ঝড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভাসমান মাছের খামারে ফেরি
Published: 17th, April 2025 GMT
পাবনার পদ্মানদীর নাজিরগঞ্জ এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে ক্যামেলিয়া নামক একটি ফেরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ভাসমান মাছের খামারের উঠে পড়ে। এতে ফেরি ও ফেরির যাত্রী-যানবাহনের তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ওই ভাসমান খামারের সবকয়টি জালের খাঁচা ভেঙে অন্তত ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি খামার মালিকদের।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ির ধাওয়াপাড়া ফেরিঘাট থেকে নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ফেরি ক্যামেলিয়া ঝড়ের কবলে পড়ে। এসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরিটি নাজিরগঞ্জ ভাসমান মৎস্য খামারের উপরে উঠে যায়। এতে বেশ কয়েকটি নৌকা সহ ৪০টি ভাসমান মৎস্য খামারের খাঁচা নদীতে তলিয়ে যায়।
এসময় খাঁচা থাকা প্রায় ২৬ লাখ টাকার মাছ নদীতে অবমুক্ত হয়। এ ঘটনায় জাল, ড্রাম ও নৌকাসহ প্রায় ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মাছ চাষি ও স্থানীদের।
স্থানীয়দের দাবি, ফেরির চালক ঝড়ের মধ্যে ফেরির নোঙ্গর না করে ঘাটে আসার চেষ্টা করে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জেলেদের নৌকার উপর উঠে যায় এবং পরে পাশে থাকা ভাসমান খামারের উপর উঠে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাছ চাষি জহিরুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই ভাসমান খামারে মাছ চাষ শুরু করি। শ্রম ও ঘামে একটি থেকে এখন এটি ৪০টি খাঁচার ভাসমান মাছের খামার। খাঁচাগুলোতে শুধু ২৬ লাখ টাকার মাছ ছিল। এছাড়া ড্রাম ও জালসহ অন্যান্য সবকিছু মিলিয়ে এখানে আমাদের দুজনের বিনিয়োগ ৩৮ লাখ টাকা। আজকের এই দুর্ঘটনায় সবশেষ।”
তিনি বলেন, “আমরা বেকার মানুষ। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাসমান মাছের চাষ শুরু করি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৪ লাখ, ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ এমন করে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ২২ লাখ টাকা শুধু ঋণই নিয়েছি। এযাবৎ ৮ থেকে ১০টি খাঁচা তুললাম। এর মধ্যে মাত্র দুটি খাঁচায় কিছু কিছু মাছ আছে। আর বাকীগুলো খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে পরিশোধ করব এই টাকা? বন্দরের অফিসাররা এসেছিলেন, তারা বললেন আবেদন দিতে। এরপর তারা নাকি কি করবেন। এসময় ক্ষতিপূরণ না পেলে এই ঋণ পরিশোধের উপায় নেই।”
এদিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরিটি ভাসমান মাছের খামার ও জেলেদের নৌকার উপরে উঠে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোয় স্থানীয়রা ফেরিটি আটকে রাখেন। পরে নৌপুলিশ ও নৌবন্দরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্বস্ত করার পর ফেরিটি উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে পাবনার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে ক্ষতি নিরুপণ ও পূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন জ রগঞ জ র উপর
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে উৎসবমুখর পরিবেশে নবীন বরণ
বর্ণাঢ্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকেই কলেজ প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে নবীন শিক্ষার্থীদের আগমন আর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে। আনন্দ, উচ্ছ্বাস,ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে দিনব্যাপী এই আয়োজনে নবাগত শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়।
কলেজ প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল বর্ণিল সাজসজ্জা। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে একাডেমিক ভবন সব জায়গায় করা হয়েছে রঙিন সাজসজ্জা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই পার করেছে এক আনন্দমুখর সময়।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে নবীন শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতা পাঠ করা হয়।
আলোচনা পর্বের বক্তব্যে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “শিক্ষাজীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো আজ। নিয়মিত অধ্যয়ন, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলির সমন্বয়ে তোমরাই আগামী দিনের আলোকবর্তিকা।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ শুধু শিক্ষার নয়, শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক। নবীনদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন শুধু ভালো ফলই না করে, বরং সৎ, ন্যায়ের পক্ষে ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুগ্ধতা ছড়ায় শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাচ, গান, আবৃত্তি, রম্য বিতর্ক ও ফ্যাশন শো যা অনুষ্ঠানকে আরও প্রানবন্ত করে তোলে। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অদ্রি আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় কবিতা ‘বোঝাপড়া’।
একাদশ শ্রেণির ঊর্মি ও মাহী পরিবেশন করে দ্বৈত নৃত্য, যা উপস্থিত দর্শকদের করতালিতে মুখরিত করে তোলে সমগ্র অনুষ্ঠানস্থল।
ডিবেটিং ক্লাবের সদস্যরা পরিবেশন করেন রম্য বিতর্ক “আমার দেশে আমিই সেরা” যেখানে রসিকতা ও বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপে হাস্যরসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ঊর্মি ও তিশার দ্বৈত নৃত্য অনুষ্ঠানে বিশেষ নজর কাড়ে।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফ্যাশন শো। এ বছরের থিম ছিল— “সমাজে প্রান্তিক বা সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অবস্থান”। শিক্ষার্থীরা পোশাক ও উপস্থাপনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন সমাজের প্রান্তিক নারীদের সংগ্রাম, আত্মমর্যাদা ও জীবনের বাস্তব চিত্র।
পোশাকের নকশা, রঙ ও ভাবনায় ফুটে ওঠে নারীর শক্তি, সাহস ও সমতার বার্তা। দর্শক ও অতিথিরা প্রশংসা করেন শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও সচেতন চিন্তাধারা।
নবীন শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। একাদশ শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থী সায়মা ইসলাম মালিহা বলেন, “আজকের দিনটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। কলেজের পরিবেশ, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং সিনিয়রদের ভালোবাসা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মনে হচ্ছে আমি সত্যিই নতুন জীবনের এক সুন্দর অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি।”
আরেক নবীন শিক্ষার্থী তাবাসসুম তিথি বলেন, “আজ আমাদের কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হলো। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং এত সুন্দর আয়োজনের অংশ হতে পারা সত্যিই আনন্দের।”
পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কলেজের সাংস্কৃতিক দলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করে বিএনসিসি ও গার্ল গাইডের সদস্যরা।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবেরা তাহমিনা, অতিথি হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফজলুল হক রুমন রেজা, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. সেলিনা আক্তার, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমানসহ মহিলা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।