একসময় নিজেই নিজেকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার একনায়ক’ বলেছিলেন এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকা এই প্রেসিডেন্টই এখন লাতিন আমেরিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছেন, ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন।

অথচ জানেন কী, ট্রাম্পের এই নয়া বন্ধু এক ফিলিস্তিনি বাবার সন্তান। নায়েব বুকেলের পরিবারের শিকড় পোঁতা আছে পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে।

বুকেলের বয়স এখন ৪৩ বছর। ২০১৯ সালে তিনি এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ভাইরাল টুইট আর বিটকয়েনের স্বপ্ন দেখিয়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এখন কুখ্যাত কারাগারের কারণে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দিন দিন গাঢ় হচ্ছে।

বুকেলের দাদা-দাদি বেথলেহেমের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯ শতকের শেষভাগ থেকে ২০ শতকের শুরুর দিকে ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টানরা যখন নিজেদের ভূখণ্ড ছেড়ে মধ্য আমেরিকায় চলে যেতে শুরু করেন, সে সময়ে বুকেলের দাদাও পরিবার নিয়ে মধ্য আমেরিকায় পাড়ি জমান।

এল সালভাদরে বুকেলের রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় মেয়র হিসেবে। তাঁকে ‘মিলেনিয়াল মেয়র’ বলে ডাকা হতো। ২০১৫ সালে তিনি রাজধানী সাল সালভাদরের মেয়র নির্বাচিত হন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বুকেলের মা একজন রোমান ক্যাথলিক, নাম ওলগা ওরতেজা দে বুকেলে। ওলগা এল সালভাদরের পূর্ব সীমান্তের একটি ছোট্ট শহরে বেড়ে উঠেছেন। আর বুকেলের বাবা একজন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী, নাম আরমান্দো বুকেলে ক্যাটান। তিনি এল সালভাদরের মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী নেতা।

নায়েব বুকেলে বাবা-মায়ের বড় সন্তান। তাঁর আরও ছোট তিন ভাই আছেন। এ ছাড়া নায়েব বুকেলের আরও ছয়জন বড় সৎভাই-বোন আছেন।

লাতিন আমেরিকার অপেক্ষাকৃত গরিব দেশ এল সালভাদরে বুকেলে বেশ বিত্তবৈভবের মধ্যে বড় হয়েছেন। গার্ডিয়ানে তাঁকে নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান তাই তাঁকে ‘বালক প্রিন্স’ বলে বর্ণনা করেছিল।

১৮ বছর বয়সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বুকেলে পারিবারিক ব্যবসায় মনযোগ দেন। তার আগে তিনি সেন্ট্রাল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করতেন।

পারিবারিক ব্যবসা করতে গিয়েই রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন নায়েব বুকেলে। ২০১২ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে এল সালভাদরের বড় রাজনৈতিক দল এফএমএলএনের সদস্য হিসেবে রাজধানীর কাছেই একটি ছোট্ট শহরের মেয়র নির্বাচিত হন বুকেলে।

তরুণ মেয়র বুকেলে প্রথাগত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলন না করে বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে থাকেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হুটহাট হাজির হয়ে যেতেন তিনি।

২০১৫ সালে একই দলের হয়ে রাজধানী সান সালভাদরের মেয়র নির্বাচন করে জিতে যান বুকেলে। কিন্তু তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে বুকেলের সম্পর্কে চিড় ধরে এবং দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিউ আইডিয়াস নামে নিজের নতুন দল গড়ে তোলেন তিনি।

পরে এক মেয়াদ মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর বুকেলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। এই নির্বাচনেও বাজিমাত করেন তিনি।

নিজে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত হলেও বুকেলে ইসরায়েলপন্থী নেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন। তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের সংগঠন হামাসকে ‘পশু সন্ত্রাসী’ বলেছেন। ২০১৫ সালে এল সালভাদরে দায়িত্বরত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বুকেলেকে ‘ইসরায়েলের একজন বন্ধু’ এবং ‘সহযোগিতার অংশীদার’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসকে নিয়ে নায়েব বুকেলে লিখেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এল সালভাদরের একজন নাগরিক হিসেবে আমি নিশ্চিত যে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে সেরা ঘটনা হতে পারে হামাস সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। ওই বুনো পশুরা ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে না। যাঁরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করেন, তাঁদের কেউ যদি ওই অপরাধীদের পক্ষ নেন, তবে তাঁরা বড় ভুল করবেন।’

আরও পড়ুনভুলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ব্যক্তিকে ফেরত দেবে না এল সালভাদর: প্রেসিডেন্ট নায়েব১৫ এপ্রিল ২০২৫

বুকেলে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কারণে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বুকেলে ট্রাম্প প্রশাসনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া বিশ্বের যেকোনো জায়গার ‘বিপজ্জনক অপরাধীদের’ নিজেদের কারাগারে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

এমনকি ‘অপরাধীরা’ যদি মার্কিন নাগরিক বা সে দেশে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত হন, তাতেও বুকেলের আপত্তি নেই।

বুকেলের ওই প্রস্তাবের পর ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এল সালভাদর সফরে যান। মার্চে ভেনেজুয়েলার দুই শতাধিক নাগরিকসহ আড়াই শর বেশি অভিবাসীকে এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে পাঠিয়ে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

কয়েক দিন আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন বুকেলে।

তথ্যসূত্র: নিউ আরব ডটকম, এপি, ব্রিটানিকা

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া অপরাধীদের নিজেদের কারাগারে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাব এল সালভাদরের০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ক র জন ত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন