জিয়াউর রহমান ও জিল্লুর রহমান সম্পর্কে তারা ভাই। এলাকার লোকজন তাদের ডাক্তার হিসেবে চেনেন। রয়েছে তাদের চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার এম চর হাট বাজারে ওষুধের দোকান। ওষুধের দোকানা নয়, যেন একটি ক্লিনিক। ফার্মেসির পেছনে রয়েছে ৫ শয্যার একটি ছোট্ট ক্লিনিক। ডাক্তার না হয়েও নিয়মিত দেখেন তারা, দেন ব্যবস্থাপত্রও। রোগীদের  ভর্তি করেও চিকিৎসা দেন। এভাবেই চলছে দুই দশক ধরে।
স্থানীয়দের অভিযোগের সূত্র ধরে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের এম চর হাট বাজারের ওই ওষুধের দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন লায়েল।
জিয়াউর রহমানের মালিকানাধীন ওষুধের দোকানে রোগী ভর্তি রেখে অবৈধভাবে চিকিৎসা প্রদান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিক্রয়-নিষিদ্ধ ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ওষুধের দোকানের ভেতরে কথিত রোগী দেখার চেম্বারটি সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জিল্লুর রহমানের ওষুধের দোকানের ভেতরেও রয়েছে শয্যা। তিনিও নিয়মিত রোগী দেখেন, রোগী ভর্তি দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, এম চর হাট বাজারের মা ওষুধের দোকানের মালিক জিয়াউর রহমান তার ওষুধের দোকানে চিকিৎসকের সনদ ছাড়াই নিয়মিত রোগী ভর্তি রেখে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া তার ওষুধের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও বিক্রয়ের জন্য নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান স্যাম্পল মজুদ রয়েছে– এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রয়-নিষিদ্ধ (ওটিসি বহির্ভূত) ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধের দোকানের ভেতরে রোগী ভর্তি রেখে ভুয়া চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা দেওয়ার প্রমাণও মেলে। এসব অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওষুধের দোকানের মালিক জিয়াউর রহমানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করেন। একই সঙ্গে ওষুধের দোকানের ভেতরের চেম্বারটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।


অভিযান পরিচালনাকালে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.

ইশতিয়াকুর রহমান, পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল এবং লোহাগাড়া থানা পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন লায়েল বলেন, অবৈধভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান বা মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জিল্লুর রহমান প্রগতি মেডিকো নাম দিয়ে ফার্মেসি পরিচালনা করছেন দীর্ঘ দিন ধরে। ফার্মেসির পেছনে বেড বসিয়ে চিকিৎসাও করেন তিনি। ব্যবস্থাপত্রও দেন। জিল্লুর রহমানের কাছেই ফার্মেসি ব্যবসা শেখেন ছোটভাই জিয়াউর রহমান। বেশ ক'বছর পর একইভাবে জিয়াউর রহমানও খুলে বসেন মা ফার্মেসি নামে আরেক প্রতিষ্টান। তারা রোগী দেখেন, ব্যবস্থাপত্র দেন, ভর্তি দেন, আবার কমিশনের ভিত্তিতে উপজেলা সদরে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ল্যাবেও পাঠান রোগীদের। এমন অভিযোগ অহরহ। তাদের নেই কোন ডিগ্রি। নেই কোন ফার্মাসিস্ট কোর্সও। 

এ বিষয়ে জিল্লুর রহমানকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। জিয়াউর রহমান বেড থাকা ও চিকিৎসা করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের ৬ মাস মেয়াদি এলএমএফ ডিগ্রি রয়েছে। কোন প্রতিষ্টান থেকে করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আমতা আমতা করতে করতে বলেন দোহাজারী পটিয়া শাখা থেকে করেছেন। সার্টিফিকেট দেখে নাম জানাবো বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে আর জানাননি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন বলেন, তারা পল্লী চিকিৎসক। ফার্মেসিও করেন, রোগীও দেখেন।

চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়া বেগম (৪৫) নামে একজন রোগী বলেন, আমার জ্বর আর প্রচণ্ড গলা ব্যথা। তাই ডাক্তার জিল্লুর স্যারের কাছে আসছি। তিনি প্রথমে রক্ত পরীক্ষা করতে দিলেন। তারপর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছেন। ওষুধও কিনেছি।

এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখেন। বেশিরভাগ রোগী অশিক্ষিত-অসহায় মানুষগুলো। ওই মানুষগুলোর অজ্ঞতাকে পুঁজি করে ডাক্তার সেজেছেন। উপজেলা সদরের হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে তাদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। তাছাড়া, সহজেই যে কোন রোগীকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছেন। 

বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ল র রহম ন পর ক ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যুবক গ্রেপ্তার, চুরির ২০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানা পুলিশ প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণসহ মেহেদী হাসান (২৪) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ রবিবার (১৫ জুন) সকালে পৌর এলাকার সড়ক বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণগুলো একদিন আগে পৌর এলাকার দুর্গাপুরের একটি বাড়ি থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণের সঙ্গে মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন জানান, মেহেদী হাসান নামে ওই যুবক স্বর্ণ বিক্রির জন্য ঘোরাঘুরির খবরে তাকে আটক করা হয়। এরপর তার কাছ থেকে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়, যা চুরি হওয়ার ভুক্তভোগী পরিবার তাদের বলে চিহ্নিত করেছেন। ওই বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ ভরি স্বর্ণ চুরি হয় বলে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, তদন্ত করে ওই যুবকই চুরি করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিকেল নাগাদ জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজে চুরির কথা স্বীকার করছেন না। পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে পাঠানো হবে। মেহেদী হাসানের বাড়ি কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে।

আরো পড়ুন:

কারাগারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

আদালত চত্বর থেকে হ্যান্ডকাফসহ পালানো দুই আসামি গ্রেপ্তার

পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্গাপুরের টিপু মিয়ার বাড়ির দোতলা থেকে গত শুক্রবার (১৩ জুন) রাত থেকে শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টার মধ্যে কোনো এক সময় চুরি হয়। চোর বা চোরের দল বাড়ির দোতলার বাথরুমে এগজস্ট ফ্যান ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আলমারি থেকে প্রায় ৪০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় টিপু মিয়ার স্ত্রী শান্ত আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ করে। রবিবার সকালে পুলিশ খবর পায় যে এক যুবক স্বর্ণ বিক্রির জন্য কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরছেন। চুরির ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার দূরে সড়ক বাজার এলাকায় তিনি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে তল্লাশি চালালে প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বাকি স্বর্ণ উদ্ধারে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা/পলাশ/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ