যশোরে সালিসের নামে এক নারীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটের অভিযোগে বিএনপির দুই নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া দুই নেতা হলেন সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা এবং চাঁচড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি আবদুল হালিম। তাদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অব্যাহতভাবে সংগঠনের নীতি–আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় চাঁচড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি পদ থেকে এবং আবদুল হালিমকে চাঁচড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি পদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। দলীয় কর্মকাণ্ডে তাঁরা যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সে ব্যাপারে নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৬ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নে সড়ক নির্মাণ নিয়ে এক সালিসে বসেন গোলাম মোস্তফা ও আবদুল হালিম। এ সময় সদর উপজেলার করিচিয়া গ্রামের মালেকা বেগমের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী মালেকা বেগম।

ক্ষতিগ্রস্ত মালেকা বেগম বলেন, প্রতিবেশী ফজরের সঙ্গে রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। বিএনপি নেতাদের ডেকে এনে সালিসের নামে তাঁর তিনটি আধা পাকা বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনামতো তাঁরা সভা করে স্থানীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো সালিসে কেউ অংশ নেবেন না। জমিজমা বা অন্য কোনো বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কোনো বিরোধ থাকলে থানা–পুলিশ বিষয়টি দেখবে। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে দুই নেতা সালিসে যোগ দিয়ে এক নারীর ঘর ভাঙচুর করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাঙচুরের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা মিথ্যা। মূলত আমরা ১১ জন মিলে এলাকার একটি রাস্তা বের করার উদ্যোগ নিই। ১৫ দিন আগে এ বিষয়ে বিচার সালিস বৈঠকে বসেছিলাম। যাঁরা ওই মহিলার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরাই তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এর সঙ্গে আমি ও হালিমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল ব এনপ র স

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের