দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারের এক কিশোর। কিন্তু ধরা পড়ে মিয়ানমার পুলিশের হাতে। ২২ মাস জেল খেটে অবশেষে সে ফিরেছে মায়ের বুকে।

উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী খোঁজপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সাজ্জাদ মিয়া। অর্থ উপার্জনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে সাজ্জাদ। ২০২৩ সালের জুন মাসেই সে ধরা পড়ে মিয়ানমার পুলিশের হাতে। সেই দেশের আদালত তাকে দুই বছরের সাজা দিয়ে মালাইবানের কেলিকং জেলে আটকে রাখে। তবে মিয়ানমার সরকার এ কিশোরকে পাঁচ মাস জেল খাটার পর দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় কাগজপত্রে। পরে কূটনৈতিক পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে তাকে সেই দেশের জেল থেকে মুক্ত করে মঙ্গলবার সমুদ্র পথে আনা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও থানার ওসির উপস্থিতিতে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

গতকাল বুধবার বিকেলে আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাজ্জাদের বাবা আব্দুল হান্নান জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ। দালালের খপ্পরে পড়ে তাঁর ছেলে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল। তাদের কিছু না বলেই সে চলে গিয়েছিল। তাকে অনেক দিন খুঁজে না পাওয়ায় যোগাযোগ করে দেখেন সাজ্জাদের মতো হোয়াইকং ও আশপাশের উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজারের অনেক ছেলে দালালের খপ্পরে পড়ে দেশত্যাগ করেছে।

মিয়ানমারে সাজ্জাদের আটক থাকার খবর প্রসঙ্গে হান্নান জানান, বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার মাসখানেক পর তিনি জানতে পারেন সাজ্জাদ মালাইবানের কেলিকং জেলে আছে। এরপর অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) সাথে যোগাযোগ করেন। ওকাপ সাজ্জাদকে মিয়ানমার থেকে দেশে আনতে সার্বিক সহযোগিতা করে। তার পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পুলিশ, ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে যায়। তাদের সহযোগিতায় সাজ্জাদকে ফেরত পান। সাজ্জাদকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে আনন্দ অশ্রুতে সিক্ত হন তার মা আনু বেগম। 

সাজ্জাদ মিয়া বলে, ‘প্রথমে অন্যদের সঙ্গে আমাকে একটা গুদামে রেখেছে ওরা। সেখানে চার দিন থাকার পর মিয়ানমারের বোটে তুলে দেওয়া হয়। মিয়ানমারের শামিলা নামের একটা জায়গা আছে, সেখানে নিয়ে আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছিল, গালাগাল করছিল। পরে মিয়ানমারের মিলিটারির কাছে ধরা খাই।’

ওকাপের ফিল্ড অর্গানাইজার ছোবাহান আলী জানান, সাজ্জাদের বয়স বিবেচনায় তাকে আটকের পাঁচ মাস পর খালাস দেওয়া হয়। কিন্তু কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় তাকে দেশে ফেরত আনতে দেরি হয়।

ইউএনও সাজ্জাত হোসেন জানান, মানব পাচারকারীদের শনাক্তকরণের কাজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। গ্রামের নিরীহ ও সহজসরল কিশোর-যুবকদের স্বপ্ন দেখিয়ে অবৈধভাবে যারা বিদেশে পাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি না জেনে বুঝে কেউ যাতে পাচারকারীদের ফাঁদে না পড়ে সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী

অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।

গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।

এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।

আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগে

গতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।

ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’

সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।

আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার
  • পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী