নওগাঁয় ছয় দফা দাবিতে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নওগাঁ-বগুড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নওগাঁ-বগুড়া রুটসহ শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নওগাঁ-বগুড়া রুটে চলাচল করে দূরপাল্লার কোচ এবং আন্তজেলা রুটে চলাচল করা বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকা পড়ে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

নওগাঁ পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী মোত্তাকিনুল আলম বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি দিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। এই রায় তাঁরা বাতিল চান। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ২০২১ সালে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

আরেক শিক্ষার্থী জাকির রাজিবুল হক বলেন, ‘ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছি।’

আরও পড়ুনতেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ৫৫ মিনিট আগে

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে এক নম্বর হচ্ছে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে। তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।

আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ য় নওগ

এছাড়াও পড়ুন:

৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অভিযুক্তরা এর আগে শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদেরকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

শেয়ার কারসাজির কোম্পানিগুলো হলো- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ১০ দিনে কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে ওই সময়কালে গুঞ্জন ছিল- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৩ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মো. এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি

স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মো. সাইফ উল্লাহ, মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সাইফ উল্লাহ। আর তাকে সহযোগিতা করেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহর শ্যালক মো. এ.জি. মাহমুদ। আর এস. এম. মোতাহারুল জানান তাদের সহযোগী। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তির বিও হিসাব রয়েছে। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায়। তারা সবাই সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী।

এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্ব থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতেও জড়িত থাকার অভিযোগে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।

ওই বছরের মে মাসে ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ৩০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

একই বছরের আগস্টে জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. সাইফ উল্লাহকে ৪০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম

২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৭.৩৫ শতাংশ ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১৪.৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ায় কারসাজি চক্র। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির তদন্তে দীর্ঘদিন পর অবশেষে তা প্রমাণিত হয়েছে।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত
কমিশন জানায়, অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এ কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা ধার্য করা হয়।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন মেয়র শাহাদাত
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড