ফিলিস্তিনি বাবার ছেলে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্পের নয়া বন্ধু কে এই নায়েব বুকেলে
Published: 17th, April 2025 GMT
একসময় নিজেই নিজেকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার একনায়ক’ বলেছিলেন এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকা এই প্রেসিডেন্টই এখন লাতিন আমেরিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছেন, ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন।
অথচ জানেন কী, ট্রাম্পের এই নয়া বন্ধু এক ফিলিস্তিনি বাবার সন্তান। নায়েব বুকেলের পরিবারের শিকড় পোঁতা আছে পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে।
বুকেলের বয়স এখন ৪৩ বছর। ২০১৯ সালে তিনি এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ভাইরাল টুইট আর বিটকয়েনের স্বপ্ন দেখিয়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এখন কুখ্যাত কারাগারের কারণে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দিন দিন গাঢ় হচ্ছে।
বুকেলের দাদা-দাদি বেথলেহেমের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯ শতকের শেষভাগ থেকে ২০ শতকের শুরুর দিকে ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টানরা যখন নিজেদের ভূখণ্ড ছেড়ে মধ্য আমেরিকায় চলে যেতে শুরু করেন, সে সময়ে বুকেলের দাদাও পরিবার নিয়ে মধ্য আমেরিকায় পাড়ি জমান।
এল সালভাদরে বুকেলের রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় মেয়র হিসেবে। তাঁকে ‘মিলেনিয়াল মেয়র’ বলে ডাকা হতো। ২০১৫ সালে তিনি রাজধানী সাল সালভাদরের মেয়র নির্বাচিত হন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুকেলের মা একজন রোমান ক্যাথলিক, নাম ওলগা ওরতেজা দে বুকেলে। ওলগা এল সালভাদরের পূর্ব সীমান্তের একটি ছোট্ট শহরে বেড়ে উঠেছেন। আর বুকেলের বাবা একজন ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী, নাম আরমান্দো বুকেলে ক্যাটান। তিনি এল সালভাদরের মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী নেতা।
নায়েব বুকেলে বাবা-মায়ের বড় সন্তান। তাঁর আরও ছোট তিন ভাই আছেন। এ ছাড়া নায়েব বুকেলের আরও ছয়জন বড় সৎভাই-বোন আছেন।
লাতিন আমেরিকার অপেক্ষাকৃত গরিব দেশ এল সালভাদরে বুকেলে বেশ বিত্তবৈভবের মধ্যে বড় হয়েছেন। গার্ডিয়ানে তাঁকে নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান তাই তাঁকে ‘বালক প্রিন্স’ বলে বর্ণনা করেছিল।
১৮ বছর বয়সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বুকেলে পারিবারিক ব্যবসায় মনযোগ দেন। তার আগে তিনি সেন্ট্রাল আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করতেন।
পারিবারিক ব্যবসা করতে গিয়েই রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন নায়েব বুকেলে। ২০১২ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে এল সালভাদরের বড় রাজনৈতিক দল এফএমএলএনের সদস্য হিসেবে রাজধানীর কাছেই একটি ছোট্ট শহরের মেয়র নির্বাচিত হন বুকেলে।
তরুণ মেয়র বুকেলে প্রথাগত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলন না করে বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে থাকেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হুটহাট হাজির হয়ে যেতেন তিনি।
২০১৫ সালে একই দলের হয়ে রাজধানী সান সালভাদরের মেয়র নির্বাচন করে জিতে যান বুকেলে। কিন্তু তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে বুকেলের সম্পর্কে চিড় ধরে এবং দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিউ আইডিয়াস নামে নিজের নতুন দল গড়ে তোলেন তিনি।
পরে এক মেয়াদ মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর বুকেলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। এই নির্বাচনেও বাজিমাত করেন তিনি।
নিজে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত হলেও বুকেলে ইসরায়েলপন্থী নেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন। তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের সংগঠন হামাসকে ‘পশু সন্ত্রাসী’ বলেছেন। ২০১৫ সালে এল সালভাদরে দায়িত্বরত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বুকেলেকে ‘ইসরায়েলের একজন বন্ধু’ এবং ‘সহযোগিতার অংশীদার’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসকে নিয়ে নায়েব বুকেলে লিখেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এল সালভাদরের একজন নাগরিক হিসেবে আমি নিশ্চিত যে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে সেরা ঘটনা হতে পারে হামাস সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। ওই বুনো পশুরা ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে না। যাঁরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করেন, তাঁদের কেউ যদি ওই অপরাধীদের পক্ষ নেন, তবে তাঁরা বড় ভুল করবেন।’
আরও পড়ুনভুলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ব্যক্তিকে ফেরত দেবে না এল সালভাদর: প্রেসিডেন্ট নায়েব১৫ এপ্রিল ২০২৫বুকেলে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কারণে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বুকেলে ট্রাম্প প্রশাসনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া বিশ্বের যেকোনো জায়গার ‘বিপজ্জনক অপরাধীদের’ নিজেদের কারাগারে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
এমনকি ‘অপরাধীরা’ যদি মার্কিন নাগরিক বা সে দেশে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্ত হন, তাতেও বুকেলের আপত্তি নেই।
বুকেলের ওই প্রস্তাবের পর ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এল সালভাদর সফরে যান। মার্চে ভেনেজুয়েলার দুই শতাধিক নাগরিকসহ আড়াই শর বেশি অভিবাসীকে এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে পাঠিয়ে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
কয়েক দিন আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন বুকেলে।
তথ্যসূত্র: নিউ আরব ডটকম, এপি, ব্রিটানিকা
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া অপরাধীদের নিজেদের কারাগারে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাব এল সালভাদরের০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র ক র জন ত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সুযোগ পেয়েও কেন রাজনীতিতে জাড়াননি প্রীতি জিনতা
বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। অভিনয়ে তাকে দেখা না গেলেও নিজের ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে তাকে প্রায়ই দেয়া যায়। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিলে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন তিন। অবশ্য এবিষয়ে টুঁশব্দও করেননি এই অভিনেত্রী।
এদিকে মাস তিনেক আগে কংগ্রেসের পক্ষ অভিযোগ তোলা হয়েছিল, প্রীতি জিনতার ১৮ কোটি টাকার ঋণ নাকি মকুফ করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। শুধু তাই নয়, প্রীতি নাকি তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিজেপির হাতে সঁপে দিয়েছেন- এমন অভিযোগও ওঠে। এরপর বলিউড নায়িকার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়।
সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডলে প্রীতি জিনতাকে একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি ভবিষ্যতে বিজেপিতে যোগ দেবেন? আপনার গত কয়েক মাসের টুইট দেখে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে। জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীদের এটাই একটা সমস্যা। সবাই এত বিচার করতে বসে যান সবকিছু নিয়ে। আমি যেমনটা আগে বলেছি, মন্দিরে, মহাকুম্ভে যাওয়া কিংবা নিজের পরিচয় নিয়ে আমি গর্বিত। তার মানে এই নয় যে এসমস্ত কারণে আমি বিজেপিতে যোগ দেব।’
প্রীতি বলেন, ‘ভারতের বাইরে থাকার ফলে আমি দেশের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছি এবং আর পাঁচজন ভারতীয়র মতোই গর্ববোধ করি আমার দেশকে নিয়ে।’
রাজনীতিতে না আসার কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসেও জানিয়েছিলেন প্রীতি জিনতা। সেসময় তিনি বলেন, ‘রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না। বিগত কয়েক বছরে একাধিক রাজনৈতিক দল আমাকে টিকিট দিতে চেয়েছে। এমনকি রাজ্যসভার আসনের প্রস্তাবও এসেছিল। তবে আমি বিনম্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমার ইচ্ছে নেই। আর আমাকে ‘সৈনিক’ বললেও অতিরঞ্জিত হবে না। কারণ, আমি একজন আর্মি পরিবারের সন্তান। আমার বাবা সৈনিক এবং আমার দাদাও। আর্মি পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমাদের মানসিকতা খানিক আলাদা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় কিংবা হিমাচলী বা বাঙালি বলে ভাবি না, আমাদের পরিচয় শুধুমাত্র ভারতীয়। আর হ্যাঁ, দেশভক্তি আমাদের রক্তে।’ সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন।