চারটি বড় পরিবর্তনে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের উদ্বেগ
Published: 19th, April 2025 GMT
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত করেছে। ৭৩টি পিটিশনের শুনানির পর বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই চারটি প্রধান ইস্যু হলো– আইনের প্রযোজ্যতা, সরকারি জমিকে ওয়াক্ফ ঘোষণার বৈধতা, কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিলের গঠন এবং রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডের নতুন কাঠামো।
নতুন আইনের ধারা-২ অনুযায়ী, মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত যেসব ট্রাস্ট আগে আদালতের রায়ে ওয়াক্ফ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, সেগুলো আর এই আইনের আওতায় পড়বে না। অর্থাৎ, ধর্মীয় বা দান-খয়রাতের উদ্দেশ্যে গঠিত যেসব ট্রাস্টকে আদালত আগে ওয়াক্ফ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদেরও এখন থেকে সাধারণ জনহিতকর ট্রাস্ট হিসেবে ধরা হবে। সুপ্রিম কোর্ট এই ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে, এটি আগে দেওয়া বিচারিক রায়কে অকার্যকর করে দেওয়ার মতো ঘটনা।
সংশোধিত আইনের ধারা ৩সি(১)-এ বলা হয়েছে, সরকারি হিসেবে বিবেচিত কোনো জমি যদি আগে ওয়াক্ফ ঘোষণা করা হয়ে থাকে, তা এখন থেকে ওয়াক্ফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে না। এ ধারা নিয়ে বেঞ্চ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বহু ধর্মীয় স্থাপনা, কবরস্থান বা মসজিদ সরকারি জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ধারা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
আগের নিয়মে কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল শুধু মুসলিম সদস্যদের নিয়ে গঠিত হতো। কিন্তু সংশোধনী আইনে কমপক্ষে দু’জন অমুসলিম সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি সর্বোচ্চ ২২ সদস্যের কাউন্সিলে ১২ জন পর্যন্ত অমুসলিম থাকতে পারেন। এ ছাড়া, যেসব রাজ্যে বোহরা ও আগাখানি সম্প্রদায়ের ওয়াক্ফ সম্পত্তি আছে, সেখানেও এই দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সংশোধিত আইনে রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডের গঠনে বড় পরিবর্তন এসেছে। আগে ভোটের মাধ্যমে মুসলিম এমপি, এমএলএ, মোতাওয়াল্লি ও আইনজীবীরা বোর্ড সদস্য নির্বাচিত করতেন। এখন রাজ্য সরকার সরাসরি সদস্য নিয়োগ করতে পারবে। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, বোর্ডে কমপক্ষে দু’জন অমুসলিম, দু’জন নারী সদস্য এবং বোহরা ও আগাখানি সম্প্রদায়ের একজন করে প্রতিনিধি রাখতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের মতে, এই চারটি পরিবর্তন শুধু আইনগত বিষয় নয়, বরং সংবিধানে সুরক্ষিত ধর্মীয় অধিকার, সম্পত্তির স্বীকৃতি এবং সম্প্রদায় পরিচালনার নীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। আদালত জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বিস্তারিত শুনানির মাধ্যমে এই সংশোধনীগুলোর সাংবিধানিক বৈধতা পর্যালোচনা করবে। খবর দ্য প্রিন্টের।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মার্জিন ঋণ নিতে বিনিয়োগ লাগবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিতে হলে বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া থাকতে হবে নিয়মিত আয়ের উৎস। আর বিনিয়োগের ৬ মাসের আগে ঋণ পাবে না কোনো বিনিয়োগকারী। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড এবং কোম্পানির হিসাবেও মার্জিন ঋণ দেওয়া হবে না। চূড়ান্ত মার্জিন ঋণ নীতিমালায় এসব সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ প্রসঙ্গে এসব তথ্য তুলে ধরেন পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের সদস্যরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এবং পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা বলেন, পুঁজিবাজার অংশীজনদের সাথে আলোচনা করেই সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে টাস্কফোর্স। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ৩ মাসের আগে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে, মার্জিন নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি বন্ধ হবে। মার্জিন ঋণ নিয়ে সুশাসন না থাকায় বিপুল অংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীর পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুঁজিবাজার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মার্জিন খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা টাস্কফোর্সের মূল্য উদ্দেশ্য।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, অনেক স্টেকহোল্ডার দাবি করছেন তাদের সাথে বসা হয়নি। অথচ আমরা দেখলাম তাদের সাথে আমরা ৩ বারও বসে ফেলেছি। তবে কেন এরকম মিস কমিউনিকেশন। আমরা অংশীজনদের বাহিরেও যারা বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের সাথেও আমরা বসেছি। এরপরেও যদি মনে হয় আমরা কিছু বাদ দিয়েছি বা গ্যাপ ছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানালে তা আমরা যুক্ত করে দিব। তবে অংশীজনদের থেকে বেশি আমরা সাধারণ মানুষদের থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে। যার কারণ বাজার অচল অবস্থায় চলে গেছে। সে অবস্থাটাকে মাথায় রেখে আমরা চিন্তা করেছি, এর অন্যতম কারণ হলো মার্জিন রুলস। কারণ মার্জিন রুলসটা যদি প্ল্যান করে দেওয়া হতো, গভর্নেন্সটা যদি সঠিক থাকতো, তাহলে এ ধরনের অবস্থা তৈরি নাও হতে পারতো। তাই মার্জিন রুলসকে আমরা টপ প্রায়োরিটি আইটেম ধরেছি। পৃথিবীতে মার্জিন রুলসকে শর্টটার্ম ওয়ে হিসেবে নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ১:৩/৪ রেশিওতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হচ্ছে৷ এগুলা কিভাবে হয়েছে? এরপর বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি ক্রিয়েট হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই জিনিসগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি বাজারে না হয়। মার্জিন নিয়ে আর গ্যামব্লিং করা যাবেনা। মার্জিন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এতো পরিমাণ নেগেটিভ ইক্যুইটি না থাকলে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি হতো না।
হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে ফোকাস গ্রুপ। মূল কাজ করেছে টাস্কফোর্স। আমরা কাজ করতে যেয়ে পাবলিকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকেও পেয়েছি, তবে পাবলিক থেকে পরামর্শ বেশি এসেছে। এটা খুব ভালো বিষয়। কারণ যত বেশি পরামর্শ আসবে, আমরা তত বেশি রিফাইন করার সুযোগ পাব।
সংবাদ সম্মেলনে একটি উপস্থাপনায় পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আজকে আমার খুবই ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে আইনি ফরমেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে ব্রেইন স্টর্মিং ড্রাফটিং হয়েছে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে। এ মার্কেটে যারা কাজ করেন, তাদের আইডিয়াগুলো নিয়েই ড্রাফট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির ওয়ার্কিং টিমের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এছাড়া মার্কেটের বড় বড় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব নিয়ে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করেছি।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ