ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়া সেই বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ
Published: 16th, April 2025 GMT
রাজশাহীর বাঘায় চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়া সেই বৃদ্ধ মীর রুহুল আমিনের (৭০) মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। পরিবারের দাবি, ‘তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী ও জেদি মানুষ ছিলেন। তার মনে যা চায়, তা করতেন। কারও কথা শোনতেন না।’ তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কোমরের ব্যথায় ভুগছিলেন। পরিবারের ধারণা, অসুস্থতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে স্থানীয়দের ধারণা, ঋণের চাপে পড়ে তিনি আত্মহত্যা করছেন।
জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন মীর রুহুল আমিন। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আড়ানী রেলস্টেশনে ঢাকাফেরত ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়ে তাঁর আত্মহত্যার সময় কয়েকজন তরুণ টিকটক করছিলেন। তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে তার আত্মহত্যার দৃশ্য। এতে দেখা যায়, স্টেশনে একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটি ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে। ট্রেন কাছে আসামাত্রই মীর রুহুল আমিন লাইনের ওপরে শুয়ে পড়েন। ট্রেনের চাকা তার দেহকে দুই ভাগ করে দিয়ে যায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা বিভিন্ন মন্তব্য করে।
এতে দেখা গেছে, নিহতের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মন্তব্য করে অনেকে পোস্ট দেন। রুহুল আমিনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে বুধবার (১৬ এপ্রিল) কথা হয় ছেলে মীর মশিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। একটা জেদি মানুষ ছিলেন। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, তিনি কারও কথা শোনেন না। মনে যা চায়, সেটা করতেন। ঘটনার দিন বাবা আড়ানী স্টেশন বাজারে গিয়েছিলেন পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। তার মধ্যে তিনি পেঁয়াজ ঢেকে রাখার জন্য পলিথিনও কিনেছেন।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাবার মৃত্যু নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন লেখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেখানে বাবাকে না খেতে দিয়ে ছেলের বৌদের দ্বারা নির্যাতন, মেয়ে-বাবাকে দেখেন না ইত্যাদি। আসলে প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, বাবা-মার আমরা দুই সন্তান। বড় বোন মৌসুমী আক্তারের ২০ বছর আগে বিয়ে হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। বোন শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। আর আমি চাকরির সুবাদে স্ত্রী নিয়ে ঢাকায় থাকি। শুধু বাবা-মা থাকতেন বাড়িতে।’ তবে মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব না ছড়িয়ে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার দাবি জানান তিনি।
মীর রুহুল আমিনের স্ত্রী মরিয়ম বলেন, তার স্বামীর কোমরের সমস্যা ছিল, একটু কাত হয়ে হাঁটতেন। ঘটনার দিন সকালে খাওয়াদাওয়ার পরে তিনি চিকিৎসক দেখাতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। বেলা ৩টার আগে ও পরে তার সঙ্গে মুঠোফোনে দুবার কথা হয়েছে। শেষবার তিনি বলেছেন, কাল পেঁয়াজ তুলতে হবে। আকাশে মেঘ করছে। পলিথিন আনতে হবে। মীর রুহুল আমিন স্ত্রীকে আরও বলেছেন, তিনি আড়ানীতে এসেছেন। পলিথিনি নিয়ে আসছেন। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য কাঁচাবাজার লাগবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন।
মীর রুহুল আমিনের ভাতিজা মীর মোফাক্কর হোসেন বলেন, জমি বর্গা নিয়ে ১ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। এজন্য ঋণ করেছিলেন। ওই ঋণের কিস্তি চালানোর জন্য স্থানীয় আড়তদার ও মহাজনের কাছ থেকেও হয়তো ঋণ করেছিলেন। পেঁয়াজের দাম কম। তাই ঋণ শোধ করার দুশ্চিন্তায় তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, পারিবারিকভাবে জানা গেছে তিনি কিছু ঋণ নিয়ে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। শুনেছি, পেঁয়াজে আশানুরূপ ফলন হয়নি। পেঁয়াজে লোকসান হবে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র র হ ল আম ন র হ ল আম ন র কর ছ ল ন পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইসলামী দলগুলোর
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিলের দাবিতে একাট্টা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। এসব দাবি না মানলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও ডাক দিয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। নবগঠিত এনসিপির নেতাও কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের দাবি জানান।
সেমিনারে বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফউদ্দিন মাহদী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি।
কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল ছাড়াও এতে দাবি করা হয়, ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ও দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের নিয়ে কমিশন করতে হবে। কোরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতার আলোকে নতুন প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে হবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে উত্তরাধিকার এবং সম্পদে নারীর সমান অধিকারের যে সুপারিশ করা হয়েছে, একে ইসলামবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে দলগুলো। তাদের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারীবিষয়ক কমিশন অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। এতে ইসলাম চর্চা করা নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পাশ্চাত্যের ধারণায় বিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত কমিশন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আমলে নেয়নি।
ইসলামী দলগুলো একসঙ্গে কাজ করবে বার্তা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের ভাগ ভাগ, টুকরো টুকরো করে, আমাদের মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।’ অন্যান্য দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে যেতে চাই না। যদি বাধ্য করা হয়, তবে অবশ্যই আন্দোলনে নামব। জামায়াতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। কমিশনের সুপারিশগুলোকে স্ববিরোধী আখ্যা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার, আবার নারীর জন্য কোটা রাখারও সুপারিশ করেছে। নারীরা সম্মানের প্রতীক। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঘরে ঘরে সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়। কমিশনের প্রতিবেদন কোরআন-সুন্নাহবিরোধী হওয়ায় জামায়াত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কমিশনে যারা আছেন, তাদেরও প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি কমিশন করতে হয়, এ দেশের বিশাল সংখ্যক নারীদের প্রতিনিধি রেখেই করতে হবে।
চরমোনাই পীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আপনারা জনগণের ভোটে দেশ পরিচালনা করছেন না। তার পরও সব সময় আপনাদের সহযোগিতায় ছিলাম, এখনও আছি। আমাদের রাস্তায় নামিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিস্টদের সুযোগ করে দেবেন না। পরিষ্কার বার্তা, সেদিকে পা বাড়ালে ৫ মিনিটও সময় পাবেন না। নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে দাবি করে রেজাউল করীম বলেছেন, পলাতক শক্তি এর মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। বিগত সময়ে নাস্তিকরা যে চক্রান্ত করেছে, কখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আজও এমন হীন চিন্তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ইসলামপন্থি দলগুলোর ঐক্যের কথা বলেন চরমোনাই পীরও। তিনি বলেছেন, এই সেমিনারের মাধ্যমে ইসলাম ও মানবতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার পদক্ষেপ অনেকটা এগিয়ে গেছে।
মামুনুল হক বলেন, পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নারীবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েরও কেউ কেউ জড়িত। এই প্রস্তাবের একচুলও যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, আমাদের লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে। ১৬ বছর যুদ্ধ করেছি। আমরা ক্লান্ত। কিন্তু কোরআনের বিধানের মর্যাদা রক্ষায় যুদ্ধ করতে হলে করব।
আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার সমাজ ব্যবস্থা এই দেশে কায়েমের জন্য কমিশনের এমন সুপারিশ। কমিশন তাদেরই প্রতিনিধি। সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, এই কমিশন বাদ না দিলে সরকারের অন্য কমিশনগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কমিশনের সুপারিশ বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চেয়ে নারীর অবমাননা করা হয়েছে। নারীর সম্মানহানি করা হয়েছে।
সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনূস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু প্রমুখ।