যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে প্রবৃদ্ধি কমলেও বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি নেই: আইএমএফ
Published: 18th, April 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও এ কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থাটি গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এক পূর্বাভাসে এ কথা জানায়।
আইএমএফ বলেছে, বাণিজ্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী শেয়ারের দাম কমেছে। দেশগুলোর আস্থায় ফাটল ধরার বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘পূর্বাভাস অনুযায়ী, আমাদের নতুন প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে নিম্নমুখী হবে। কিন্তু এতে মন্দা দেখা দেবে না।’
গতকাল আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় ‘সব দেশকে অবশ্যই নিজেদের ঘর সামলানোর প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে’।
ইউরোপের উদ্দেশে জর্জিয়েভা বলেন, ‘পরিষেবার বেলায় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের বিধিনিষেধ’ কমাতে হবে এবং একক বাজারকে ‘গভীর’ করতে হবে।
২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নানা হারে পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ১০ শতাংশ ন্যূনতম বা সর্বজনীন শুল্ক। এটি ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। অন্যদিকে নতুন উচ্চ শুল্ক ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন হঠাৎ তা চীন ছাড়া বিশ্বের বাকি দেশগুলোর জন্য ৯০ দিন মেয়াদে স্থগিত করেন তিনি।চীনের বিষয়ে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পরামর্শ, দেশটিকে সামাজিক সুরক্ষার জাল বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ কম ‘সতর্কতামূলক সঞ্চয়’ করে।
অন্যদিকে মার্কিন সরকারকে ঋণ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন জর্জিয়েভা।
২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নানা হারে পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ১০ শতাংশ ন্যূনতম বা সর্বজনীন শুল্ক। এটি ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। অন্যদিকে নতুন উচ্চ শুল্ক ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন হঠাৎ তা চীন ছাড়া বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য ৯০ দিন মেয়াদে স্থগিত করেন তিনি। পরে চীনসহ সব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার, মুঠোফোনসহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানিতে ঘোষিত পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করে ট্রাম্প প্রশাসন।
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার সঙ্গে বিশ্ব পুঁজিবাজারে ধস নামে। সে ধস এখনো কাটেনি। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বে মন্দা দেখা দিতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অর্থনীতিবিষয়ক কোনো কোনো সংস্থা। এই অনিশ্চয়তার মুখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যয় ও বিনিয়োগ কমাতে শুরু করেছে। কিছু দেশ নিজেদের মতো করে ট্রাম্পের শুল্ক মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, আমাদের নতুন প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে নিম্নমুখী হবে। কিন্তু এতে মন্দা দেখা দেবে না। —ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগত বুধবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) পূর্বাভাসে বলেছে, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে চলতি বছর বিশ্ববাণিজ্য কমবে।
এরপর যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একই ধরনের মন্তব্য করে। তারা বলেছে, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ঝুঁকির উপাদান বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। এ পরিস্থিতি আর্থিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে।
গতকাল ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) বলেছে, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে তারা মূল সুদের হার কমিয়েছে।
এসব পূর্বাভাসের তুলনায় আইএমএফের সতর্কতাকে কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হয়।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি: মন্দার চেয়ে খারাপ পরিস্থিতির শঙ্কাচীনের যেভাবে ট্রাম্পের শুল্কের জবাব দেওয়া উচিতট্রাম্পের শুল্কাঘাত মোকাবিলায় আসিয়ানের যা করা উচিত১৮ ঘণ্টায় কী ঘটেছিল, যা ট্রাম্পকে শুল্কনীতি স্থগিত করতে বাধ্য করেছিল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইএমএফ র প রব দ ধ ক র যকর
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।