Prothomalo:
2025-08-01@02:02:27 GMT

জনগণকে জিম্মি করা যাবে না

Published: 18th, April 2025 GMT

দেশের প্রশাসনিক সংস্কৃতির একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হলো দীর্ঘসূত্রতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ সময়েই পরিস্থিতি চূড়ান্ত সংকটের রূপ না নেওয়া পর্যন্ত নাগরিকদের সমস্যা ও প্রত্যাশার প্রতি নির্লিপ্ত থেকে যায়। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের চলমান ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রায় সাত মাস ধরে দাবি তুলে ধরার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর নিস্পৃহতা এবং সময়োপযোগী সংলাপের অভাব ছাত্রদের বাধ্য করেছে রাজপথে নামতে। 

কিন্তু আন্দোলনের ধরন নিয়েও প্রশ্ন তোলা জরুরি। বিশেষ করে গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচির ফলে যে অভাবনীয় জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ঢাকা নগরী এমনিতেই প্রতিদিন তীব্র যানজটে জর্জরিত। তার ওপর নগরীর কেন্দ্রস্থলে সড়ক অবরোধ করলে স্বাভাবিক নাগরিক জীবন কার্যত থমকে যায়। ওই দিন ছিল এসএসসি পরীক্ষা, হাসপাতালে রোগী নেওয়ার তাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির পরীক্ষার মতো জরুরি কর্মকাণ্ড—সবই স্থবির হয়ে পড়ে। অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি, কেউ কেউ ফিরে যাওয়ার পথও খুঁজে পাননি। 

এই ধরনের পরিস্থিতি শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ ছিল না। দেশের অন্যান্য নগরেও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করায় সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। এমনকি বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিও ঘোষিত হয়েছিল, যা পরে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের হস্তক্ষেপে স্থগিত করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনায় কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তাঁরা সন্তুষ্ট নন এবং আবারও কর্মসূচিতে ফিরবেন। 

এখানেই সরকারের ব্যর্থতা প্রকটভাবে ধরা পড়ে। দাবির যৌক্তিকতা থাকলে সরকারকে তা মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। আর দাবি বাস্তবায়ন করা কঠিন হলে, সময়সাপেক্ষ হলে বা অযৌক্তিক হলে সেটাও স্পষ্ট করে একটি সমঝোতায় আসা সরকারের দায়িত্ব। সংকটকে ঝুলিয়ে রাখা বা দীর্ঘায়িত করা আত্মঘাতী। পাশাপাশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিও কিছু প্রত্যাশা থাকে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টির পথ বেছে নেওয়া যেমন তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি জনসম্পৃক্ততা কমিয়ে দেয়, তেমনি গণমানুষের সহানুভূতিও হারিয়ে ফেলে। 

সরকার ও নাগরিক—উভয় পক্ষের কাছ থেকেই সহিষ্ণুতা, দূরদৃষ্টি ও দায়িত্ববোধ প্রত্যাশা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে জনজীবনকে অচল করে দেওয়া কখনোই দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না। বরং নতুন প্রজন্মের সচেতন নাগরিক হিসেবে তাঁদের উচিত বিকল্প, সৃজনশীল ও কার্যকর পন্থায় তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করা। সংবাদ সম্মেলন করা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণ কিংবা নির্ধারিত জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি কিংবা প্রতীকী অনশন—এসব মাধ্যমেও দাবির পক্ষে জনমত তৈরি করা সম্ভব। 

অন্যদিকে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সংকট চরমে ওঠার আগেই আগ্রহ ও আন্তরিকতা দেখানো। ছাত্রদের দাবিগুলো কতটা বাস্তবসম্মত, কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য—তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া। মূলত কারিগরি শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি, যেখানে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান, ডিপ্লোমা ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির স্বীকৃতি, শিক্ষাক্রমের মানোন্নয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 

সরকারের সঙ্গে ছাত্রসমাজের সম্পর্ক যেন প্রতিনিয়ত সংঘর্ষে রূপ না নেয়—এটি সবার কাম্য। সরকারকে হতে হবে গণমুখী আর নাগরিকদের হতে হবে দায়িত্ববান। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি অবিলম্বে বিবেচনায় নিয়ে, একটি সুসংহত ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া সময়ের দাবি। আর শিক্ষার্থীদের প্রতিও আহ্বান—আন্দোলনের হাতিয়ার হোক সংযম ও সংবেদনশীলতা; জনদুর্ভোগ নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান

ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা ও নিষ্ঠুরতম বর্বরতা থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। 

আজ বুধবার ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’

ফিলিস্তিন সংকট সমাধান: সবার দৃষ্টি জাতিসংঘের বিশ্ব সম্মেলনে

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন পুর্নব্যক্ত করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনের একমাত্র পথ হিসেবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। 

গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের নেতৃত্বে গাজা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে প্রস্তত রয়েছে। তিনি গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বাধা দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা সর্বাত্বকভাবে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।

২০২৩ সালের অক্টোবরের পর হতে গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি আক্রমণের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ এবং একটি স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম করতে জাতিসংঘের সদস্যদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করার জন্য ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘জাতিসংঘ হাইলেভেল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর দ্য পিসফুল সেটেলমেন্ট অব দ্য কোয়েশ্চেন অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য টু-স্টেট সল্যুশন’ শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এতে বাংলাদেশসহ ১১৮টি দেশের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছে।

ঢাকা/হাসান/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনের চারপাশে হবে সুরক্ষাবলয়: পরিবেশ উপদেষ্টা