আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে এ দফার পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সমঝোতা হয়নি বাংলাদেশের। ফলে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত জানায়নি সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। আইএমএফ বলেছে, এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে।

দুই সপ্তাহের পর্যালোচনার পর আজ বৃহস্পতিবার আইএমএফ আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান (তিনি মিশনপ্রধান) ক্রিস পাপাজর্জিওসহ অন্য ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এ বৈঠক হবে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল।

পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।

করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।

ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।

মিশনটি ৬ এপ্রিল থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ইত্যাদি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৬ ও ১৬ এপ্রিল এ মিশন বৈঠক করেছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও।

এর আগেও কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফ মিশন এসেছিল। মিশন শেষে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি ‘স্টাফ লেবেল’ চুক্তি হয়েছিল। এটি আসলে কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ। এবার এ ধরনের স্টাফ লেবেল চুক্তি হয়নি বলে জানা গেছে।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের বেলায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আশা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে আগামী জুনে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জবি শাখার ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদল ও অন্যান্য সক্রিয় সংগঠনের কর্মীদের হত্যাচেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের সবাই জবি শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য মো. আজিজুল হাকিম। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে তিনি গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে, জবি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন জুলকারনাইন (২৬)।

আরো পড়ুন:

গোবিপ্রবিতে ছাত্রলীগ নেতার সনদ তুলতে ছাত্রদল নেতার সহায়তা, অতঃপর…

জাবিতে জুলাই হামলায় জড়িত ২৬৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে শাস্তি

অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, শাহরুক আলম শোভন (২৮), জাহিদুল ইসলাম হাসান (২৫), মাকসুদুল হাসান আরাফাত (২৫), অভি ইসলাম (৩০), কামরুল ইসলাম (৩০ ও ৩১), অতনু গুন্ডা (৩০), তৌফিক এলাহী (৩০), মো. রিজভি খান (২৯), ফরহাদ মোল্লা (২৯), রায়হান (৩০), আল সাদিক হৃদয় (৩০), ইমরুল নিয়াজ (৩০), মো. সম্রাট হোসেন (২৯), সামিউল তাহসান শিশির (৩০), মির মুকিত (২৫), অপূর্ব লাবিব (২৪), মারুফ (২৮), মাহিনুর রহমান বিজয় (২৭), সাজবুল ইসলাম (২৭), অর্জুন বিশ্বাস (২৪), রবিউল ইসলাম (২৭), মিলন মাহফুজ (২৮), মেহেদী হাসান শাওন (৩০), আবু সুফিয়ান (২৭), সাইফ (২৭), সজল (২৯), রিফাত সাঈদ (২৭), অভিজিৎ বিশ্বাস (২৭), আব্দুল কাদের (২৭), রাজা হাওলাদার (১২), মাহবুব নয়ন (৩০), শরিফুল ইসলাম তানভির (২৯), আসাদুজ্জামান আসাদসহ (২৯) অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্তরা বিভিন্ন গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিতেন। এর মধ্যে ‘উৎপাত ১২’ নামের গ্যাংয়ের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান আসামি আকরাম হোসেন জুলকারনাইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে স্থাপিত একটি ‘টর্চার সেল’-এ ছাত্রদল ও অন্যান্য সংগঠনের ছাত্রদের ধরে এনে টর্চার, ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টা করা হতো।

২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট প্রধান আসামি আকরাম হোসেন জুলকারনাইন বাদী আজিজুল হাকিমকে রড, লাঠি, হকিস্টিক ও চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে গুরুতর জখম করেন বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে, আসামি আকরামকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করিয়ে থানা নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের গেটে তালা দেন। পরে বিভাগের ১০০ জনের মধ্যে ৫১ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত মুচলেকার মাধ্যমে তাকে কোতোয়ালি থানা থেকে মুক্ত করা হয়। তবে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

ডিএমপির কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার ফজলুল হক বলেন, “আকরাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও ছাত্রলীগের কোনো পদে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, “২০২৩ সালের ছাত্রদলের উপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে
  • বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ
  • পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে চটাব না: অর্থ উপদেষ্টা
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের পদাবনতি, দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  • দুই বছর ধরে ঝুলছে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার তদন্ত
  • নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জবি শাখার ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
  • আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ এখন নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ কিস্তি না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট করব: অর্থ উপদেষ্টা
  • সব শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না: অর্থ উপদেষ্টা