ইয়ামালকে নিয়ে মেসি: সে এখনই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন
Published: 18th, April 2025 GMT
বার্সেলোনার কিংবদন্তি ও বর্তমান ইন্টার মায়ামি তারকা লিওনেল মেসি সম্প্রতি প্রশংসায় ভাসিয়েছেন উঠতি তরুণ উইঙ্গার লামিনে ইয়ামালকে। যাকে তিনি সরাসরি বলেছেন ‘বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন।’
মাত্র ১৮ বছর বয়সী ইয়ামাল বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ একাডেমির খেলোয়াড়। যেখান থেকে উঠে এসেছিলেন মেসিও। ক্লাবের জার্সি গায়ে অভিষেকের পর থেকেই নজর কাড়ছেন ইয়ামাল। বিশেষ করে হান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনার আক্রমণভাগের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। রাফিনহার সঙ্গে উইংয়ে তার আগ্রাসন ও ফুটবল বুদ্ধিমত্তা রীতিমতো প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক।
সম্প্রতি একটি শো’তে ইয়ামালের বিষয়ে মেসি বলেন, ‘‘ইয়ামাল যা দেখাচ্ছে, তা অসাধারণ। সে ইউরোতে স্পেনের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বয়স মাত্র ১৭! এখনো সে বেড়ে ওঠার পর্যায়ে আছে। ঠিক যেভাবে আমিও ধীরে ধীরে নিজেকে গড়ে তুলেছিলাম। ওর মধ্যে অবিশ্বাস্য গুণ আছে। আমি নিশ্চিত, সে এখনই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন।’’
আরো পড়ুন:
মেসির দাবি প্রতিনিয়ত মান বাড়ছে মেজর লিগের
নেইমারের সান্তোসে ফেরার পথে মেসির পুরনো কোচ
শুধু মেসি নন, তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও প্রশংসা করেছেন ইয়ামালের। সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সতীর্থ রিও ফার্ডিন্যান্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেছিলেন, ‘‘লামিনে ইয়ামালের মধ্যে অনেক প্রতিভা দেখি আমি। আশা করি ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না। ওর একটু ভাগ্যেরও দরকার। কারণ, বয়স এখনো খুবই কম। তবে আমি নিশ্চিত, এই প্রজন্মের সেরাদের একজন হবে সে।’’
মাত্র ১৬ বছর বয়সে লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার রেকর্ড গড়েন ইয়ামাল। এরপর ইউরোতে খেলতে নেমে হয়ে যান ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়। শুধু তাই নয়, ২০২৪ ইউরোতে স্পেনকে শিরোপা জেতাতে সাহায্য করে টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নেন তিনি।
ইয়ামাল ও তার দল বার্সেলোনা লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। এছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে। যেখানে তারা ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হবার অপেক্ষায় রয়েছে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল দ র একজন
এছাড়াও পড়ুন:
নীরব ভালোবাসার আরেক নাম
প্রতিটি সকাল শুরু হয় এক পরিচিত কণ্ঠের ডাক কিংবা শাসনে– যিনি চুপচাপ দায়িত্বের পাহাড় বয়ে বেড়ান, রুক্ষ স্বরে আমাদের জাগিয়ে তোলেন, তাড়াহুড়ো করে স্কুলে পাঠান। আমরা তাঁকে বলি ‘বাবা’। তাঁর চোখে-মুখে থাকে গাম্ভীর্য; কণ্ঠে থাকে কর্তব্যবোধের দৃঢ়তা। অনেক সময় তাঁকে মনে হয় কঠিন, অপ্রকাশ্য, যেন এক জীবন্ত দেয়াল– যার ওপারে আমরা পৌঁছাতে পারি না। অথচ এ মানুষটিই আমাদের জীবনের প্রথম নিরাপত্তার বর্ম, যিনি দিনশেষে সবার অলক্ষ্যে নিঃশব্দ ভালোবাসা ছড়িয়ে যান।
ছোটবেলায় আবেগ মানেই ‘মা’। কাঁদলে যিনি বুকে টেনে নেন, আদর করেন, আবদার শুনে নরম হয়ে যান– তাঁকে ভালোবাসা বোঝাতে কোনো সংকোচ হয় না। কিন্তু বাবা? তাঁকে ভালোবাসা বলা যেন কোনো নিষিদ্ধ চিঠি লেখার মতো। কেন এমন হয়? কেন বাবার চোখে জল মানে দুর্বলতা? কেন তাঁর মুখে ‘আমি ভালোবাসি’ শুনতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব?
এর পেছনে আছে সমাজ ব্যবস্থা; যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ‘পুরুষ’ নামক পরিচয়টিকে এক কঠোর কাঠামোয় আটকে রেখেছে। ছোটবেলায় যে ছেলেটি মায়ের পাশে রান্নাঘরে দাঁড়াতে চেয়েছিল, তাঁকে বলা হয়, ‘তুই ছেলে, এগুলো তোর কাজ না।’ যে কিশোর ক্লাসে হেরে গিয়ে কাঁদতে চেয়েছিল, তাঁকে শিখিয়ে দেওয়া হয়– ‘ছেলে হয়ে কাঁদিস কেন?’ এভাবেই একেকটা কোমল হৃদয় পাথর হয়ে যায়, একেকটা প্রাণবন্ত মানুষ হয়ে ওঠে নিঃশব্দ এক ‘পুরুষ’, যিনি পরে হন একজন ‘বাবা’- শক্ত, সংবেদনশূন্য, দায়িত্ববদ্ধ।
এই মানুষটিই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের জন্য লড়াই করেন। অফিসে মাথা নত করেন, রাস্তায় ঘাম ঝরান, দোকানে গিয়ে সন্তানের জন্য নতুন জামা কেনেন, অথচ নিজের পোশাকটা পুরোনো হয়েই পড়ে থাকে। তিনি হয়তো কখনও মুখ ফুটে বলেন না, ‘আমি ক্লান্ত’; কিন্তু তাঁর চোখের নিচের কালি, হাঁটার ধীরতা, নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাসগুলো বলে দেয় সবটুকু।
সমাজ তাঁকে শিখিয়েছে– ‘তুমি পুরুষ, তোমার ব্যথা নেই, তোমার দুঃখ নেই।’ অথচ তিনিও মানুষ। তাঁরও চোখে জল আসে, বুক চেপে ধরে কষ্ট জমে থাকে, গভীর রাতে সন্তানের পড়া দেখে চুপিচুপি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সমাজ তাঁকে সেই স্বস্তির জায়গাটা দেয়নি, যেখানে তিনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন, ‘আমিও কাঁদি’, ‘আমিও ভালোবাসি’।
আমরা বাবাকে ভয় করি, কারণ তাঁকে আবেগ প্রকাশ করতে দেখিনি। আমরা তাঁর কাছে আবদার করতে ভয় পাই, কারণ শিখে গেছি– ‘বাবা রেগে যাবেন।’ অথচ হয়তো তিনিই সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করেন সন্তানের একটি আদরের ছোঁয়ার জন্য। হয়তো তাঁর বুক ভরে যায় সন্তানের ছোট্ট একটি ‘ধন্যবাদ’ শোনে। এই মানুষটিই রাত জেগে সন্তানের জন্য ওষুধ আনেন, স্কুলে ভর্তি করাতে ভিড় ঠেলে লাইনে দাঁড়ান, বাইরে থেকে ফিরতে দেরি হলে মায়ের কাছে বারবার জানতে চান– ‘ও এসেছে?’
পিতৃতন্ত্র শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও কারাগার। এই কাঠামো পুরুষকে আবেগহীন, কঠোর, একতরফা দায়িত্বপ্রবণ রোবটে পরিণত করে। তারা ভুলে যান– সন্তানের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার হতে পারে কিছু প্রাণবন্ত সময়, কিছু গল্প, কিছু অনুভবের প্রকাশ।
আমরা যদি নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পারি; যেখানে ছেলেরা কাঁদতে পারবে, বলতে পারবে ‘আমি ভালোবাসি’; বাবারা সন্তানের সঙ্গে খেলা করবে, রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াবে– তবে হয়তো একদিন বাবাদের মুখেও ফুটে উঠবে সেই উষ্ণতা, যেটি এতদিন সমাজ ছেঁটে ফেলেছিল।
শিশুর জীবনে প্রথম নায়ক তাঁর বাবা। সেই নায়কের চরিত্র যেন শুধু কঠোরতা দিয়ে গড়া না হয়; বরং তাঁর মধ্যে থাকুক সহানুভূতি, অনুভূতি, গভীর ভালোবাসা প্রকাশের সাহস। বাবা যেন শুধু ছায়ার মতো না থাকেন, তিনি যেন হন আলো– যে আলো সাহস দেয়, ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয়।
এই বাবা দিবসে আসুন আমরা বাবাদের সেই জায়গাটা দিই– যেখানে তারা কাঁদতে পারেন, হাসতে পারেন, ভালোবাসতে পারেন। বাবা যেন একজন নিঃশব্দ সহযোদ্ধা না হয়ে হন একজন প্রকাশ্য ভালোবাসার মানুষ। আসুন, পিতৃতন্ত্রের তৈরি এই শৃঙ্খল ভেঙে বাবাদের ফিরিয়ে দিই তাদের মানবিকতা। ভালোবাসার ভাষায় উজ্জীবিত হোক বাবারা। v