এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পরীক্ষার্থীদের ভিড়। ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদাভাবে চোখে পড়ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরকে। একটি ইজিবাইক থেকে নামার পর কিশোরটি হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করে কেন্দ্রে। গায়ের ইউনিফর্ম দেখে বোঝা যায় সেও পরীক্ষার্থীদের একজন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা মেলে মো.

ইউনুস নামের এই কিশোরের। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে ইউনুস। কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আবদুস শুক্কুর ও নুরুজ্জামান দম্পতির সন্তান সে। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সে পঞ্চম।

পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী মো. ইউনুসের সঙ্গে কথা হয়। সে বলে, ‘আল্লাহ আমাকে যেভাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট। বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুবই কষ্ট হতো। সহপাঠী বন্ধুরা সাহায্য করত নানা সময়। ক্লাসে গিয়ে বসার সময়ও বন্ধুরা আমাকে পছন্দমতো জায়গায় বসতে দিত। আমি লেখাপড়া করে ভালো একজন ব্যবসায়ী হতে চাই।’ সে আরও বলে, ‘আমার বাবা নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। আটজনের সংসার বাবার একার রোজগারে চলে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে অবশ্যই আমার শিক্ষার এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’

ইউনুসের মা নুরুজ্জামান বলেন, জন্মগতভাবে ইউনুস প্রতিবন্ধী। দুই হাঁটুর পাশাপাশি দুই হাতের ওপর ভর করে সে চলাফেরা করে। জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। সে প্রতিনিয়ত লেখাপড়া করে যাচ্ছে।

শুধু ইউনুস নয়, আবদুল হামিদ নামের আরও এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ওই পরীক্ষার্থী ইউনুসের খালাতো ভাই। কেন্দ্রের সচিব ও এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাব্বির আহমদ বলেন, দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীই দুটি কক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্রের পরিদর্শকসহ সবাই তাদের প্রতি খেয়াল রাখছেন।

কেন্দ্রের পরিদর্শক সৈয়দা তাহমিনা খানম বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তারা ভালোভাবেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। খাতা জমা দেওয়ার সময় রোল নম্বর ঠিকমতো লিখেছে কি না, যাচাই-বাছাই করা হয়।

মো. ইউনুস ও আবদুল হামিদের বিষয়ে টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ইউনুস ও হামিদ পরস্পর খালাতো ভাই। দুজন শিক্ষার্থী খুবই ভদ্র। তাদের পড়াশোনা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে, এমনটা আশা করি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ সরক র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য, আসন ১২০০
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন শুরু, ভর্তি ফি-মেধা কোটা-ভর্তির যোগ্যতা-গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে
  • সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি: ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এসএসসি উত্তীর্ণদের সুযোগ
  • ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে একাদশে ভর্তি, জেনে নিন সব তথ্য
  • মতলব দক্ষিণে এক বিদ্যালয়ের ২০ এসএসসি পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীদের নাম
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ইংরেজি প্রোগ্রাম, আবেদন শেষ ৪ আগস্ট