‘বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট ফান্ড গঠনে সহযোগিতা করবে সুইডেন’
Published: 17th, April 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিডা) বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট তহবিল গঠনে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সিডা দেশের সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও সহযোগিতা করবে।”
ঢাকায় পানি ভবনে পরিবেশ উপদেষ্টার সঙ্গে সুইডেন দূতাবাসের প্রথম সচিব (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) এবং সহযোগিতা বিষয়ক উপ-প্রধান নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রমের এক বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি।
আলোচনায় উভয়পক্ষ সুনির্দিষ্ট সময়সীমা এবং বিস্তারিত প্রকল্প কাঠামোর ওপর জোর দেন, যাতে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা যায় এবং একই সাথে সব প্রাসঙ্গিক অংশীজনের অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সংরক্ষণ উদ্যোগের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা, যার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষার একটি সামগ্রিক ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতি নিশ্চিত করা যায়।
আরো পড়ুন:
কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এলো বিপন্ন প্রজাতির মৃত কচ্ছপ
শরীয়তপুরে ৩১টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার
ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (বিসিডিপি) পরিকল্পিত উদ্বোধন, যা জলবায়ু কার্যক্রমের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।এছাড়া পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক সুপারিশমালা প্রণয়ন, তরুণ প্রতিনিধি, অভিজ্ঞ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং সক্রিয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গতিশীল ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং সুইডেন দূতাবাসের সাথে আনুষ্ঠানিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন।
এই ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা বাংলাদেশের সামগ্রিক জলবায়ু স্থিতিশীলতা কৌশলে একটি রূপান্তরমূলক মুহূর্তের সূচনা করে, যেখানে সুইডেনের সুপরিচিত প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং মূল্যবান স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয়ে টেকসই ও কার্যকর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
এর আগে ঢাকায় পানি ভবনে, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ব্রিটিশ বন্যপ্রাণী টেলিভিশন উপস্থাপক, প্রকৃতিবিদ, সংরক্ষণবিদ, লেখক, টেলিভিশন প্রযোজক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা নাইজেল অ্যালান মারভেনের সাথে বাংলাদেশের অনন্য বন্যপ্রাণীর ওপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ক মতবিনিময় করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ উপদ ষ ট সহয গ ত পর ব শ র একট জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫