সরকার পরিবর্তনের পর রপ্তানি আদেশ ও পণ্যের ক্রয় আদেশ কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক কারখানা। এর মধ্যে শিল্প পুলিশের একটি তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ৫ আগস্টের পর থেকে গত সাত মাসে ৫০টি কারখানা লে–অফ বা সাময়িক বন্ধ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ পোশাক, সুতা তৈরি ও জুতার কারখানা।

শিল্প পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) আওতাধীন ১৮টি, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) আওতাধীন ২টি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ১টি, বেপজার ৯টি ও অন্যান্য সংগঠনের সদস্যপদে থাকা ২২টি কারখানা সাময়িক বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে দুটি কারখানা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এর মধ্যে অধিকাংশ কারখানায় এখন কাজ না থাকায় সেগুলো সাময়িক বন্ধ। কাজ পেলে কারখানা খুলছে, আবার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাকি কারখানাগুলো সাবকন্ট্রাক্ট বা উপচুক্তির মাধ্যমে কাজ করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাজ কম থাকায় সেগুলো এখন সাময়িক বন্ধ। সম্প্রতি বেইস টেক্সটাইল নামের একটি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সাত মাসে ২০ বারের বেশি শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) ও আশপাশের সড়কে। গত এক মাসে অন্তত আটবার বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। ফলে এক–দুই ঘণ্টা সড়ক বন্ধ ছিল। এর মধ্যে গত ২৪ মার্চ প্রায় সাত ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ ছিল সড়ক।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কিছু কারখানার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। আবার অনেক পোশাক কারখানায় পর্যাপ্ত ক্রেতা নেই। ফলে বেতন-বোনাস নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘আন্দোলন’ করে সমাধান পাবেন এমন ধারণা থেকে শ্রমিকেরা বারবার সড়কে নেমে আসছেন। এতে তাঁদের দাবিদাওয়া পূরণ হলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

শ্রমিক অসন্তোষ, বারবার সড়কে

৫০টি কারখানা সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ নিয়ে শিল্প পুলিশে পক্ষ থেকে একটি তালিকাও করা হয়। শিল্প পুলিশের তালিকায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামে বেতন-বোনাস ও ছুটি নিয়ে সমস্যা হতে পারে, এমন ৪৪টি কারখানার নাম উল্লেখ করা হয়। তবে পুলিশ বলছে, সেগুলোতে তেমন ঝামেলা হয়নি।

তবে গত ঈদের পরও বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন–বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। ৯ এপ্রিল ঈদ বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মডেস্টি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও জেএমএস গার্মেন্টসের পাঁচ শতাধিক শ্রমিক। এক ঘণ্টার কাছাকাছি বন্ধ ছিল বন্দর-কাস্টমসগামী সড়ক। ২৪ মার্চ একই দাবিতে সড়কে অবস্থান নেন জেএমএস গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা।

জানা গেছে, গত সাত মাসে কারখানাগুলোর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া অর্ডারও কমেছে। ফলে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বেশ কিছু কারখানার ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে শ্রমিকদের দাবি, এ সুযোগে তাঁদের পাওনা পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করছে মালিকপক্ষ।

বিভিন্ন সময় আন্দোলন করা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সঠিক সময়ে বেতন ও বোনাসের দাবিতেই তাঁরা সড়কে নেমে আসছেন। অনেক কারখানা ঘোষণা ছাড়াই কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ চাকরি থেকে বের করে দিচ্ছে। এসব কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। কারখানামালিকেরা আশ্বাস দিলেও সময়মতো বেতন দেন না।

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো.

আবদুস সোবাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিইপিজেডে এখন দুটি কারখানা লে-অফে আছে। জেএমএস গ্রুপও ১৭ এপ্রিল বকেয়া পরিশোধ করে কারখানা খুলবে বলে জানিয়েছে। বর্তমানে আমরা চেষ্টা করছি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করে সব কারখানার সচল রাখতে। আমাদের শ্রমিকও আগের তুলনায় বেড়েছে।’

ভোগান্তিতে যাত্রী-পথচারী

সিইপিজেড এলাকাটি ফ্রি পোর্ট এলাকায় অবস্থিত। সিইপিজেডের যানবাহন চলাচল করে মূলত বিমানবন্দর সড়ক হয়ে। স্থানীয়ভাবে বন্দর-পতেঙ্গামুখী সড়ক নামে পরিচিত হলেও সম্প্রতি এর নাম পরিবর্তন করে বিমানবন্দর সড়ক করা হয়। প্রায় ১০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এই সড়কেই চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস, বন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যালয়, সিইপিজেড, কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলসহ আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো অবস্থিত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, চট্টগ্রাম ইপিজেড থানা এলাকার বাসিন্দা প্রায় আড়াই লাখ। অন্যদিকে বন্দর ও পতেঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা তিন লাখের বেশি। মূল শহরে যাতায়াতের জন্য বাসিন্দাদের প্রধান সড়ক বিমানবন্দর সড়কটি। অর্থাৎ এ সড়ক বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি দেখা দেয়। এ সড়কে শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়ালসড়ক থাকলেও সেটি গণপরিবহনে ব্যবহার কম।

সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি এ সড়ক দিয়ে বন্দর ও বেসরকারি ডিপোগামী বিভিন্ন ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ফলে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত এ যানবাহনগুলোও সড়কে আটকে থাকে। ৭ এপ্রিল আবদুল কুদ্দুস নামের এক লরিচালক বলেন, শ্রমিকদের দাবিদাওয়া অবশ্যই পূরণ করতে হবে, কিন্তু সেটির জন্য জনভোগান্তি করা ঠিক না।

সদ্য বদলি হওয়া চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সুলাইমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বারবার শ্রমিকেরা সড়কে আন্দোলনে নামছেন। আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন মূলত জেএমএস গ্রুপের দুটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন-বোনাস নিয়ে আন্দোলন করেছেন। মালিকপক্ষ ১৭ এপ্রিলের (আজ) মধ্যে পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ এমএস গ র অসন ত ষ কর ছ ন র সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, পদ ৪৭০

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এর অধীন দপ্তরগুলোর রাজস্ব খাতভুক্ত পদে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ২ ক্যাটাগরির পদে মোট ৪৭০টি শূন্য পদে নিয়োগ দেবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ৩ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে আবেদন শুরু হবে। ১৬তম গ্রেডের এসব পদে নিয়োগে আবেদন করা যাবে ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা ব্যতীত সব জেলার নাগরিকেরা আবেদন করতে পারবেন অস্থায়ী এ নিয়োগে।

পদের নাম ও বিবরণ

১. অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক

পদসংখ্যা: ২২৪

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: কোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে অন্যূন দ্বিতীয় বিভাগ বা সমমানের জিপিএসহ উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ; কম্পিউটারে এমএস অফিসে কাজ করার দক্ষতা এবং মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সংযুক্ত অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও দপ্তরের কমন পদ নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯–এর তফসিল-২ ও ৪ অনুযায়ী গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা (১৬তম গ্রেড)

বয়সসীমা: ১৮ থেকে ৩২

২. হিসাব সহকারী

পদসংখ্যা: ২৪৬

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: কোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে অন্যূন উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং কম্পিউটারে এমএস অফিসে কাজ করার দক্ষতা।

বেতন স্কেল: ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা (১৬তম গ্রেড)

বয়সসীমা: ১৮ থেকে ৩২

আরও পড়ুনসিনিয়র অফিসার নেবে বেসরকারি ব্যাংক, বেতন ৪০০০০১৪ ঘণ্টা আগেআবেদনসংক্রান্ত নিয়মাবলি

১। পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীরা https://dper.teletalk.com.bd এই ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র পূরণ করবেন (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা ব্যতীত)।

২। যোগ্যতা থাকলে একজন প্রার্থী একাধিক পদে আবেদন করতে পারবেন। এ জন্য তাঁকে আলাদা আলাদা ফি জমা দিতে হবে, তবে একই সঙ্গে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে কেবল একটি পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

আবেদন ফি

ভ্যাটসহ আবেদন ফি ১১২ টাকা (শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৫৬ টাকা)। আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফি জমা দিতে হবে।

প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূবিজ্ঞান অনুষদে এমএস প্রোগ্রাম, বহিরাগত শিক্ষার্থীদের সুযোগ
  • প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, পদ ৪৭০