ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীসহ বেশ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে দলটির নেতাকর্মীরা বুধবার অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। 

গত ৯ এপ্রিল দেশটির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। গত মঙ্গলবার আদালত তা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন করেন। এতে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে ২০ বিলিয়ন রুপির (২৩৩ মিলিয়ন ডলার) অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাছাড়া ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের সম্পদ অর্জনে অবৈধ শেল কোম্পানি গঠনের অভিযোগও তোলা হয়েছে। 

কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এই অভিযোগকে সরকারের ‘প্রতিহিংসা ও ভয় দেখানোর রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন। গান্ধী পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই তথ্যানুসারে, তদন্তে কংগ্রেস দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শ্যাম পিত্রোদাসহ দলের অন্য সদস্যদের নামও রয়েছে। বিজেপি সদস্য সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর করা মামলায় ইডি ২০২১ সালে এর তদন্ত শুরু করে। 

অভিযোগপত্রের ১ ও ২ নম্বরে রয়েছে সোনিয়া ও রাহুলের নাম। আছে কংগ্রেস নেতা সুমান দুবেইর নামও। দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউর বিশেষ পিএমএলএ আদালতে এই মামলার শুনানি হবে আগামী ২৫ এপ্রিল। বিশেষ আদালতের বিচারপতি বিশাল গগনে এ কথা জানিয়েছেন।

এর আগে ইডি ন্যাশনাল হেরাল্ডের ৬৬১ কোটি স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করতে নোটিশ জারি করে। দিল্লি ও লক্ষ্ণৌতে অবস্থিত ন্যাশনাল হেরাল্ড ও অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের (এজেএল) দপ্তর খালি করার নির্দেশও আসে। এই নোটিশ জারির তিন দিনের মধ্যেই কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো।

বিবিসি বলছে, গান্ধী পরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইডি আটঘাট বেঁধে নেমেছে। গত মঙ্গলবার হরিয়ানায় এক জমি কেনাবেচা মামলায় কংগ্রেস সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট ভদ্রকে জেরার জন্য ডেকে পাঠায় ইডি। টানা ছয় ঘণ্টা জেরা শেষে বুধবার আবারও তাঁকে হাজির হতে বলা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ইডিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে মোদির বিরুদ্ধে। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ