পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে নড়িয়া ইউএনও কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
Published: 16th, April 2025 GMT
পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত নড়িয়ার ‘সর্বস্তরের জনসাধারণ’—এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচি চলাকালে কার্যালয়ে ছিলেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই সময় সেবা নিতে ইউএনওর কার্যালয়ে যেতে পারেননি লোকজন। এর আগে গত সোমবার চরআত্রা এলাকায় ও গতকাল মঙ্গলবার একই দাবিতে নড়িয়া উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদের (রয়েল) নেতৃত্বে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় ৩০টি খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নড়িয়ার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ও ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নেতা ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ার যে তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, তার বিপরীত পাশে চর পড়ে যাচ্ছে। ওই চরের কারণে ডান তীরে ভাঙন হতে পারে—এমন বাস্তবতায় স্থানীয় প্রশাসন চরের স্তূপ করা বালু নিলামে দিয়েছে। তিনি নিলামে অংশ নিয়ে ১০ কোটি ঘনফুট বালু কিনেছেন। ড্রেজারের চালকদের নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শরীয়তপুর কার্যালয় ও নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নড়িয়ার পদ্মার তীরবর্তী গ্রামগুলোয় নদী ভাঙছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনে নড়িয়ার ২৫ হাজার পরিবার গৃহহীন পড়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক। ভাঙনের কবল থেকে নড়িয়ার মানুষকে রক্ষা করার জন্য ২০১৯ সালে পাউবো নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। জাজিরার শফিকাজীর মোড় থেকে নড়িয়ার সুরেশ্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার নদীর চর খনন করা হয়েছে। ওই বাঁধ মজবুত করার জন্য নড়িয়ার সুরেশ্বর থেকে মুলফৎগঞ্জ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকায় নদীতে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ লাখ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এসব কাজ গত মার্চে শেষ করেছে পাউবো। সম্প্রতি চরের স্তূপ করা ১০ কোটি ঘনফুট বালু নিলামে বিক্রি করে উপজেলা প্রশাসন।
শরীয়তপুরের পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। নড়িয়ায় ডানতীর রক্ষা বাঁধের আশপাশ থেকে যাতে কেউ বালু উত্তোলন না করতে পারেন, সে জন্য উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটেরা অভিযান চালিয়েছেন। অভিযানে আটটি খননযন্ত্র জব্দ করে খননযন্ত্রের মালিকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ বালু উত্তোলন করে থাকেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫