করেন। বাইরে দাঁড়িয়ে সুরা তেলাওয়াত করতে করতে আল্লাহর কাছে দয়াপ্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন আলিমা ও জামাতা হাবিবুর।
অবশেষে সোমবার সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালের এক আয়া তাদের জানান, ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন রুহেনা। এ সময় সব আতঙ্ক ছাপিয়ে আনন্দরেখা ফুটে ওঠে আলিমার মুখে। সকাল ৭টার দিকে নাতি কোলে নিয়ে আগের রাতের বর্ণনা দেন তিনি। পানখাওয়া ঠোঁটে তখন তৃপ্তির চিত্র।
কিছুক্ষণ পরই বিছানায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় রুহেনাকে। সেখানে সাংবাদিক দেখে লজ্জায় মুখ লুকান তিনি। তাঁর স্বামী হাবিবুর রহমানকে সমকালের প্রজন্ম বরণের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘এতো আমাদের সৌভাগ্য। বছরের পহেলা দিন ফজরের আজান শুনে পুবাকাশে সুরুজ ওঠার লগে লগে আমাদের ছেলে দুনিয়ার আলোর মুখ দেখেছে।’ স্ত্রীকে সংকোচ-লজ্জা সামলে নেওয়ার অভয় দিলে প্রসবযাতনা সামলে ওঠেন রুহেনা। লাজুক হাসিতে বলেন, ‘আইজ কিতা পয়লা বৈশাখ নি? বড়ো ভালা দিনে পুয়া (ছেলে) জন্ম নিছে। তার জন্মতারিখ ভুল পরবো না কোনোদিন।’
রুহেনা বলে ওঠেন, ‘সমকাল পত্রিকার ইতা রেকর্ডিং তো নেটে সারা দুনিয়ার মাইনষে দেখতে পারবো। গরিবের পোয়া জন্মায়াই পত্রিকার খবর হই গেছে।’ বলেই লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে ধরেন সদ্যপ্রসূতি এই তরুণী।
এরই মধ্যে রুহেনার চোখমুখে কিছুটা যন্ত্রণার চিহ্ন দেখে স্বামী হাবিব বলেন, তাঁর স্ত্রী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছে। যে কারণে কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনে বেড়ে উঠেছে। তাই সে স্বভাবেও লাজুক। গত বছর পারিবারিকভাবেই পাশের গ্রামে বিয়ে করেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের এক স্বাস্থ্যকর্মী তাদের জানিয়েছিলেন, কয়েকদিন পরই সন্তান প্রসব করবেন রুহেনা। তবে আগেই ব্যথা অনুভব হওয়ায় ঝুঁকি না নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাবিব বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে সিজার লাগেনি, শরীরে কাটাকাটি না লাগায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’
ভিডিওচিত্র ধারণের সময় একবারের জন্যও চোখ খোলেনি নবজাতক। আচ্ছন্ন ছিল গভীর ঘুমে। এরই মধ্যে তোয়ালে পেঁচানো অবস্থায় কখনও বাবার কোলে, কখনও নানুর কোলে যাচ্ছিল শিশুটি। দুই নার্স মিলু পাল ও তাহমিনা আক্তার তাদের সার্বিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন। মিলু পাল বলেন, সোমবার ৫টা ৫০ মিনিট ও সোয়া ৬টার দিকে তারা দুটি স্বাভাবিক প্রসব করিয়েছেন। রুহেনা বেগম ও তাঁর নবজাতক সুস্থ আছে। নববর্ষের ছুটি থাকায় শিশুটিকে এদিন জন্মের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
গান নিয়েই আমার সব ভাবনা
কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–
‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী?
শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?
সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি।
প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য?
হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।
প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন?
আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি।
গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে?
সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।