ডিএসসিসিতে পছন্দের লোকদের দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন তাপস
Published: 18th, April 2025 GMT
নিয়মনীতি না মেনে নিজের লোকদের ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি বিপণিবিতানের ২০৬টি দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এসব বরাদ্দের ক্ষেত্রে লিখিত আদেশ, প্রশাসনিক অনুমোদন কিংবা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি; বরং ‘ওমুককে দোকানটা দিয়ে দাও’, মেয়রের মৌখিক নির্দেশে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেট উপআইন ২০১৬–এর পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন সংস্থার বর্তমান কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, করপোরেশনের মালিকানাধীন প্রতিটি বিপণিবিতানে নির্দিষ্টসংখ্যক (৩০ শতাংশ) দোকান মেয়র নিজে বরাদ্দ দিতে পারেন। এটি ‘মেয়র কোটা’ নামে পরিচিত। তবে তৎকালীন মেয়র তাপস এ কোটায় যেসব দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন, সেই বরাদ্দের নথিতে তাঁর সই বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমোদন নেই। যদিও এমন ‘নথিবিহীন’ বরাদ্দের ভিত্তিতে অনেকেই দোকান পেয়েছেন। কেউ কেউ দোকান বিক্রিও করে দিয়েছেন।
দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলবাজি ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য দোকান বরাদ্দ দেওয়া নেতিবাচক দৃষ্টান্ত। এভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবিযে চারটি বিপণিবিতানে দোকান বরাদ্দে এমন কাণ্ড হয়েছে, সেগুলো হলো সিদ্দিকবাজার মার্কেট, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেট, ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেট ও মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেট। এর মধ্যে সিদ্দিকবাজার মার্কেটে ৭৩টি, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেটে ৩১টি, ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেটে ৪৬টি ও মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেটে ৫৬টি দোকান মেয়র কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নগর–পরিকল্পনাবিদ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের মৌখিক নির্দেশে দোকান বরাদ্দ দুর্নীতিরই একটি রূপ। এটি শুধু নীতিমালার লঙ্ঘন নয়, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রতি সরাসরি আঘাত।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দোকান বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়টি বর্তমান প্রশাসনের নজরে আসে।
বরাদ্দ পেয়েছেন দলীয় ব্যক্তি, ঘনিষ্ঠজনেরাযাঁদের নামে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি অথবা সাবেক মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠজন। করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তার নামেও দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দোকান পেতে লিখিত আবেদন করার নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয়নি। ‘মেয়রের নির্দেশ’ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দোকান বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিদ্দিকবাজার মার্কেট, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেট ও ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেট—এই তিন বিপণিবিতানের ১৫০টি দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কেউ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতা, কেউ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা অথবা সংগঠনগুলোর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাপসের ব্যক্তিগত কাজে যুক্ত অন্তত সাতজন ব্যক্তিকেও দোকান দেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় আছেন একজন অভিনেত্রীও। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে এবং গোপালগঞ্জ এলাকার সংরক্ষিত আসনের এক সংসদ সদস্যকে।
এর মধ্যে সিদ্দিকবাজার মার্কেটে ৭৩টি, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেটে ৩১টি, ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেটে ৪৬টি ও মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেটে ৫৬টি দোকান মেয়র কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।আর মেরাদিয়া নগর কাঁচাবাজার মার্কেটের ৫৬টি দোকানের সব কটিই দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কাউন্সিলরের স্বজন ও করপোরেশনের প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের। একজন ব্যক্তিকে একটি দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কাউকে কাউকে একাধিক দোকানও দেওয়া হয়েছে।
দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করতে চাইলে সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে জিল্লুর রহমান আরও বলেন, দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতি’ঢাকা দক্ষিণ সিটির রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করপোরেশনের যেকোনো বিপণিবিতানের ৩০ শতাংশ দোকান মেয়রের জন্য বরাদ্দ থাকে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ দোকান মেয়র তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের বরাদ্দ দিতে পারেন। এর বাইরে সনদপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যের জন্য কিংবা জাতীয় পর্যায়ে অবদান রেখেছেন, এমন ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য ৫ শতাংশ; করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ২ শতাংশ দোকান মেয়র বরাদ্দ দিতে পারেন। কিন্তু সাবেক মেয়র তাপস এ নিয়ম মানেননি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলবাজি ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য দোকান বরাদ্দ দেওয়া নেতিবাচক দৃষ্টান্ত। এভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ঢ ক শ বর বর দ দ র র জন য র র জন ষ ট কর নগর ক ব ষয়ট ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ